কুমিল্লা নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে গত বুধবার সকালে অভিযানে নামে সিটি করপোরেশন। প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযানে নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকাসহ আশপাশের সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়। হাঁটাচলায় স্বস্তি মেলায় অভিযানে খুশি হন নগরবাসী। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নগরবাসীর স্বস্তি পরিণত হয় চিরচেনা দুর্ভোগে। কারণ, বিকেলের মধ্যে ফুটপাত ও সড়ক আবার দখল হয়ে যায়।

নগরবাসীর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর নগরে ভ্রাম্যমাণ হকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েছে। বুধবার সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর নগরে শৃঙ্খলা ফিরবে এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই অবস্থা তিন ঘণ্টাও টেকেনি। এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন ধারাবাহিকভাবে তদারকি না করলে এসব অভিযানে সুফল মিলবে না বলে তাঁরা মনে করেন।

নগরের কান্দিরপাড় থেকে মনোহরপুর সড়কে সবচেয়ে বেশি দোকান বসান ভ্রাম্যমাণ হকাররা। ফুটপাতের পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে জামাকাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসানো হয়। বুধবার সকালে অভিযানের খবর পেয়ে বেশির ভাগ হকার দ্রুত মালামাল নিয়ে সটকে পড়েন। অভিযানের পর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কান্দিরপাড়-মনোহরপুর সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাত ও সড়কে কোনো ভ্রাম্যমাণ হকার না থাকায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করছে।

তবে কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে সেখানে গিয়ে আবার দোকান দেখা যায়। আজ একই সময়ে সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, চিরচেনা পুরোনো রূপ। ফুটপাতের পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে ফুটপাত ঘেঁষে দোকান বসিয়েছেন শতাধিক হকার। যার কারণে বাধ্য হয়ে মানুষ মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন। এ ছাড়া সড়কে আগের সেই চিরচেনা যানজট।

কান্দিরপাড় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.

মুজাহিদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম-সিলেটে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর যদি কার্যকর রাখা যায়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কেন পারবে না? বুধবার সকালে সিটি করপোরেশন ফুটপাত ও সড়কে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। এতে ঘণ্টা দুয়েক মানুষ সুফল পেয়েছে। তবে দখলকারীরা বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি। দুপুরের পরই আবার ফুটপাত ও সড়কে দোকান বসিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযান হলে হকাররা দ্রুত চলে যান। আবার সিটি করপোরেশনের লোকজন চলে গেলে দখলে নেমে পড়েন। মানুষের স্বস্তি ফেরাতে সিটি করপোরেশন কঠোর না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।

কান্দিরপাড় এলাকার একটি বিপণিবিতানের কাপড় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ বলেন, হকাররা অনেক সংঘবদ্ধ। অভিযানের খবর তাঁদের কাছে চলে আসে। এতে মুহূর্তের মধ্যেই তাঁরা পালিয়ে যান। প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। টাকার ভাগ সিটি করপোরেশনের লোকজনও পান। এ জন্য অভিযানের খবর তাঁরা আসার আগে পৌঁছে দেন দখলকারীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করতে হবে।

কুমিল্লা নগরের সড়ক ও ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের অভিযান। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দখলম ক ত দ ক ন বস র সড়ক নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

বাষট্টিতে নগরবাউল জেমস

নগরবাউল জেমস। তার পুরো নাম মাহফুজ আনাম জেমস। ভক্তরা তাকে ‘গুরু’ বলেই ডাকেন। জেমস মানেই তারুণ্যের উন্মাদনা। তার নাম অনেক তরুণের স্বপ্নের সূতিকাগার। নিজের মেধা আর মননে হয়ে ওঠেছেন এ প্রজন্মের গুরু। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) নন্দিত এই ব্যান্ড সংগীতশিল্পী জেমসের জন্মদিন। ৬১ বছর পূর্ণ করে বাষট্টিতে পা দিতে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছেন জেমস। 

১৯৬৪ সালে ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। কিন্তু তার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে চট্টগ্রামের সৈকতের বালুচরে কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব। জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

আরো পড়ুন:

জুবিনের গাওয়া গান আমাকে বিখ্যাত করেছে: অনন্ত জলিল

পণ্ডিত চন্নুলাল মারা গেছেন

পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সংগীতচর্চা শুরু করেন জেমস। একসময় সংগীতের জন্য ঘর ছাড়েন তিনি। পালিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে উঠেন। সেখান থেকেই তার সংগীতের মূল ক্যারিয়ার শুরু। 

১৯৮০ সালে ‘ফিলিংস’ নামে ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন জেমস। এর মাধ্যমে প্রথম তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে এহসান এলাহী ফানটিকে নিয়ে নগর বাউল নামে ব্যান্ড গঠন করেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে প্রকাশ করেন প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন জেমস। এ অ্যালবামের গানগুলো দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। 

বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে জেমসের খ্যাতি ছড়িয়েছে বিশ্বে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে রয়েছে জেমসের অনেক ভক্ত। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন জেমস। চলচ্চিত্রটিতে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। 

২০০৬ সালে ‘ওহ লামহে’ চলচ্চিত্রের ‘চল চলে’ গানে কণ্ঠ দেন জেমস। ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন এ মেট্টো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। এতে ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। সর্বশেষ হিন্দি চলচ্চিত্রে ‘ওয়ার্নিং’-এ প্লেব্যাক করেন জেমস। ‘বেবাসি’ শিরোনামের গানটি ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। 

জেমসের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান হলো—‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে আমি বলছি, মা’, ‘দুখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘বাবা কত দিন’, ‘বিজলী’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মিরাবাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ প্রভৃতি। 

নগর বাউল থেকে প্রকাশিত অ্যালবামগুলো হলো—‘স্টেশন রোড’ (১৯৮৭), ‘জেল থেকে বলছি’ (১৯৯৩), ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮), ‘দুষ্ট ছেলের দল’ (২০০১)। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো— ‘অনন্যা’ (১৯৮৯), ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনি দুঃখ করোনা’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৭), ‘কাল যমুনা’ (২০০৮)।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝিনাইদহে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় শিশুসহ দুজন নিহত
  • বাষট্টিতে নগরবাউল জেমস
  • বৃষ্টিতে জলমগ্ন ঢাকা, দুর্ভোগে নগরবাসী