সন্ধ্যায় বিসিবি পরিচালক নির্বাচিত, রাতেই বাতিল
Published: 7th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন শেষ হয়েও হইলও না শেষ! যেই নির্বাচন নিয়ে এতো নাটকীয়তা ও বিতর্ক, তা তো সহজেই থামবার নয়। এবার একেবারেই নতুন কিছু হলো।
বিসিবি পরিচালনা পর্ষদে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত দুই পরিচালক হয়ে এসেছিলেন দুই ব্যবসায়ী এম ইসফাক আহসান ও ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিক। এদের একজন ইসফাক আহসানকে নিয়ে চলতে তাকে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার কারণে লাগাতার নেতিবাচক প্রচার চলতে থাকে। এই কারণে সন্ধ্যায় তাকে বিসিবি পরিচালক ঘোষণা করেও রাতে বাতিল করে এনএসসি। আজ নতুন একজনের নাম ঘোষণা করবে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি।
এনএসসির নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম, ইসফাক আহসানকে সরিয়ে দেয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘’তাকে ঘিরে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটির জন্যই আমরা তাকে সরিয়ে দিচ্ছি। আমাদের তার এই পরিচয়টি জানা ছিল না। আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।’'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। যদিও সাংসদ নির্বাচিত হতে পারেনি।
রীতি অনুযায়ী সরকারের পক্ষের ব্যক্তি কিংবা শীর্ষ মহলের গ্রীন সিগন্যালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই দুই জন পরিচালক ঠিক করে দেন। পতিত স্বৈরাচার সকারের আশীর্বাদপুষ্ট একজন কিভাবে এই সময়ে ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশ।
এনএসসির কোটায় নির্বাচিত হওয়ার পর বিসিবির বোর্ড সভায় ছিলেন ইসফাক আহসান। নবনির্বাচিত বাকি সব পরিচালকদের সঙ্গে কেক কেটে উদযাপনও করেছিলেন। কিন্তু মুহূর্তেই জানতে পারেন তার পদ বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা/ ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একজন ভালো শিক্ষক পাওয়া এবং না পাওয়াই হয়তো জীবনের রেখা অনেকটাই নির্ভর করে
ছোটবেলায় নাদিরা ম্যাডামের গণিত ক্লাসের কথা, তৃতীয় শ্রেণিতে ভাগ অঙ্কের সঙ্গে পরিচয়। ভাজক, ভাজ্য, ভাগফল, ভাগশেষ—এসব কোনো কিছুই ঠিক মাথায় ঢুকছে না। সংজ্ঞাগুলো মাথায় তালগোল পাকাচ্ছে। নাদিরা ম্যাডাম বই বন্ধ করে বললেন, ‘চলো আমরা একটা আম কাটি। এইখানেই ভাগ অঙ্ক আছে। আমরা যেটাকে ভাগ করি তা হলো ভাজ্য। যেমন, আমটা। একে আমরা টুকরা করে ভাগ করছি। আমরা যা দিয়ে ভাগ করি তা হলো ভাজক। যেমন এই ছুরিটা, এটা দিয়েই আমরা আমটা কেটে ভাগ করছি। পুরোটাকে যে কয়টা ভাগে ভাগ করে, সেটাই ভাগফল। ভাগ করে আমের টুকরাগুলোকে পেলাম, সেগুলো ভাগফল। যেটা আর ভাগ করা যায় না, থেকে যায়, সেটাই ভাগশেষ। আমের আঁটিকে আর ভাগ করা যাচ্ছে না!’
পুরো ক্লাস এবার বলল, আম-ভাজ্য, ছুরি-ভাজক, আমের টুকরা-ভাগফল, আঁটি-ভাগশেষ।
কয়েক দিন আগে আমার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া পুত্রকে ভাগ অঙ্ক শেখাতে গিয়ে শৈশবের নাদিরা ম্যাডামের ক্লাস থেকে সেই জ্ঞান ধার করলাম। সেই উদাহরণে পুরো ক্লাস যেভাবে এক নিমেষেই ভাগ অঙ্ক শিখে ফেলেছিল, আমার পুত্রটিও তেমনি শিখে ফেলল।
আরও পড়ুনঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি অনলাইন কোর্স, ঘরে বসেই শিখুন নতুন দক্ষতা৮ ঘণ্টা আগেজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে নাদিরা ম্যাডাম আমার জীবনে এমন একজন শিক্ষক যিনি সেই শিশুমনে দারুণ প্রভাব রেখেছিলেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক শিক্ষকের দেখা মিলেছে, প্রত্যেকের কাছেই আমি কিছু না কিছু শিখেছি। আর প্রত্যেক মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু গ্রহণ করবার মানসিকতা আমাকে তৈরি করে দিয়েছেন নাদিরা ম্যাডাম।
আমরা ৯০ দশকের শিক্ষার্থী। তখন চাইলেই ইন্টারনেটে যেকোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জন সম্ভব ছিল না। নাদিরা ম্যাডাম বই পড়তে শেখাতেন। মনে আছে, ম্যাডাম ইতিহাসের একটা অধ্যায় পড়াচ্ছিলেন, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। খুব সামান্যই ছিল সেই পাঠ্যবইতে। অন্য একটা ক্লাসের বই এনে তিনি আরও বিস্তারিত গল্পের মতো বললেন। জানতে চেষ্টা করলে বই পড়ে জানা যায়, শুধু চেষ্টা—ম্যাডাম শিখিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনতরুণদের জন্য গ্লোবাল লিডারশিপ চ্যালেঞ্জ ২০২৫: স্নাতকে করুন আবেদন৬ ঘণ্টা আগেমফস্বলে বেড়ে ওঠা মেয়েদের স্বপ্নগুলোও হয়তো ছোট হয়। ম্যাডামের কাছে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প শুনি, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবনের নানান ছোট ছোট গল্প শুনি। বলাবাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যয়টির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটান তিনি। ঘর ছেড়ে একা অচেনা শহরে পড়তে যাওয়ার সাহস, আত্মবিশ্বাস আর প্রত্যয় গড়ে তুলতে তাঁর সেই ছোট ছোট গল্প অনেকটা জুড়ে আছে।
আজ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি, হয়তো শৈশবে একজন নাদিরা ম্যাডাম ছিলেন বলে! আমি তাঁর গড়া অসংখ্য মানুষের মধ্যে নিতান্তই ক্ষুদ্র একজন। নাদিরা ম্যাডাম শিক্ষকতাকে কেবল পেশা হিসেবে না নিয়ে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ার দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি পাঠকে শিশু যেন মুখস্থ না করে আত্মস্থ করতে পারে, সে বিষয়কে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন। নিয়মের ব্যাপারে তিনি ছিলেন কঠোর, যা পুরো স্কুলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বড় উদাহরণ ছিল। জেলা পর্যায়ের একটা স্কুলে তিনি বিতর্ক চর্চা অনুশীলন করাতেন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করতেন সুচারুভাবে। সে সময় স্কুলটি বিভাগীয় পর্যায়ে এমনকি জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক করেছে। কোমলতা-কঠোরতার এক দারুণ সমন্বয় তাঁর ব্যক্তিত্ব। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ার অনুপ্রেরণা তিনি। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে এমন একজন শিক্ষক পেলে শিক্ষার্থীদের জীবনবোধ তৈরি হয়, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় অবদান। তিনি স্বপ্ন দেখতে শেখান, সৎ হতে শেখান, যৌক্তিক হতে শেখান, নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবেসে চর্চা করতে শেখান, দায়িত্ববান মানুষ হতে শেখান।
আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রথম শিক্ষক হিসেবে মায়ের কাছে হাতেখড়ির পরেই আমার কাছে শিক্ষক অবতার ছিলেন তিনি। আমি আমার জীবনের সব সম্মানিত শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি যেটুকু, তা তাঁরা প্রত্যেকে পরম যত্নে তিলে তিলে গড়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর সম্মান, ভালোবাসা। সুন্দর সমাজ গড়তে শিক্ষকের মর্যাদার কোনো বিকল্প নেই। যিনি শিশুর মানস গড়েন, যিনি কিশোরকে প্রশ্ন করতে শেখান, যিনি তরুণকে বিকল্প ভাবনার দরজা উম্মুক্ত করে দেন; তাঁদের শ্রদ্ধা করতে না শিখতে পারলে সমাজের সৌন্দর্য অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়।
আজ শিক্ষক দিবসে আমি শিক্ষার্থী হিসেবে আমার শিক্ষকদের জানাই অকৃত্রিম ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা!
*লেখক: শেখ জিনাত শারমিন, সহকারী অধ্যাপক, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের নেই উচ্চতর ডিগ্রি০৪ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনহাঙ্গেরিতে স্কলারশিপ, পড়াশোনা ইংরেজিতে হলে আইইএলটিএস বা টোয়েফলের প্রয়োজন নেই ০৪ অক্টোবর ২০২৫