Prothomalo:
2025-11-17@06:56:37 GMT

হেরিনু শারদ প্রভাতে

Published: 1st, October 2025 GMT

শরৎকাল মানেই উজ্জ্বল নীল আকাশ, টুকরো টুকরো মেঘ, মন কেমন করা সকাল, চারপাশে শিউলি ফুলের গন্ধ। শরৎ মনে করিয়ে দেয় কাজী নজরুল ইসলামের সেই গান ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শরৎ’ কবিতার কথা মনে পড়ে যায়, ‘আজি কী মধুর মূরতি, হেরিনু শারদ প্রভাতে! হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ, ঝলিছে অমল শোভাতে।’

নীল আকাশের নিচে সাদা কাশবন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে অপরূপ সাজে। কাশফুলের এই শুভ্রতা ছুঁয়ে যায় প্রতিটি হৃদয়। শরতের মেঘমুক্ত আকাশ, শিউলি ফুলের গন্ধ প্রতিটি বাঙালিকে জানান দেন ‘মা’ আসছেন।

আশি–নব্বই সালের দুর্গাপূজা স্মৃতিতে অম্লান। আশি সালে প্রায় প্রতিটি প্রতিমা গড়া হতো মাটির। পরনে শাড়ি। পানপাতার মতো গৌরমুখ।

দু-একটি ব্যক্তিগত পূজা ছাড়া, বারোয়ারি পূজাই বেশি ছিল। তাই পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল সাধারণ মানুষের। এখনকার মতো তখন জাঁকজমক কিংবা জৌলুশ কিছুটা কম থাকলেও আনন্দের কমতি ছিল না। ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পেতাম মাইকে চণ্ডীপাঠ, ঢাকের বাজনা, বাতাসে ধূপের গন্ধ। দুর্গাপূজার আয়োজকেরা হাট থেকে বায়না করে নিয়ে আসতেন ঢাকিদের। তখন সাউন্ড সিস্টেম চল ছিল না। তখন শরতের আকাশে–বাতাসে ঢাকের আওয়াজ আর ধূপের গন্ধ ভেসে বেড়াত। আসলে যেকোনো উৎসবই বাঙালির।

এই শরৎ থেকেই শারদীয় উৎসব। যাঁকে ঘিরে এই উৎসব, তিনি শুধু পৌরাণিক দেবী গিরিরাজ হিমালয় ও মেনকার কন্যাই নন, তিনি আমাদের ঘরের মেয়ে। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে আসবে মায়ের কাছে। তার জন্য মায়ের অধীর অপেক্ষা। তার জন্য ধরণি উৎসবের সাজে সেজেছে। দুর্গাপূজা শুধু দেবীর পূজার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি একটি সামগ্রিক উৎসব। সামাজিক সম্প্রীতির এক সুন্দর মিশ্রণ।

আমরা প্রতিটি প্রতিমার মধ্যে ঐশ্বরিক সত্তাকে দেখতে পাই। মৃন্ময়ীর মাঝে চিন্ময়ীকে বিভিন্ন রূপে আহ্বান করে আমরা তাঁকে খুঁজে পাই। আমাদের উদ্দেশ্য হলো আরাধনা করা। প্রতিমা হলো মাধ্যম। ‘প্রতি মা’ যেখানে ‘মা’ শব্দের সঙ্গে প্রতি উপসর্গ যুক্ত করে আমরা পাই প্রতিমা। প্রতিমা শব্দের অর্থ প্রকাশিত। এই শব্দের মাধ্যমেই বোঝা যায় প্রতিটি মা–ই দেবী। মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠায় মহাশক্তির প্রতীক দেবী ‘দুর্গা’ মায়ের মতোই আবির্ভাব। যিনি নিঃশর্তভাবে ত্যাগ, ভালোবাসা, মমতা, উজাড় করে দেন।

যেকোনো পূজায় ঘট স্থাপন করতে হয়। কারণ, ঈশ্বরকে সাকার–নিরাকার দুই রূপেই পূজা করা হয়। ঘট স্থাপন ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। দেবীপক্ষের শুক্লাষষ্ঠী বোধন দিয়েই মূলত দুর্গাপূজার সূচনা হয়ে থাকে। বোধন অর্থ জাগ্রত হওয়া। যেখানে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এই দিনেই মা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পদার্পণ করেন। সঙ্গে থাকেন গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক।

সপ্তমীতে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। দুর্গাপূজার তাৎপর্য হলো নবপত্রিকা, যা দেবীর প্রকৃতি রূপকে পূজা করার প্রতীক। নবপত্রিকার মাধ্যমে দেবী দুর্গা প্রকৃতি রূপে পূজিত হন। এটি দুর্গাপূজার অপরিহার্য অংশ। কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু ও ধান। সপ্তমীর সকালে এগুলোকে স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে গণেশের পাশে স্থাপন করা হয়। এই নবপত্রিকাগুলো নয়টি দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়। শস্য–শ্যামলা প্রকৃতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। দেবী দুর্গা প্রকৃতি রূপে বিরাজ করেন।

অষ্টমী তিথি, দুর্গাপূজার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে দেবীর অষ্টবিধ রূপ ও অস্ত্রগুলো পূজিত হয়। পুরাণমতে, মহাষ্টমীর দিনে মা দুর্গা তাঁর ললাট থেকে দেবী চামুণ্ডা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দেবতাগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারী রূপে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন। চামুণ্ডা মহাময়ার এক রুদ্ররূপ। দেবীকে চামুণ্ডারূপে আরাধনা করা হয়।

১৯০১ সালের ১৮ অক্টোবর স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজায় অষ্টমী তিথিতে কুমারীপূজার প্রচলন করেন। দেবী দুর্গাকে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি জগন্মাতা। যিনি সৃষ্টি, পালন, ধ্বংসের মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিচালনা করেন। নারী শক্তি, প্রকৃতি, সৃষ্টি, ধ্বংস, জ্ঞান, সমৃদ্ধি ও মুক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হন।

নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহূতি দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলের সম্পদ লাভ হয়। নবমী পূজায় পশুবলি দেওয়া হয়। সঙ্গে আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি আছে।

নবমীর উচ্ছ্বাস–আনন্দের পরই আসে বিজয়া দশমী। প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। প্রথমে ঘটের মাধ্যমে নিরাকারভাবে এবং পরে সাকার মাটির প্রতিমা বিসর্জনে মা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যান। দেবীবরণ, সিঁদুরখেলা, চলে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মিষ্টি বিতরণ।

কবি সুনেত্রা ঘটকের ‘বিজয়া দশমী’ কবিতার বিষাদের মতো আমাদেরও মনে একই সুর বাজে।

বিজয়া দশমী, বাজে বিদায়ের বিষাণ, দেবী মা চলে যান, রেখে যান অভিমান। আশ্বিনের এই শারদ দিনে, মেঘেদের আনাগোনা, মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে হয় দেবীর প্রস্থান।

শুভশক্তির সূচনা ও অশুভশক্তির বিনাশ হোক। সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ হোক, সবার মধ্যে বজায় থাকুক অকৃত্রিম ভালোবাসা। সব অন্ধকার মুছে পূজা হয়ে উঠুক অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনীন।

চন্দনা সেনগুপ্তা বাচিক শিল্পী ও কবি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক ত

এছাড়াও পড়ুন:

রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব

অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্‌যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্‌যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।

নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।

আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।

অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।

লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।

সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্‌যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।

শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জানা গেল রাজামৌলির ছবির নাম, থাকছেন মহেশ বাবু-প্রিয়াঙ্কা
  • দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের জয়ের গল্প আসছে
  • নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আদি নববর্ষ’ উদ্‌যাপন
  • মুগ্ধ করল নবান্ন উৎসবে ধান কাটার প্রতিযোগিতা
  • রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
  • নবান্নের পিঠায় সুবাসিত রাবি
  • ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয় 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের উৎসব রোববার
  • পয়লা অগ্রহায়ণে ‘নববর্ষ’ উদ্‌যাপন করবে ডাকসু
  • দিনভর আনন্দ আয়োজনে সাফল্য উদ্‌যাপন