সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সাদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নে পানির তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণাবতে ২৫টি বসত ঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদারাসাসহ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ভাঙন আতঙ্কে শতাধিক পরিবার ঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ পারভেজ নদী ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা ও বেশ কিছু বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে।” 

আরো পড়ুন:

‘এক কেজি চাল আনতে মই বেয়ে দেয়াল টপকাতে হয়’

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার বিকেল থেকে ভাঙন শুরু হয়। আতঙ্কে নদী পাড় থেকে খুঁটি খুঁলছে, টিনের চাল সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। পুরুষদের এ কাজে পরিবারের নারীরাও সাহায্য করছেন।

ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নদীর তীর থেকে ঘর সরাচ্ছেন এলাকাবাসী

নদী ভাঙনে সব কিছু হারানো আতাহার মন্ডল বলেন, “৭৩ বছব বয়সে প্রায় ২৫ বার আমার বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। শুক্রবার হঠাৎ করে যমুনার আগ্রাসী থাবায় জীবনের শেষ মুহুর্তেও আমার সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এগুলো দেখলে কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুর এলাকায় নদী ভাঙনে অনেক বাড়ি ঘর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন থেকে আমাদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এখন আমরা যাবো কোথায়?”

সদিয়া দেওয়ান তলা সংকর হাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, “নদী ভাঙর স্থান থেকে ৫০ মিটার দূরে অবস্থিত হাই স্কুল কমপ্লেক্স ভবন। এছাড়া অন্তত পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকিতে রয়েছে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিতের দিকে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে স্কুলগুলো নদী গর্ভে চলে যাবে।”

শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, “মুহূর্তের মধ্যে ঘর নদীতে বিলীন হতে দেখে আমরা হতবাক, চোখের সামনে কয়েশ মিটার এলাকা বিলীন হয়েছে। প্রায় ২৫টি বসত ঘর নদীতে চলে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। ক্ষতিগ্রস্ত সব অসহায় পরিবারকে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মোকলেছুর রহমান বলেন, “ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ব ল ন হয়

এছাড়াও পড়ুন:

‘এক কেজি চাল আনতে মই বেয়ে দেয়াল টপকাতে হয়’

দীর্ঘ নয় মাস ধরে নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ রয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ শামসুন্নাহার ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপু। বাড়ির চারপাশে বাঁশ ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় মই বেয়ে দেয়াল টপকে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। পরিবারটির অভিযোগ, বসতভিটা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করতে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নূরুল হুদা।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা শামসুন্নাহার স্বামী আমিরুল ইসলাম মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তখন থেকেই ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপুকে নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করছেন শামসুন্নাহার। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

ফরিদপুরে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ, ভোগান্তি চরমে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দুইজন বাসিন্দা জানান, শামসুন্নাহারের বাড়িটি চারপাশ থেকে উঁচু বেড়ায় ঘেরা। একফোঁটা জায়গা নেই যেখান দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাড়িটিতে প্রবেশ করা সম্ভব। মই দিয়ে বিপজ্জনকভাবে দেয়াল টপকে বাড়িতে যাতায়াত করতে হয় মা-ছেলেকে। প্রভাবশালী মহল বাড়িটি দখল করতে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করেছে।

শামসুন্নাহারের অভিযোগ, “৯ মাস হলো ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছি। বাড়ির চারপাশে কাঠ-বাঁশ আর কাঁটাতারের বেড়া তুলে দিয়েছে নুরুল হুদা। এক কেজি চাল আনতে মই বেয়ে দেয়াল টপকাতে হয়। রাত হলে বুক ধড়ফড় করতে থাকে, যদি বুলডোজার আসে। তিনদিন হলো ঘরে এক মুঠো চাল নেই। প্রশাসনের কাছে গেছিলাম, এতোদিনেও বিচার পেলাম না।”

শামসুন্নাহারের বাড়ির সামনে দেওয়া বাঁশের বেড়া 

শামসুন্নাহারের ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপু বলেন, “২০০৫ সালে বাবা কষ্টের টাকায় সাড়ে তিন শতাংশ জমি কিনেছিলেন। আজকের বাজারে ওই জমির মূল্য কোটি টাকা। এ কারণেই আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাকে হুমকি দেওয়া হয়—বসতভিটা না ছাড়লে বুলডোজার দিয়ে চিহ্ন মুছে ফেলা হবে। মা সারা রাত জেগে থাকেন, হাঁটাহাঁটি করেন। মাঝে মধ্যে চোখে পানি ছিটিয়ে ঘুম তাড়ান তিনি।”

অভিযুক্ত নূরুল হুদাকে প্রশ্ন করলে তিনি সংক্ষিপ্ত জবাবে বলেন, “আমি কার নির্দেশে কাজ করছি, সেটা তাদের কাছ থেকে জানুন। আমার ব্যাপারে সবকিছু তাদেরই জানা।”

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবরুদ্ধ পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।”

ঢাকা/রফিক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘এক কেজি চাল আনতে মই বেয়ে দেয়াল টপকাতে হয়’