জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ডাকা অবরোধ স্থগিত করায় খাগড়াছড়িতে চার দিন পর যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। অবরোধ স্থগিত হলেও আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়নি।

সকালে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। কিছু দোকানপাটও খুলেছে। দূরপাল্লার যান চলাচলও সকাল নয়টার পর থেকে স্বাভাবিক। শহরজুড়েই মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান দেখা যায়। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে।

সকালে খাগড়াছড়ির নেন্সী বাজার এলাকায় দীঘিনালা যাওয়ার অটোরিকশা স্ট্যান্ডে কথা হয় রেশমি চাকমা নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি জানান, পৌর শহরের মধুপুর বাজার এলাকায় স্বামী-সন্তান নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। দীঘিনালায় বাড়িতে তাঁর মা অসুস্থ। সড়ক অবরোধ কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে মাকে দেখতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন অবরোধ না থাকায় বাড়িতে যাচ্ছেন।
পৌর শহরে মো.

জসিম উদ্দিন নামের এক বাসচালকের সঙ্গে কথা হয়। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে বাস চালান জানিয়ে তিনি বলেন, অবরোধের কারণে বাস চলাচল না করায় গত কয়েক দিন উপার্জন করতে পারেননি। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। আজ অবরোধ না থাকায় গাড়ি চালানো শুরু করতে পেরেছেন, যে কারণে অনেক খুশি তিনি।

জেলার পানছড়ি উপজেলায় পরিবার নিয়ে থাকেন অঞ্জন দাশ। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়। তিনি দুর্গাপূজা উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সড়ক অবরোধ কর্মসূচির কারণে এত দিন বাড়িতে যেতে পারেননি।

গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে ফেসবুক পেজ থেকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানায় জুম্ম ছাত্র-জনতা। সংগঠনটি জানায়, খাগড়াছড়ির গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগের প্রতি আস্থা রেখে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের কাছে উপস্থাপিত আট দফা দাবি যদি যথাযথভাবে পূরণ না করা হয়, আবারও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

অবরোধ প্রত্যাহার হলেও খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়নি। জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে করলে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত নয়টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের ডাক দেয় সংগঠনটি।

অবরোধের মধ্যেই গত রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা তিনজনই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। রামেসু বাজার এলাকায় আগুন দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকানে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র এল ক য় রক ষ ক র অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল

আনন্দ আর অশ্রু মিশ্রিত আবেগে রাজধানীর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদায় জানালেন দেবী দুর্গাকে। বুড়িগঙ্গার বুকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজারো ভক্ত ও পুণ্যার্থীর ঢল নামে।

এদিকে, ভক্তদের এই মিলনমেলা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা।

আরো পড়ুন:

প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাট পরিণত হয় ভক্ত-অনুরাগীর মিলনমেলায়।

ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা ও নাচ-গানের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কলা বৌকে একে একে নামানো হয় পিকআপ ভ্যান থেকে। এরপর প্রতিমাগুলো নৌকায় তুলে নিয়ে বুড়িগঙ্গার বুকে নিরঞ্জনের মাধ্যমে করা হয় বিসর্জন।

প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে সদরঘাট টার্মিনালের কাছে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটে নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী বিসর্জন মঞ্চ। সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

প্রতিমা বিসর্জন দেখতে লক্ষ্মীবাজার থেকে আসা ভক্ত পায়েল সরকার বলেন, “মা দুর্গা শান্তির বার্তা নিয়ে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন। আজ তাকে বিদায় দিতে কষ্ট হচ্ছে, তবে এ অপেক্ষাটাও মধুর যে, আগামী বছর তিনি আবার আসবেন।”

কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির কোতোয়ালি থানার আহ্বায়ক শ্রীকান্ত দত্ত বলেন, “খুব সুন্দরভাবে এবারের পূজা উদযাপন সম্পন্ন হয়েছে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসুক, এই কামনা করি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এবার ছিল প্রশংসনীয়।”

কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, “শুধু স্থলেই নয়, নদীপথেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ট্রলার ও স্পিডবোটে নদীতে টহল দিচ্ছে।”

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেন বলেন, “প্রতিমা বিসর্জন যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে সম্পন্ন হয়, সেজন্য আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের সহযোগিতা করছে।”

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “বিসর্জন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ওয়াইজ ঘাটে সুশৃঙ্খল পুলিশি ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। প্রতিমাগুলো নিরাপদে ঘাটে পৌঁছাতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। সন্ধ্যার মধ্যে বাকি প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হবে।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈরী আবহাওয়ায়ও উৎসবের আমেজ, এক ঘণ্টায় ১২৭ প্রতিমা বিসর্জন
  • টেকনাফের পাহাড়ে পাচারের উদ্দেশ্যে জিম্মি রাখা আরও ২১ নারী ও শিশু উদ্ধার
  • বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল
  • অনীষাদের পূজার আনন্দ বাড়িয়ে দিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী
  • পূজামণ্ডপের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা জানতে ও ব্যবস্থা নিতে ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপ’ চালু এনটিএমসির
  • দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণ না হতে পারে, সে জন্যই খাগড়াছড়ির ঘটনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • খাগড়াছড়িতে আজও অবরোধ চলছে, স্থবির জনজীবন
  • খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করছে বিজিবি
  • `কিছুই নাই, সব ছাই, ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে'