`কিছুই নাই, সব ছাই, ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে'
Published: 30th, September 2025 GMT
আগুনে বসতবাড়ির সবটুকু পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া টিন। এর ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ভস্মীভূত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। উঠানে পড়ে আছে পোড়া মোটরসাইকেলের কাঠামো। রক্ষা পায়নি আয়–উপার্জনের দোকানটিও।
এ রকম বিধ্বস্ত বসতভিটার পাশে বিষণ্ন মনে বসে ছিলেন মিবু মারমা। ঘর হারানো কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য।
গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজার এলাকায় দেখা যায় এ দৃশ্য। গত রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতার সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মিবু মারমার বাড়ি ও খাবারের দোকান। ওই দিন সহিংসতার সময় বাজারের দোকানপাট, বসতঘর ও ভবনে আগুন দেওয়া হয়। বসতঘর ও দোকানমালিকদের অধিকাংশই পাহাড়ি। কিছু প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাঙালি। গতকাল সকালেও বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
আমার ঘরবাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিত। তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।মিবু মারমাশুধু মিবু মারমার ঘর নয়, বাজারজুড়ে চারদিকে পোড়া ক্ষত। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও কিছু ঘর টিকে থাকলেও তা আর মেরামতের উপযোগী নেই। সব হারানো পাহাড়ি মানুষের অবস্থা এখন অসহায়। তাঁদের কারও চোখে জল, কারও মধ্যে রাগ–ক্ষোভ। আবার এর মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে পাড়াবাসীর মধ্যে।
বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে যাওয়ায় সামনের দিন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন মিবু মারমা। তাঁর বেদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আগুন থেকে মেয়ের আদুরে বিড়ালকে রক্ষা করতে না পারার কষ্ট। তিনি বলেন, ‘কিছুই নাই, সব ছাই। ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ঢুকেও গিয়েছিলাম। কিন্তু স্বজনেরা আটকিয়েছিলেন। আমার ঘরবাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিত। তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।’
আরও পড়ুন‘এককাপড়ে বের হয়েছিলাম, এখনো সেভাবে আছি’১৩ ঘণ্টা আগেখাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে পাহাড়ি সংগঠন ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত রোববার গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতা ঘটে। পাহাড়িদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় একটি পক্ষ।
এদিকে তিনজন নিহত এবং সহিংসতার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।বিক্ষোভ ও সহিংসতা চলাকালে তিন পাহাড়ির মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। এ সময় আগুনে পুড়ে যায় বাজারের দোকানপাট ও বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৪০টি দোকান ও ৫০টির মতো বসতঘর। এই পাড়ায় প্রায় এক হাজার লোক বাস করেন।
বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় তিন পাহাড়ির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সদর ও উপজেলায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। এতে রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। এসব এলাকার দোকানপাটও বন্ধ ছিল। সোমবারও একই পরিস্থিতি ছিল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি ছিল। অবরোধও প্রত্যাহার করেনি জুম্ম ছাত্র–জনতা।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় শনাক্ত, দুই সড়কে অবরোধ শিথিল১৭ ঘণ্টা আগেএদিকে তিনজন নিহত এবং সহিংসতার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।
সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহলে রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েলসকালে অবস্থান, দুপুরে ফাঁকাখাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত হওয়া গুইমারা রামেসু বাজারের পরিস্থিতি গতকাল সকাল থেকে ছিল থমথমে।
অবরোধের সমর্থনকারীরা সকালে বাজারে অবস্থান নিয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাজারের প্রবেশমুখের সড়কে সতর্ক পাহারায় ছিলেন। দুই পক্ষের মাঝখানে সড়কে প্রতিবন্ধকতা দিয়েছেন অবরোধকারীরা।
তবে বেলা গড়াতেই বাজার থেকে অবরোধের সমর্থনকারীদের সরে যেতে দেখা যায়। দুপুরের পর বাজারে গিয়ে পাড়াবাসী ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। এর মধ্যে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। বেলা একটায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাজারে প্রবেশ করেন। তাঁরা বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। আরেকটি দল বাজারের প্রবেশমুখে অবস্থান নেন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহলে রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এক দিন পর লাশের পরিচয় শনাক্তগত রোববার গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি চেয়ারম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়নের সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামেসু বাজার বটতলার তৈইচিং মারমা (২০)।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বলেন, গত রোববার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আহত ১৪ জনকে সদর হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসাধীন, ১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জুম্ম ছাত্র-জনতার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। জুম্ম ছাত্র-জনতার একজন মুখপাত্র প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং নিহত ব্যক্তিদের সৎকারের সুবিধার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নিহত ব্যক্তিরা রামেসু বাজারের নন, তবে গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা। পেশা বা কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি না, বিস্তারিত জানা যায়নি। হামলাকারীদের সম্পর্কে ডিআইজি বলেন, হামলায় জড়িত মুখোশ পরা অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলবে।
আমাদের পাড়ার কেউ অবরোধে অংশ নেননি। আমরা কিছুই করিনি। এরপরও বাইরে থেকে লোকজন এসে আমাদের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। বই, কলম, খাতাও পুড়িয়ে ফেলেছে। এক কাপড়ে বের হয়েছি, সেভাবেই আছি এখনো।চিয়া প্রু মারমাসব হারিয়ে অসহায় বাসিন্দারাপুড়িয়ে দেওয়া দোকান। গতকাল দুপুরে খাগড়াছড়ির রামেসু বাজারে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম ম ছ ত র জনত ব ক ষ ভ ও সহ রক ষ ক র পর স থ ত উপজ ল র গতক ল স র ঘটন য় স মব র ত নজন অবস থ অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে নির্বাচনে অসুবিধা নেই: উপদেষ্টা
বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলার যে অবস্থা, তাতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে অসুবিধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘দেশের পরিস্থিতি এখন ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। নির্বাচনকালীন ছোটখাটো সকল ধরনের ঘটনা, সব সময়ই ঘটে। বর্তমানে দেশে অস্থিরতা নেই।’’
আরো পড়ুন:
এনসিপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়ল
কুষ্টিয়া-১ আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে চান নুসরাত তাবাসসুম
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ইলেকশন ভালো হওয়ার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দল, জনগণ, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং সাংবাদিকের সহযোগিতা। সবাই যদি সহযোগিতা করে এবং সবাই যদি নিজের কাজটা ভালোভাবে করে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠভাবে হবে।’’
সমুদ্র নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। তবে অনেক সময় জেলেরা মাছ শিকারের সময় অজান্তেই মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ায় তাদের আটক হওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা জেলেদের প্রণোদনা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’’
পুলিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগের চেয়ে পুলিশের মনোভাব ও মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের দক্ষতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।’’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ, আনসার ও ভিডিপির বিভাগীয় উপ-মহাপরিচালক আব্দুস সামাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীর সরকার, কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসিন সাদেক প্রমুখ।
পরে উপদেষ্টা কুয়াকাটা সুমদ্র সৈকত পরিদর্শন করেন। তিনি কুয়াকাটায় রাত্রিযাপন করবেন। রাতে তিনি কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ ক্যাম্প এবং সকালে তিনি মহিপুর থানা পরিদর্শন করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
ঢাকা/ইমরান/বকুল