যে কারণে বিজয়ের জনসভায় এত প্রাণহানি
Published: 28th, September 2025 GMT
শিশুশিল্পী হিসেবে রুপালি জগতে পা রেখে তামিল সিনেমার শীর্ষ নায়কদের একজনে পরিণত হয়েছেন থালাপাতি বিজয়। সর্বশেষ ‘থালাপাতি ৬৯’ সিনেমার জন্য ২৭৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ‘তামিলাগা ভেটরি কাজাগম’ (টিভিকে) নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন এই নায়ক।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তামিল নাড়ুর করুরে তার রাজনৈতিক দলের জনসভা ছিল। সেখানে পদদলিত হয়ে ৪০ জন মারা গেছেন। এখানে ১৬ জন নারী ও ৬ জন শিশু রয়েছে। আরো বহুজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিজয়। কিন্তু এই জনসভায় এত মানুষ কেন মারা গেলেন? চলুন, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি—
আরো পড়ুন:
প্রত্যেক নিহতের পরিবার পাবে ২৭ লাখ টাকা: বিজয়
৩ দিনে কত টাকা আয় করল পবন কল্যাণের সিনেমা?
প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার কারণ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, “বিজয় যখন বক্তব্য শুরু করেন, তখনই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।”
থালাপাতি বিজয় ও পুলিশ উপস্থিত জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এরই মাঝে মাইকে একটি ঘোষণা শোনা যায়, ৯ বছর বয়সি একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে, যার নাম আশমিকা। এই ঘোষণা শোনার পর, বিজয় পুলিশকে সাহায্য করতে অনুরোধ করেন। এরপর বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে মঞ্চ ত্যাগ করেন বিজয়।
চেন্নাইয়ের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন করুরের বাসিন্দা আর.
পরের ঘটনা বর্ণনা করে আর. কে. নির্মল বলেন, “এরই মধ্যে এক নারী তার হারিয়ে যাওয়া শিশুকে খুঁজতে শুরু করেন। তখনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। আমি কোনোরকমে নিজের জীবন বাঁচাই এবং কয়েকজনকে সাহায্য করি। আমি দেখেছি, কিছু মানুষ গাড়ির নিচে আটকা পড়েছিল।”
তামিল নাড়ুর প্রাক্তন ক্যাবিনেট মন্ত্রী ভি. সেন্থিলবালাজিকে কটাক্ষ করে মঞ্চে গান করেন বিজয়। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে নির্মল বলেন, “যখন বিজয় ‘১০ টাকার মন্ত্রী’ বলে ভি. সেন্থিলবালাজিকে কটাক্ষ করে গান করেন, তখনই উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আচমকা পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে, তখন সবাই ভয় পেয়ে ছুটতে শুরু করে। অনেক মা-বাবারা তাদের কোলের শিশুকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পুরো জায়গাটি একেবারে বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়।”
এআইডিএমকে-এর সাধারণ সম্পাদক এডাপাডি পালানিস্বামী বলেন, “গতকাল ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছে যে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কারণে পদদলিত হয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।”
তামিলনাড়ুর ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ জি. ভেঙ্কটরামন বলেন, “তামিলাগা ভেটরি কাজাগম’ (টিভিকে)-কে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে দলের সোশ্যাল মিডিয়ায় দুপুর ১২টা থেকেই সমর্থকদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিজয় সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। তখন তার গাড়ির পেছনে বহু মানুষ ছিলেন। সমাবেশস্থলে বিজয় পৌঁছালে হঠাৎ ভিড় বেড়ে যায়।”
ঘটনাস্থলে পুলিশের ৫০০ জন সদস্য মোতায়েন করা ছিল। জায়গার বিন্যাস এমন ছিল যে, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান ভেঙ্কটরামন। পুলিশের এ কর্তা ব্যক্তি বলেন, “পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অঙ্গীকারনামা অনুযায়ী, ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আয়োজকদেরও ছিল।”
পুলিশের একটি সূত্র জানান, বিজয় তার বক্তব্য দেওয়ার সময় জনতা ব্যারিকেডের দিকে ছুটে গেলে সমাবেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নেয়। সমাবেশে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকার প্রত্যাশা ছিল পুলিশ কর্মকর্তাদের। তবে স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ ত ন ব জয়
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আয়োজনে চৌমুহনী বাজার মুজিবুল হক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন। আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতে গিয়েছেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে—সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে তা জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে। জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদকে বাংলার মানুষ এই দেশ থেকে তাড়িয়েছে। ভারতের আধিপত্যবাদ ও বশ্যতা বাংলার মানুষ আর কখনোই গ্রহণ করবে না। এই অন্তর্বর্তী সরকার যদি ভারতের অন্যায় কোনো আবদারে এবং অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতি নতি স্বীকার করতে চায়, তাহলে আপনাদের পরিণতিও শুভ হবে না। জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির ফাঁদে পা দিয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘একটি দল সংস্কার চাচ্ছে না। তারা পুরোনো বস্তাপচা নিয়মে নির্বাচন করতে পাঁয়তারা করছে। অন্তর্বর্তী সরকারও ওই দলের ফাঁদে পা দিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। যদি সংস্কার না হয়, শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। সে জন্য আমরা গণভোটের কথা বলেছি। সরকার গণভোট দেবে বলেছে, কিন্তু প্যাঁচ লাগিয়ে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হবে। তাদের বুঝতে হবে, এই দুটো নির্বাচন এক জিনিস নয়। কিন্তু ওই দলটি আলাদা গণভোট চায় না। কারণ, ডাকসু, চাকসু, জাকসু ও রাকসুর নির্বাচনের ফলাফল। জনগণ সংস্কারের পক্ষে। জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি গণভোট হয়, তাহলে শতকরা ৮০ ভাগ লোক আমাদের পক্ষে রায় দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। বিশেষ অতিথি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান। আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শাহাব উদ্দিন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন, চৌদ্দগ্রাম পৌর আমির মাওলানা মু. ইব্রাহীম, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসাবিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন, কুমিল্লা জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।