মিয়াঁদাদের সেই ছক্কা থেকে সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪: আফ্রিদির স্মৃতিতে ভারত–পাকিস্তান লড়াই
Published: 28th, September 2025 GMT
ভারতের দর্শক যেদিন পাকিস্তান দলকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন
সাহিবজাদা মোহাম্মদ শহীদ খান আফ্রিদি; শুধু শহীদ আফ্রিদি নামেই পরিচয়। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সেরা অলরাউন্ডারদেরও একজন। বল পেটানোর মতাদর্শে খুব কড়া বিশ্বাস বলেই যেকোনো জায়গা থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারতেন, হয়ে উঠেছিলেন ‘গেম চেঞ্জার’। ২০১৯ সালে প্রকাশিত আফ্রিদির আত্মজীবনীর নামও সেটাই—গেম চেঞ্জার। যেখানে আফ্রিদি একটা অধ্যায় লিখেছেন ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ নিয়ে তাঁর স্মৃতি। এশিয়া কাপে আজ ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের আগে আফ্রিদির সেই স্মৃতিচারণা ক্রিকেটপ্রেমী পাঠকদেরও রোমাঞ্চিত করবে দারুণভাবে।কী লিখেছেন শহীদ আফ্রিদি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে বছর আমার অভিষেক হয়, ১৯৯৬, ওটা ছিল ঘটনাবহুল এক বছর।
লাহোরে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা। একই বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে আসেন ‘দাদা’ ও ‘দ্য ওয়াল’—সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড়, দুজনেই টেস্ট অভিষেকে করেন যথাক্রমে ১৩১ ও ৯৬ রান। সেই বছরই লর্ডসে নিজের শেষ টেস্ট পরিচালনা করেন কিংবদন্তি আম্পায়ার ডিকি বার্ড। আর নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা ওয়াসিম ভাই (ওয়াসিম আকরাম) ৩০০তম টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
পরের বছর, পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমি প্রথমবারের মতো ভারত সফরে যাই ‘স্বাধীনতা কাপ’ খেলতে। চার জাতির ওই ওয়ানডে টুর্নামেন্টে খেলেছিল শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও স্বাগতিক ভারত।
বছরের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে সাফল্য, তার আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝোড়ো অভিষেক—সব মিলিয়ে রোমাঞ্চকর সময় চলছিল আমার। ভারত সফরটা ছিল গরমের সময়। আবহাওয়া মোটেও সুবিধাজনক না। তবে বেশির ভাগ ম্যাচই ছিল দিন-রাতের। আমরাও ঠিক করে রেখেছিলাম, ভারতকে ওদের মাঠে হারানোর চেষ্টায় আবহাওয়াকে কোনোভাবেই বাধা হতে দেব না।
সিরিজের শুরুতেই ভারত ধাক্কা খায়। কিউইদের একটা ম্যাচে হারালেও শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের কাছে তারা বিধ্বস্ত হয়। আমাদের দলে তখন ওয়াসিম ভাই, ওয়াকার ভাই (ওয়াকার ইউনিস) এবং মুশতাক আহমেদের মতো বোলার ছিলেন না। সবাই ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলছিলেন। সেরা এই তিন বোলারকে ছাড়া কাগজে-কলমে আমাদের বোলিংকে দুর্বল দেখাচ্ছিল, কিন্তু মনোবল ছিল দৃঢ়।
অধিনায়ক ছিলেন রমিজ ভাই (রমিজ রাজা)। আমরা খেলছিলাম বিখ্যাত হালকা সবুজ জার্সিতে—যেটা আমার সব সময়ের প্রিয়। টুর্নামেন্ট ঘিরে উন্মাদনা ছিল অবিশ্বাস্য। আমি নিজেও চেয়েছিলাম ভারতীয় অভিজ্ঞতা নিতে—সিনেমার তারকা দেখা, তাজমহল ঘোরা, ভেলপুরি খাওয়া। তবে সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ছিল—ভারতকে হারানো।
ভারতে পৌঁছে যে অভ্যর্থনা পেলাম, তা কল্পনার বাইরে। সাংবাদিকেরা আমাদের পিছু নিতেন, ভক্তরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেলের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। বুঝলাম, ভারতই আধুনিক ক্রিকেটের কেন্দ্র। এখানে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা। আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম, মুগ্ধতা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল!
শহীদ আফ্রিদি সংক্ষিপ্ত সংস্করণে কিংবদন্তিদের একজন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে