খাগড়াছড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে সমাবেশ, কাল আবারও অবরোধ
Published: 26th, September 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার দুপুরে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারো শিক্ষার্থীসহ পাহাড়ি লোকজন যোগ দেন।
জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া, নারকেলবাগান, শাপলা চত্বর, আদালত সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার চেঙ্গী স্কয়ারে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশ হয়। সমাবেশে আগামীকাল শনিবার আবারও খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র শিক্ষার্থী উক্যেনু মারমা, শিক্ষার্থী কৃপায়ন ত্রিপুরা, কবিতা চাকমা; ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের প্রতিনিধি আকাশ ত্রিপুরা, বাংলাদেশে মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধি ওয়াবাই মারমা, মংসাই মারমা, অংসুই মারমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পাহাড়-সমতল সব জায়গায় কোনো বয়সের নারীই নিরাপদ নন। বিচারহীনতার কারণে আজ এ অবস্থা। প্রশাসন কঠোর থাকলে এমন হতো না। ঘটনার তিন দিনেও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত ২৭ জুন খাগড়াছড়ি সদরের এক শিক্ষার্থী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলেও মামলার দুজন আসামিও এখনো গ্রেপ্তার হননি। এভাবে আসামিরা পার পেয়ে যাওয়ার কারণে পাহাড়ে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সমাবেশে উপস্থিত ছাত্র–জনতা। আজ দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ার এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স কয় র
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।
২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।
৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।
৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫