ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করি না: লুৎফে সিদ্দিকী
Published: 30th, October 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের চেম্বার অব কমার্স বা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। সবাই আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সবার কাছে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ কিন্তু যে কাজটা আমরা করি না, সেটা হলো সৌজন্য সাক্ষাৎ। আমাদের এখানে সৌজন্য সাক্ষাতের অর্থ হলো, একটা ফুল দিয়ে ছবি তুলে চলে যাওয়া। আমরা ওভাবে সাক্ষাৎ করি না।’
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার উদ্ভাবনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন লুৎফে সিদ্দিকী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) নামে এই মেলা আয়োজিত হচ্ছে। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) বাণিজ্য ও মেলা শাখার পরিচালক মো.
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমাদের আন্তমন্ত্রণালয় বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি আছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান আছেন; বন্দরগুলোর চেয়ারম্যান ও বিডার চেয়ারম্যানও আছেন। ওই কমিটিতে যেসব বিষয় আলোচনা হয়, সেগুলো তখনই নিষ্পত্তির চেষ্টা করি। যেসব বিষয়ে নীতিগত কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, সেগুলোও আমরা ওই মিটিং থেকেই এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।’
লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, 'আপনারা যদি আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড দেখেন, গত এক বছরে সাত-আটটি মিটিংয়ের মাধ্যমে আমরা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বাস্তব অগ্রগতি করেছি। তবু যখন কারও কোনো অসুবিধা হয়, আমরা সেটা নিয়ে তখনই খুব দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার চেষ্টা করি।’
দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা নিয়ে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, পর্যটন দেশের অন্যতম কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতগুলোর একটি। অন্য অনেক খাতই প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে; কিন্তু পর্যটন এমন একটি খাত, যা এখনো মানুষের সেবার ওপর নির্ভরশীল। সিঙ্গাপুরের মতো দেশ, যাদের তেমন ঐতিহ্যবাহী সম্পদ নেই, তারাও কীভাবে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আকর্ষণ করছে। এ বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়মা শাহীন সুলতানা বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা বৈচিত্র্যময়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, খাদ্য ও লোকসংস্কৃতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান গন্তব্য হতে পারে। তবে এসব সুযোগ এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি।
সমাপনী বক্তব্যে টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আগমন বাড়াতে হলে অন-অ্যারাইভাল ভিসার পরিবর্তে ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জাম যদি স্বল্প করের আওতায় আনা যায়, তাহলে পর্যটনের আরও প্রসার হবে।
এ সময় উপস্থিত আরও বক্তব্য দেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাফিকুর রহমান, বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাইনুল হাসান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নায়লা আহমেদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর ধরে আতর–সুরমা বিক্রি করেন ৭৫ বছরের খোরশেদ
হাটের ব্যস্ততা কমে এসেছে। বেলা বাড়ায় বিকিকিনির কোলাহল যখন প্রায় শেষের পথে, ঠিক তখনই চোখে পড়ে এক দৃশ্য। হালকা আকাশি রঙের পোশাকে এক বয়োবৃদ্ধ মানুষ কালো ব্যাগ থেকে আতরের শিশি বের করে পরম মমতায় কারও না কারও কবজিতে লাগিয়ে দিচ্ছেন। তিনি ৭৫ বছর বয়সী মো. খোরশেদ আলম।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কলাহাটে প্রতি হাটবারে দেখা মেলে খোরশেদের। ফজরের পর হাট জেগে উঠলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় কমে আসে। ঠিক তখনই খোরশেদ আলমকে দেখা গেল। হাটে আসা প্রবীণ থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রাকচালক—সবাই তাঁর পরিচিত। কেউ হাতে আতর মেখে নেন, কেউ চোখে সুরমার শীতল পরশ বুলিয়ে নেন। বিনিময়ে ভালোবেসে হাতে গুঁজে দেন ৫ বা ১০ টাকার নোট। এই সামান্য আয়েই চলে তাঁর জীবন। তিনি টানা ২৫ বছর ধরে এভাবেই জীবন চালাচ্ছেন।
কারও ওপর নির্ভরশীল নন বানেশ্বরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম। আয়রোজগার নিয়ে জানতে চাইলে মুখে নির্মল হাসি ফুটিয়ে বলেন, ‘প্রতিদিন সুরমা আর আতর বেচে খরচ বাদে ২৫০ টাকার মতো থাকে। মানুষ ভালোবেসে ১০ টাকা, ২০ টাকা দেন।’
খোরশেদ আলমের সংসারে এখন আছেন কেবল স্ত্রী। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
কীভাবে এই সুগন্ধির ব্যবসায় এলেন—জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘একটা বয়স পর্যন্ত গায়ে-গতরে খাটতে পারতাম। যখন দেখলাম শরীরে আর শক্তি নেই, হাতেও কোনো টাকাপয়সা নেই, তখন এই ব্যবসার কথা মাথায় এল। আমি সেই একাত্তর সাল থেকে আতর ব্যবহার করি। অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। ভাবলাম, এটাকেই জীবিকা করি। সেই থেকে এই ব্যাগ হাতে নিয়েছি।’
খোরশেদ আলমের ব্যবসার মূল পণ্য আতর আর সুরমা। শুধু লাগিয়েই দেন না, কেউ চাইলে বিক্রিও করেন। তাঁর ভাষায়, আতর দিলে একটা সুগন্ধি আসে, মনে শান্তি লাগে। তখন নিজেকে পবিত্র মনে হয়। আর সুরমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হাদিসেও সুরমা ব্যবহারের কথা বলা আছে।
চোখে সুরমা লাগিয়ে নিচ্ছিলেন ট্রাকচালক মো. মহাসিন। কলার ট্রাক নিয়ে তিনি কুমিল্লায় যাবেন। মহাসিন বলেন, ‘আমি প্রায়ই চাচার কাছ থেকে চোখে সুরমা দিই। এতে চোখ ঠান্ডা থাকে, দেখতেও ভালো লাগে। এটা তো নবীর সুন্নত। মাঝেমধ্যে আতরও কিনি।’
খোরশেদ আলম বললেন, শুধু বানেশ্বর হাটেই নয়, বিভিন্ন হাটবাজার, গ্রামগঞ্জ, এমনকি রাজশাহী ও নাটোর কোর্ট চত্বরেও তিনি এই আতর-সুরমা ফেরি করেন। তিনি বলেন, ‘এই বয়সে যদি এটা না করতাম, তাহলে কে মুখে ভাত তুলে দিত? এই যে ঘুরিফিরি, এতে শরীরটাও এখনো ঠিক আছে।’