রাখাইনে বিপর্যয়কর মাত্রায় অনাহার বাড়ছে
Published: 1st, October 2025 GMT
গত বছর মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যে আজিব বাহারের ছয় মাস বয়সী ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ৩৮ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা মা জানান, সন্তানকে দেওয়ার জন্য তার কাছে কোনো ওষুধ বা খাবার ছিল না। ছেলেটি তার কোলেই মারা যায়।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বাহার বলেন, “আমার বাচ্চারা সারা রাত ক্ষুধার জ্বালায় কেঁদেছিল। আমি ঘাস সিদ্ধ করে তাদের চুপ করিয়ে দিয়েছিলাম।”
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতে, পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল রাখাইন রাজ্য বছরের পর বছর ধরে সংঘাত এবং জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়েছে। ‘সংঘাত, অবরোধ এবং তহবিল হ্রাসের মারাত্মক সংমিশ্রণের কারণে’ এখন ‘উদ্বেগজনক’ অনাহার সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এবং বিক্ষোভ দমনের উপর নির্মমভাবে দমন-পীড়নের পর থেকে মিয়ানমার সংকটে রয়েছে। এর ফলে দেশব্যাপী সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় এবং রাখাইনে আবারো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা জান্তা এবং একটি শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী, আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের নতুন পথ খুলে দিয়েছে।
ত্রাণ কর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, রাখাইনে এক লাখেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ২ শতাংশেরও কম চিকিৎসা পেতে সক্ষম।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মাইকেল ডানফোর্ড জানিয়েছেন, জান্তা ও আরাকান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ভীতি এবং বিধিনিষেধের কারণে জাতিসংঘ জান্তা-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের বাইরে রাখাইনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে খাদ্য পরিবহন করতে পারছে না।
তিনি বলেছেন, “এটি স্পষ্টতই অনাহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে যা আমরা দেখছি। আমরা অত্যন্ত হতাশ, কারণ আমরা জানি যে এমন কিছু জনগোষ্ঠী আছে যাদের আমাদের সহায়তার প্রয়োজন।”
আরাকান আর্মির একজন মুখপাত্র খিন থু খা জানান, জান্তা খাদ্য ও ওষুধ সহ সাহায্যের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং তারা জাতিসংঘ এবং সাহায্য সংস্থাগুলার সাথে সহযোগিতা করছে।
আরাকান আর্মির তথ্য অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে কিন্তু এখনো দুর্ভিক্ষের মাত্রায় পৌঁছায়নি। তিনি সামরিক অবরোধকে দায়ী করেন।
মুখপাত্র খিন থু খা জানান, সংঘাতের কারণে চিকিৎসা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যতটা সম্ভব কম রাখার এবং কর কমানোর চেষ্টা করছে।
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর একজন মুখপাত্র মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাব দেননি।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আর ক ন আর ম র খ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ‘মোটা জেনারেল’ এবং বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে কয়েক দশক ধরে সামরিক বাহিনীর অধঃপতন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কমান্ডারদের এক বিরল সমাবেশে তিনি বলেন, যাঁরা তাঁর কর্মসূচিকে সমর্থন করেন না, তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।
হেগসেথের সঙ্গে মার্কিন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সমাবেশে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিও ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোতে সমবেত অ্যাডমিরাল এবং জেনারেলদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি মার্কিন শহরগুলোতে সেনা মোতায়েনকে ‘আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার ধারণা দেন।
ফক্স নিউজের সাবেক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হেগসেথ এবং সাবেক রিয়েলিটি টিভি তারকা ট্রাম্পের এ মন্তব্য একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মতো মনে হয়েছে। কারণ, গত সপ্তাহে হঠাৎই এই সমাবেশের জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করা হয়েছিল।
হেগসেথ অনুষ্ঠান শুরু করে বলেন, ‘নির্বোধ ও বেপরোয়া রাজনৈতিক নেতারা ভুল পথে পরিচালনা করায় আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা ‘ওউক ডিপার্টমেন্ট’ (অতিমাত্রায় প্রগতিশীল বিভাগ) হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আর নয়।’
সারা বিশ্ব থেকে উড়ে আসা শীর্ষ কর্মকর্তায় ভরা মিলনায়তনে ভাষণ দেওয়ার সময় হেগসেথ তাঁর মাধ্যমে ফ্ল্যাগ কর্মকর্তাদের যাঁরা বরখাস্ত হয়েছেন, সেই সেটিকে সমর্থন করেন। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ শীর্ষ মার্কিন জেনারেল এবং নৌবাহিনীর শীর্ষ অ্যাডমিরাল, যিনি একজন নারী। তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তাকে তিনি অব্যাহতি দিয়েছেন, তাঁরা একটি ভেঙে পড়া সংস্কৃতির অংশ ছিলেন।
হেগসেথ পেন্টাগন যেভাবে বৈষম্যের অভিযোগ ও অন্যায়ের তদন্ত পরিচালনা করছে, তাতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘ডিমের খোসার ওপর দিয়ে হাঁটার মতো’ সতর্ক থাকতে হয়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথের ডাকে সমাবেশে যোগ দেওয়া মার্কিন শীর্ষ জেনারেলরা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ভার্জিনিয়া