ভিসা বাতিল করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে যুক্তরাষ্ট্র: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট
Published: 28th, September 2025 GMT
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গতকাল শনিবার তাঁর মার্কিন ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার নিউইয়র্কের রাস্তায় ফিলিস্তিনপন্থী একটি বিক্ষোভে যোগ দেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি মার্কিন সেনাদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ না মানার অনুরোধ জানান। এর পরই যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তাঁর ভিসা বাতিল করা হবে।
গুস্তাভো পেত্রো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘এখন থেকে আমার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা নেই; কিন্তু আমি পরোয়া করি না। আমার ভিসার দরকার নেই…আমি শুধু কলম্বিয়ার নাগরিক নই, ইউরোপেরও নাগরিক। আমি নিজেকে বিশ্বের একজন স্বাধীন মানুষ মনে করি।’
আরও পড়ুননিউইয়র্কে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে যাওয়ায় বাতিল হচ্ছে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের মার্কিন ভিসা২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫গুস্তাভো আরও বলেন, ‘(গাজায় ইসরায়েলের) জাতি হত্যার নিন্দা জানানোয় ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে, তারা আর আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে না।’
গাজায় জাতি হত্যার অভিযোগ বারবারই অস্বীকার করে আসছে ইসরায়েল। দেশটি বলছে, হামাসের হামলার পর তারা শুধু আত্মরক্ষা করছে।
(গাজায় ইসরায়েলের) জাতি হত্যার নিন্দা জানানোয় ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে, তারা আর আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে না।গুস্তাভো পেত্রো, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টগাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত উপত্যকাটিতে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সেখানকার সব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একাধিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও জাতিসংঘের এক তদন্ত বলছে, এ পরিস্থিতি জাতি হত্যার শামিল।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বাইরে ফিলিস্তিনপন্থী সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে পেত্রো বিশ্বব্যাপী একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠনেরও আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এ বাহিনীর প্রধান কাজ হবে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা। তিনি মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের দিকে অস্ত্র তাক করবেন না। ট্রাম্পের আদেশ না মেনে মানবতার আদেশ মানুন।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছে, বেপরোয়া ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর মার্কিন ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।
জবাবে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যেখানে জাতিসংঘ তার সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মতপ্রকাশের অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়, সেখানে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ভিসা বাতিল করা এ সংস্থার চেতনার পরিপন্থী।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। চলতি বছরের শুরুতে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত মানুষদের দেশে ফেরত পাঠানোর ফ্লাইট বন্ধ করে দেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়। পরে অবশ্য দুপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।
আরও পড়ুনইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের০১ মে ২০২৪চলতি বছরের জুলাইয়ে পেত্রো অভিযোগ করেন, মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁর দেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছেন। এরপর উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। ওয়াশিংটন অবশ্য এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং দেশটিতে কয়লা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেন।
আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত করবে কলম্বিয়া০৯ জুন ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলম ব য় র প র স ড ন ট য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ব ত ল কর হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন।
নয় দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকাল ৯টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এই তথ্য জানান।
এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক এমদাদ আরিফুল ইসলাম বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান।
সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতিবিষয়ক’ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর অবস্থান করা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি। একই দিন জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রপুঞ্জবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
নিউইয়র্ক সফরে মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূস নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান, কসোভোসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন।