জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফর–সংক্রান্ত পুস্তিকা অনুযায়ী, নিরাপত্তা দল ও কর্মকর্তাসহ তাঁর সফরসঙ্গীর সংখ্যা ৬২। সরকারি নথি অনুযায়ী, ওই সংখ্যা ১০৪। সফরসঙ্গীদের মধ্যে উপদেষ্টাদের পাশাপাশি রয়েছেন তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয়জন নেতা।

সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতারা হলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সদস্য মোহাম্মদ নকিবুর রহমান (তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত হয়েছেন), জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর সময়ে সাধারণত এ ধরনের সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পছন্দের লোকজন যেতেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরাও নিজ খরচে সফরে যুক্ত হতেন। এবার অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সফরসঙ্গী করেছেন। তবে সফরসঙ্গীর তালিকা বড় হওয়ায় বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারও এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারের সংস্কৃতি অনুসরণ করছে কি না, সে রকম সমালোচনা হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের নির্ধারিত বক্তৃতার সময় সফরসঙ্গীদের মধ্যে কয়েকজনের উপস্থিতির সুযোগ থাকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অতীতে রাজনৈতিক সরকারের আমলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ জন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। ২০১৪ সালে ১৮০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালে ২৯২ জন সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে যান তিনি। তবে ২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সফরসঙ্গীর কলেবর ছোট ছিল।

২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী ছিলেন ৫৭ জন। তখন নিউইয়র্ক যাত্রার আগে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নিরাপত্তাসহ কিছু বিষয় আছে, চাইলেও তা এড়ানো যায় না।

গত বছর অধ্যাপক ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরের বহর পুস্তিকা অনুযায়ী ৫৭ জনের হলেও সরকারি নথিতে এ সংখ্যা ছিল ৮০ জনের বেশি। এবার পুস্তিকা অনুযায়ী ৬২ আর সরকারি নথি অনুযায়ী ১০৪ জন। সরকারপ্রধানের বিদেশ সফরের সময় পুস্তিকা ও নথি দুটোই তৈরি করে থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সভায় যোগ দিতে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের বিদেশ সফরের সময় বড় বহর নিয়ে যাওয়াটা দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। এবারও বিপুল সফরসঙ্গী থাকার পরও নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এ নিয়ে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলে অনেকে মনে করছেন।

দুই তালিকা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ নেতাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে দুইভাবে সফরসঙ্গীদের তালিকা করা হয়। শীর্ষ নেতাদের প্রতিটি সফর নিয়ে একটি পুস্তিকা তৈরি করা হয়। এতে সফরের কর্মসূচি, সফরসঙ্গীদের তালিকা, আবাসন বিন্যাস, যানবাহন পরিকল্পনা, যে গন্তব্যে যাওয়া হবে, সে-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা, প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। মূলত শীর্ষ নেতার সঙ্গে যাঁরা একই ফ্লাইটে সফরে যান, পুস্তিকায় সফরসঙ্গী হিসেবে তাঁদের নাম যুক্ত থাকে।

জানা গেছে, পুস্তিকায় অন্তর্ভুক্ত সফরসঙ্গীদের পাশাপাশি নির্ধারিত সফরটির কাজে নানাভাবে যুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে আরেকটি তালিকা তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই তালিকায় থাকা সবাই শীর্ষ নেতার সঙ্গে একই ফ্লাইটে সফর করেন না। তাঁরা আলাদাভাবে নির্দিষ্ট সফরের আগে কিংবা মাঝপথে শীর্ষ নেতার সফরের কাজে যুক্ত হন। আবার তাঁদের কেউ কেউ অন্য মিশন থেকে এসে বিশেষ দায়িত্বের অংশ হিসেবে শীর্ষ নেতার সফরের কাজে যুক্ত হন। যেমন এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরের জন্য কাঠমান্ডু থেকে দুই সপ্তাহের জন্য নিউইয়র্কে গেছেন শোয়েব আব্দুল্লাহ। এই কূটনীতিক এ বছরের শুরুতে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি হয়েছেন।

সফরসঙ্গী যাঁরা

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন উপলক্ষে তৈরি পুস্তিকা অনুযায়ী সফরসঙ্গীর সংখ্যা ৬২। আর সরকারি নথি অনুযায়ী এই সংখ্যা ১০৪। দুই তালিকাতেই যুক্ত আছেন চার উপদেষ্টা— আসিফ নজরুল, মো. তৌহিদ হোসেন, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও আদিলুর রহমান খান। উপদেষ্টা পদমর্যাদার দুজন হলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার একজন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

সরকারি নথি অনুযায়ী, এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর তালিকায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়েছেন ১৯ জন ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৭ জন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সফরসঙ গ দ র র সফরসঙ গ সফরসঙ গ র কর মকর ত ন উইয়র ক ম হ ম মদ র জন ত ক ক সরক র সফর র ক সরক র র অন য য় র সফর র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প

যৌন নিপীড়নকারী কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কী সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বানের পর মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

প্রয়াত এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতেই গতকাল শুক্রবার তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের প্রতি এ আহ্বান জানান বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জে পি মরগান চেজ এবং হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারসের বিরুদ্ধেও বিচার বিভাগ ও এফবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। ল্যারি সামারস ক্লিনটনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

সম্প্রতি যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এপস্টেইনের নতুন একগুচ্ছ ই-মেইল প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম এসেছে। এতে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে।

এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই-মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলো এপস্টেইন পাঠিয়েছিলেন তাঁর সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ লেখক মাইকেল ওলফকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ওইসব ই–মেইল লিখেছিলেন।

এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও জোরপূর্বক যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই–মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।

শিশুদের যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ও নারী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এপস্টেইন ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে কারাবন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। তাঁর প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েলের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।

৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোর ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ছুটি কাটাতে ফ্লোরিডা যাওয়ার সময় ট্রাম্প উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের এটা অনেক আগেই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। বহু বছর ধরে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে আমার খুবই খারাপ সম্পর্ক ছিল।’

নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

এ বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পকে বারবার এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

২০১৯ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌনকর্মে নারী পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার বিচার প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে নিজের কক্ষ থেকে পরে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এমন একটি যৌন চক্র চালাতেন, যেখানে কিশোরী মেয়েদের যৌনকর্মের জন্য সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হতো।

আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫

ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও এফবিআইকে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল ক্লিনটন, ল্যারি সামারস, রেইড হফম্যান, জে পি মরগ্যান চেজ এবং আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ও জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করবেন।

ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।’

আরও পড়ুনএকই নারীর সঙ্গে ট্রাম্প ও যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সম্পর্ক ছিল১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প
  • মামদানির প্রশাসনে কাজ করতে ৫০ হাজার আবেদন 
  • বিয়ে করছেন অমিতাভ রেজা, পাত্রী কে