খাগড়াছড়িতে গুলিতে নিহতদের পরিচয় মিলেছে
Published: 29th, September 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে গুইমারা উপজেলায় পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা সবাই খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা।
জেলা সিভিল সার্জন মো. ছাবের জানান, নিহত ব্যক্তিরা হলেন— উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের আথ্রাউ মারমা (২৪), লিচুবাগান এলাকার আথুইপ্রু মারমা (২৬) ও বটতলাপাড়ার থোয়াইচিং মারমা (২৪)।
জেলা সিভিল সার্জন আরো জানান, নিহতদের লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। আইনি প্রক্রিয়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত ২৩ সেপেম্বর রাত ৯টায় গুইমারা উপজেলায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় ক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর ব্যানারে ডাকা অবরোধের মধ্যে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ‘‘গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে পাহাড়ি দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানান হয়েছে।
এদিকে, ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চলছে। তবে বেলা ১২টা থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অবরোধ শিথিল করেছে সংগঠনটি। ফলে দুরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে গেছে।
জুম্ম ছাত্র-জনতার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। জানতে চাইলে জুম্ম ছাত্র-জনতার এক মুখপাত্র বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং নিহত ব্যক্তিদের সৎকারের সুবিধার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে।
খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় প্রশাসনের আহুত ১৪৪ ধারা এখনো বহাল রয়েছে। আগের মতোই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ মাঠে রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, উদ্ভুত অবস্থা ক্রমে উন্নতির দিকে। আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সময়মতো ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।
ঢাকা/রূপায়ন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ম ম ছ ত র জনত স প ট ম বর অবর ধ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল
আনন্দ আর অশ্রু মিশ্রিত আবেগে রাজধানীর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদায় জানালেন দেবী দুর্গাকে। বুড়িগঙ্গার বুকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজারো ভক্ত ও পুণ্যার্থীর ঢল নামে।
এদিকে, ভক্তদের এই মিলনমেলা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা।
আরো পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাট পরিণত হয় ভক্ত-অনুরাগীর মিলনমেলায়।
ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা ও নাচ-গানের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কলা বৌকে একে একে নামানো হয় পিকআপ ভ্যান থেকে। এরপর প্রতিমাগুলো নৌকায় তুলে নিয়ে বুড়িগঙ্গার বুকে নিরঞ্জনের মাধ্যমে করা হয় বিসর্জন।
প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে সদরঘাট টার্মিনালের কাছে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটে নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী বিসর্জন মঞ্চ। সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
প্রতিমা বিসর্জন দেখতে লক্ষ্মীবাজার থেকে আসা ভক্ত পায়েল সরকার বলেন, “মা দুর্গা শান্তির বার্তা নিয়ে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন। আজ তাকে বিদায় দিতে কষ্ট হচ্ছে, তবে এ অপেক্ষাটাও মধুর যে, আগামী বছর তিনি আবার আসবেন।”
কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির কোতোয়ালি থানার আহ্বায়ক শ্রীকান্ত দত্ত বলেন, “খুব সুন্দরভাবে এবারের পূজা উদযাপন সম্পন্ন হয়েছে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসুক, এই কামনা করি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এবার ছিল প্রশংসনীয়।”
কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, “শুধু স্থলেই নয়, নদীপথেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ট্রলার ও স্পিডবোটে নদীতে টহল দিচ্ছে।”
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেন বলেন, “প্রতিমা বিসর্জন যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে সম্পন্ন হয়, সেজন্য আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের সহযোগিতা করছে।”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “বিসর্জন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ওয়াইজ ঘাটে সুশৃঙ্খল পুলিশি ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। প্রতিমাগুলো নিরাপদে ঘাটে পৌঁছাতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। সন্ধ্যার মধ্যে বাকি প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হবে।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী