উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বিজিএমইএ-এনপিও সমঝোতা স্মারক
Published: 30th, October 2025 GMT
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদনশীলতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিজিএমইএ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ
বিজিএমইএ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৭.
বিজিএমইএ জানায়, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, পোশাক শিল্পকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ যুগের উপযোগী করে তুলতে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সেমিনার ও পরামর্শ সেবা পরিচালনা করবে বিজিএমইএ ও এনপিও। পাশাপাশি, উৎপাদনশীলতা ও অপারেশনাল উৎকর্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫ এস, কাইজেন, লিন ম্যানুফেকচারিংরের মতো আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
চুক্তির অংশ হিসেবে প্রতি বছর তিনটি তৈরি পোশাক কারখানাকে ‘মডেল এন্টারপ্রাইজ’ হিসেবে বাছাই করা হবে এবং এনপিওর কারিগরি সহায়তায় এসব কারখানায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া, উভয় সংস্থা এশিয়ান প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশনের সহায়তায় গবেষণা ও সক্ষমতা উন্নয়নমূলক উদ্যোগেও একসাথে কাজ করবে।
এনপিও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিজিএমইএ পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম এবং এনপিও সভাপতি মো. নুরুল আলম।
বিজিএমইএ প্রতিনিধি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং সাপ্লাই চেইনের নতুন বাস্তবতায় ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। শুধুমাত্র কম খরচের ওপর নির্ভর না করে, এখন প্রয়োজন গুণগত মান, দক্ষতা, গতি ও উদ্ভাবনের সমন্বয়।
বিজিএমইএ পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পথে এগিয়ে নিতে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তি, আইওটি ও ইনোভেশন সংযুক্ত করা জরুরি। বিজিএমইএ ও এনপিওর এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের টেকসই, আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক শিল্পে রূপান্তরের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।”
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব জ এমইএ ব জ এমইএ এনপ ও
এছাড়াও পড়ুন:
২০ শ্রমিকে ট্রেড ইউনিয়নে আপত্তি ব্যবসায়ীদের
কারখানার ২০ জন শ্রমিকের সমর্থনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত শ্রম আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এতে শিল্পে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়বে, উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আজ মঙ্গলবার সাত ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগের কথা জানান সংগঠনগুলোর নেতারা। সংগঠনগুলো হলো পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ, ঢাকা চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই), লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এলএফএমইএবি) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ত্রিপক্ষীয় সমন্বয় কমিটির আলোচনায় শ্রমিকসংখ্যার ভিত্তিতে ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা পরিবর্তন করে ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবতা বিবর্জিত।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম ১০০ শ্রমিকের সম্মতি লাগে, পাকিস্তানে ২০ শতাংশ শ্রমিকের। অথচ আমাদের দেশে মাত্র ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতেই ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে—এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল কাঠামো তৈরি করবে।’ এই সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, শ্রম আইনে ভবিষ্যৎ তহবিল, শ্রমিকের সংজ্ঞা ও অন্যান্য ধারার অস্পষ্টতা শিল্পে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেবে, রপ্তানি কমবে এবং অর্থনীতি দুর্বল হবে। তাঁরা অনুমোদিত শ্রম আইনের অধ্যাদেশটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সরকারের দাবি, আইনটি আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং শ্রমিক-উদ্যোক্তা উভয় পক্ষের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে উদ্যোক্তাদের প্রকৃত মাশুল ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একটি সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার জন্য নয়, সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে। তবু কেন মাশুল বাড়ানো হলো, তা উদ্যোক্তাদের বোধগম্য নয়।
এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে মাহমুদ হাসান খান বলেন, উত্তরণের পথ মসৃণ রাখতে সরকারকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস–সংকটের সমাধান, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিজিএমইএর সভাপতি অভিযোগ করেন, তাঁরা চার মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাতের চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ পাননি। তিনি বলেন, ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চাওয়া বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা হলেও ৪ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি খাতের প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ, বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার, এলএফএমইএবির সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বাপির প্রধান নির্বাহী মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।