পড়াশোনা শেষ করে দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণীকে বেকারত্বে ভুগতে হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ২০২৪ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২৪ হাজার। এর মধ্যে ডিগ্রি বা স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৫ হাজার। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যেই বেকারের সংখ্যা বেশি। প্রতি তিনজন বেকারের একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী।

দেশে চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলীদের চাকরি পাওয়া কিছুটা সহজ হলেও ড্রাইভার, রেস্টুরেন্ট কর্মী, ডাটা এন্ট্রিসহ বিভিন্ন ব্লু (শ্রমজীবী) ও সিলভার কলার (প্রারম্ভিক পর্যায়) পেশাজীবীদের চাকরির খোঁজ পাওয়া সহজ নয়। কারণ, দেশে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির প্রাপ্যতা যেমন কম, তেমনি দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগও বেশ সীমিত। এ রকম উপলব্ধি থেকে ২০২২ সালে তিন তরুণ মিলে প্রতিষ্ঠা করেন চাকরি খোঁজার সহায়ক স্টার্টআপ। এর নাম দেন ‘সম্ভব’। সম্প্রতি সম্ভব নামের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি স্থান করে নিয়েছে ‘ফোর্বস এশিয়া ১০০ টু ওয়াচ ২০২৫’ শীর্ষক তালিকায়।

মূলত মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভবের অ্যাপটি পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব প্রযুক্তিগত দক্ষতার মাধ্যমে এই অ্যাপ তৈরি করা হয়। গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি এখন পর্যন্ত ২০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে। সম্ভবের অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৬০ লাখের বেশি আবেদন করা হয়েছে। প্রতি মাসে অ্যাপটি ব্যবহার করেন প্রায় ৩ লাখ চাকরিপ্রার্থী। সম্ভবের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার নারী। বর্তমানে সম্ভবের সেবা নিচ্ছে ফুড পান্ডা, পাঠাও, বার্জার, সিঙ্গার, কেএফসি, এসএসএল সিকিউরিটিসহ দুই হাজারের বেশি কোম্পানি।

আমরা ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনবল রপ্তানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আগামী বছর থেকে দুটি দেশে আমাদের দেশের জনবল রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী করতে চাই। আগামী তিন বছরে দেশের ৬৪টি জেলায় আমাদের সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।রিফাদ হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, সম্ভব

নিবন্ধিত চাকরিপ্রার্থী এখন ১৮ লাখ

সম্ভবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিফাদ হোসেন ২০১৫ সালে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর দেশের একাধিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সাত বছর। ২০২২ সালে ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসের ১৫০ বর্গফুটের একটি রুমে শুরু হয় সম্ভবের যাত্রা। সে সময় অ্যাপ তৈরির জন্য প্রয়োজন ছিল প্রযুক্তিবিষয়ক দক্ষ কর্মী। তখন যোগ দেন সম্ভবের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) নাকিব মোহাম্মদ ফাইয়াজ, যিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইইই বিভাগে পড়াশোনা শেষে বেশ কিছুদিন গ্রামীণফোনে কাজ করেন। তিনি গ্রামীণফোনের মাই জিপি অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে কাজ করেন। ব্যবসা পরিচালনায় দলে যোগ দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা বিভাগে বিবিএ করা আরেক তরুণ হাসিবুর রহমান। তিনিও সম্ভবের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও)।

এই তিন উদ্যোক্তা শুরু করলেও এখন সম্ভবের কর্মী সংখ্যা ৫২। সবাই মিলে ঢাকার বারিধারায় ৪ হাজার বর্গফুটের একটি কার্যালয়ে কাজ করেন। ২০২২ সালে যাত্রা করার সময়ে ৩ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ পান যুক্তরাষ্ট্রের গেটস ফাউন্ডেশন থেকে। তবে শর্ত ছিল, ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ হাজার নারীকে চাকরি দিতে হবে। শুরুর তিন মাসে সম্ভব অ্যাপের গ্রাহক হন মাত্র ১০০ জন। বর্তমানে এই অ্যাপে সব মিলিয়ে ১৮ লাখ নিবন্ধিত চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন। নিজস্ব প্রযুক্তিগত দক্ষতায় তৈরি করা হয় সম্ভবের অ্যাপ। চলতি বছরের মে মাসে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম কুকুন ক্যাপিটালের নেতৃত্বে প্রি-সিড ফান্ডিংয়ে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলার তোলেন তাঁরা। এ ছাড়া দুটি ইউরোপীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ৭ লাখ ডলারের বিনিয়োগ আসে। সব মিলিয়ে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি ২০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। গত ছয় মাস ধরে তারা মুনাফায় রয়েছে।

* গেটস ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে পর্যন্ত ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ।
* আগামী তিন বছরে দেশের ৬৪ জেলায় সেবা পৌঁছানোর পরিকল্পনা।

সম্ভবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিফাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়—সব মিলিয়ে প্রায় সাত লাখ প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত কর্মী খুঁজতে হিমশিম খায়। কাগজপত্রের ঝামেলা আর জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনেক সময় সঠিক প্রতিভা সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারেন না। ফলে ব্যবসার উৎপাদনশীলতা কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। কাঙ্ক্ষিত সুযোগ না পেয়ে দেশের বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থী প্রায়ই দালালের শরণাপন্ন হন। তাই নিয়োগপ্রক্রিয়াকে সহজ করা এবং সময় ও খরচ কমানোর লক্ষ্য থেকেই আমরা এই স্টার্টআপ চালু করি। নিবন্ধন করতে কোনো অর্থ দিতে হয় না চাকরিপ্রার্থীদের। আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে যাঁরা চাকরি খোঁজেন, তাঁদের ৭০ শতাংশই ঢাকা জেলাকেন্দ্রিক। বাকি ৩০ শতাংশ খুলনা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া জেলার।’

কী কী সেবা দেয় ‘সম্ভব’

‘সম্ভব’ মূলত বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মডেলে জব-টেক ও এইচআর-টেক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। স্টার্টআপটি বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জনবল নিয়োগ এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সেবা দেয়। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে একজন চাকরিপ্রার্থী চাইলে ডিজিটাল প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন। সম্ভব অ্যাপে নিবন্ধনের মাধ্যমে পছন্দের চাকরির জন্য যে কেউ সরাসরি বিনা পয়সায় আবেদন করতে পারেন। আবেদনের পর চাকরি না হলে প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে চাকরি না হওয়ার কারণ জানিয়ে দেয় সেই প্রতিষ্ঠান। প্রার্থীদের দক্ষতার ঘাটতি অনুযায়ী কোনো ধরনের অর্থ ছাড়া কোর্সের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে। কোর্স শেষে সনদ প্রদান করা হয়।

দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রার্থী মূল্যায়ন, জনবল নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতায় ভুগতে হয়। এর জন্য আলাদা অর্থ দিয়ে জনবল নিয়োগ দিতে হয়। তাই এসব সেবাও দেয় সম্ভব। এ ছাড়া চাকরিপ্রার্থীদের দক্ষতার উন্নয়নে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি গেটস ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফ, সুইসকন্ট্যাক্ট, রুটস অব ইমপ্যাক্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করে।

সম্ভবের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একটি প্রতিষ্ঠান তার জনবল নিয়োগ করে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতে পারে। এর জন্য মাসে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া সম্ভবের মাধ্যমে কেউ চাকরি পেলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই কর্মীর প্রথম মাসের বেতনের ৮০ থেকে ১০০ শতাংশের সমান অর্থ নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান পে-রোল সুবিধা নেয়। সে অনুযায়ী কর্মী সংখ্যার বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ করে ‘সম্ভব’।

সম্ভবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিফাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনবল রপ্তানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আগামী বছর থেকে দুটি দেশে আমাদের দেশের জনবল রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। বিদেশে যাওয়া কর্মীর পুরো প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী পরিণত করতে চাই। আগামী তিন বছরে দেশের ৬৪টি জেলায় আমাদের সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর প র র থ প ল য টফর ম স ট র টআপ কর মকর ত ক জ কর ন প রক র য় জনবল ন ন বন ধ র জন য চ কর র ন র পর আম দ র র চ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কর্মী নেবে বেসরকারি ব্যাংক, স্নাতকে আবেদন

বেসরকারি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বেসরকারি বাণিজ্যিক এ ব্যাংকটির ‘এসও-ইও’ পদে জনবল নিয়োগ দেবে। ৫ নভেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

চাকরির বিবরণ

পদের নাম: এসও-ইও (কম্পিউটার এমার্জেন্সি রেসপন্স টিড (সিইআরটি), ইনফরমেশন টেকনোলজি ডিভিশন)।

পদ সংখ্যা: নির্ধারিত নয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর (সিএসই/সিএস/আইটি/সাইবার সিকিউরিটি/এসই/সমমান) ডিগ্রি থাকতে হবে;

অভিজ্ঞতা: ন্যূনতম ৪ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বয়সসীমা: ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চাকরি, জরুরি নির্দেশনা৪ ঘণ্টা আগে

বেতন: আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে বেতন। ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী আরও সুযোগ–সুবিধার পাবেন কেউ এ পদে চাকরি পেলে।

আবেদন পদ্ধতি: আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদনের পদ্ধতি ও আবেদনের বিস্তরিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

আবেদনের শেষ তারিখ: ২০ নভেম্বর, ২০২৫।

আরও পড়ুনকারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, পদ ২১৮১৩ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাতারের সশস্ত্র বাহিনীতে প্রেষণে নিয়োগ পাবেন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা
  • কর্মী নেবে বেসরকারি ব্যাংক, স্নাতকে আবেদন