কুখ্যাত নারী পাচারকারী এপস্টেইনের নতুন নথিতে এবার ইলন মাস্কের নাম
Published: 27th, September 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনের নতুন নথিতে এবার বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের নাম এসেছে। সেই সঙ্গে নতুন করে আবারও এসেছে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম। কংগ্রেসের একটি কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ওই নথি প্রকাশ করেছেন।
কুখ্যাত নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইন এস্টেট থেকে কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটির কাছে নতুন করে যে নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এপস্টেইন তাঁর দ্বীপে যেতে ইলন মাস্ককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
আলাদা আরেকটি নথিতে দেখা গেছে, ২০০০ সালের মে মাসে নিউজার্সি থেকে ফ্লোরিডাগামী একটি ফ্লাইটে যাত্রীদের যে তালিকা, সেটিতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম আছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি থেকে ইলন মাস্ক ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ইলন মাস্ক বলেছেন, এপস্টেইন তাঁকে দ্বীপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।এপস্টেইন মামলায় এর আগেও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম এসেছে। তখন তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই।
আর ইলন মাস্ক বলেছেন, এপস্টেইন তাঁকে দ্বীপে যেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে তিনি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
জেফরি এপস্টেইন এস্টেট থেকে আংশিক এই নথিগুলো মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় এমন নথি পাঠানো হলো।
হাউস ওভারসাইট কমিটিতে থাকা ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন, এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফোনে বার্তালাপের তালিকা, ফ্লাইটের তালিকা ও সেগুলোতে থাকা যাত্রীদের তালিকা, আর্থিক হিসাবের খতিয়ান ও এপস্টেইনের দৈনিক সূচি।
ইলন মাস্ক ও প্রিন্স অ্যান্ড্রু ছাড়াও তৃতীয় দফায় প্রকাশ করা নথিগুলোতে আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন মানুষ ও ধনী ব্যক্তি জেফরি এপস্টেইনের বন্ধু ছিলেন। প্রতিটি নতুন নথি নতুন তথ্য প্রকাশ করছে। তাই আরও নথি প্রকাশ করা উচিত, যেহেতু আমরা বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে কাজ করছি।সারা গুয়েরেরো, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট নেতানতুন করে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে অনলাইনভিত্তিক জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী পিটার থিয়েল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন আছেন।
যেসব নথি প্রকাশ করা হয়েছে, তার একটি ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বরের। ওই নথির এক লাইনে লেখা ছিল—‘স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, ইলন মাস্ক ৬ ডিসেম্বর দ্বীপে আসবেন (এটা ঠিক আছে তো?)’
আরও পড়ুনএপস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারি: নথিতে বিল ক্লিনটন ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম০৪ জানুয়ারি ২০২৪ফ্লাইটের যাত্রীদের একটি তালিকায় দেখা গেছে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ২০০০ সালের ১২ মে নিউ জার্সি থেকে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে গেছেন। ওই ফ্লাইটের যাত্রী তালিকায় এপস্টেইন ও তাঁর সহযোগী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের নামও আছে।
এপস্টেইনের সঙ্গে মিলে যৌনদাসী হিসেবে মেয়েশিশুদের পাচারের অভিযোগে ২০২১ সালে ম্যাক্সওয়েলও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওই যাত্রার বিষয়ে বাকিংহাম প্যালেসের ওয়েবসাইটে যে তথ্য আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সালের ১১ মে প্রিন্স অ্যান্ড্রু নিউইয়র্কে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ১৫ মে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন।
এপস্টেইনের নথিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে সম্ভাব্য সকালের এক নাশতার পার্টির পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ আছে। ২০২২ সালে গেটস বিবিসিকে বলেছিলেন, জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে দেখা করাটা তাঁর ‘ভুল’ ছিল।
আরও পড়ুনকিশোরীদের নিয়ে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে সময় কাটান প্রিন্স অ্যান্ড্রু০৬ জানুয়ারি ২০২৪তবে নথিতে যাঁদের নাম আছে, তাঁরা এপস্টেইনের অপরাধ সম্পর্কে অবগত ছিলেন, এমনটা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কমিটিতে ডেমোক্র্যাটদের মুখপাত্র সারা গুয়েরেরো অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও নথি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সারা গুয়েরেরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন মানুষ ও ধনী ব্যক্তি জেফরি এপস্টেইনের বন্ধু ছিলেন। প্রতিটি নতুন নথি নতুন তথ্য প্রকাশ করছে। তাই আরও নথি প্রকাশ করা উচিত। আমরা বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে কাজ করছি, ফলে এটি আমাদের দায়িত্বও।’
কমিটিতে থাকা রিপাবলিকানদের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এ মামলায় ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন’। তাঁরা এটাও বলেছে, তাঁরা শিগগিরই পুরো নথি প্রকাশ করবেন।
আরও পড়ুনযৌন নিপীড়নকারী এপস্টেইনের জন্মদিনে অশালীন চিঠিটি কি ট্রাম্পেরই লেখা, ছবি প্রকাশ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে ছিলেন মার্কিন এই ধনকুবের। নানা অভিযোগের বিচার চলাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুননারী নিপীড়নকারী এপস্টেইন–ঝড়ে এবার কি সত্যিই বিপদে পড়তে যাচ্ছেন ট্রাম্প১৬ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইলন ম স ক ড স ম বর বল ছ ন ফ ল ইট র একট
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা শাহরুখ
ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি বছরের শীর্ষ পাঁচটি জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে নিয়েছে আইএমডিবি।
বিশ্বের ৯.১ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীর দেওয়া রেটিংয়ের ভিত্তিতে গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা যায়, এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১৩০টি সিনেমার মধ্যে ২০টিতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান।
আরো পড়ুন:
শাহরুখ পুত্রের ওয়েব সিরিজ: সেই ওয়াংখেড়ের মামলা
তারকাখচিত প্রিমিয়ারে শাহরুখ পুত্রের বিদেশি প্রেমিকা
এ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছেন হৃতিক রোশান ও আমির খান। তারা দুজনেই জনপ্রিয় ১৩০টি সিনেমার মধ্যে ১১টি করে সিনেমায় কাজ করেছেন। এরপর রয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন (১০টি সিনেমা), অজয় দেবগন (৭টি সিনেমা)। তাছাড়া অমিতাভ বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও রানী মুখার্জি ৬টি করে সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
‘ভারতীয় সিনেমার ২৫ বছর’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশিত হয়। এটি শাহরুখ খানের কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং ভারতীয় তারকাদের নিয়ে বদলে যাওয়া ধারার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত।
আইএমডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহরুখ খান ২০০০-২০০৪ সালের মধ্যে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেন। এই সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি সিনেমার মধ্যে ৮টির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। যে বছরগুলোতে শাহরুখ খানের কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি, সে সময়েও তিনি আইএমডিবির ‘জনপ্রিয় ভারতীয় তারকা’-এর তালিকার শীর্ষ দশে নিয়মিত জায়গা করে নেন।
এই সময়ে ভারতীয় তারকাদের গুরুত্বের ব্যাপারটি পরিবর্তিত হয়েছে। মিলেনিয়ামের প্রথম পাঁচ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি সিনেমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ১৩ জন পুরুষ অভিনেতা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে, যেখানে শুধু প্রভাস, আল্লু অর্জুন, সুরিয়া ও বিজয় একাধিকবার জায়গা পান বলে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়।
আইএমডিবি ইন্ডিয়ার প্রধান ইয়ামিনি পাতোদিয়া বলেন, “ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সবসময়ই চক্রাকারে এগিয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে এই পঁচিশ বছরের মাইলফলক ভালো একটি দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। এই বিবর্তন আগামী দিনে গল্প ও গল্পকারদের জন্য নতুন অর্থ নিয়ে আসবে।”
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেলেও চলতি বছরে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, ডেকান ক্রনিকল
ঢাকা/শান্ত