বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া দেশদ্রোহের শামিল বলে ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা শ্রীভূমির ‘অপরাধী’ কংগ্রেসিদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আসাম পুলিশকে এই নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, অপরাধী নেতাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত সোমবার আসামের করিমগঞ্জ জেলার শ্রীভূমি শহরে কংগ্রেস সেবাদলের বৈঠকে স্থানীয় এক নেতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পরিবেশন করেন। এই গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন বিজেপিশাসিত আসামের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অশোক সিংঘল। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কংগ্রেসের সভায় সেই দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হচ্ছে, যারা উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।’

অশোক সিংঘলের আরও অভিযোগ, কংগ্রেস ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করে। সেই রাজনীতির মধ্য দিয়ে তারা আসামের জনবিন্যাসের বদল ঘটাতে চায়। তাই তারা কয়েক দশক ধরে অনুপ্রবেশে মদদ দিয়ে আসছে। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস বৃহত্তর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইছে।

ওই পোস্টের পরপরই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরাল হয়ে ওঠে। রাজ্যের বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দেশদ্রোহের অভিযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যাঁরা ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে তাঁদের দেশের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে চান, কংগ্রেস তাঁদের মদদ দিচ্ছে। সে দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া ওই পরিকল্পনাকেই অনুমোদন করছে।

হিমন্ত বলেন, কংগ্রেসের সভা শুরু হচ্ছে ভারতের নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে। এটা দেশের জনগণ ও জাতীয় সংগীতের অবমাননা। এ কারণে তিনি শ্রীভূমির কংগ্রেস কমিটি ও তাঁর নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের বিভিন্ন ধারায় মামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, কংগ্রেসের নেতাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কংগ্রেসের ওই সভার ভিডিওটি আসাম বিজেপির পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে কংগ্রেসবিরোধী প্রচার।

রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হয়েছে, কংগ্রেস বাংলাদেশের মোহে আচ্ছন্ন। বিজেপি অভিযোগ তুলে লিখেছে, ‘মাত্র কয়েক দিন আগে ভারতের গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে বাংলাদেশ এক মানচিত্র প্রকাশ করেছিল। এখন বাংলাদেশ নিয়ে আচ্ছন্ন কংগ্রেস আসামে গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে। এরপরও কেউ যদি কংগ্রেসের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারেন, তা হলে হয় তিনি অন্ধ, কিংবা মদদদাতা অথবা দুটিই।’

বিতর্ক শুরু হতেই সরব হয় কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি সংস্কৃতির আবেগ। বিজেপি সব সময় বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলার মানুষকে অপমান করে। বাঙালিদের তাচ্ছিল্য করে।

গগৈ বলেন, বিজেপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন বোঝে না। বাঙালির ইতিহাস তারা জানে না। বাংলার মানুষ ও বাঙালিদের তারা স্রেফ ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করে। বাঙালির ভাষা, আবেগ ও সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করে না।

গৌরবসহ কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, জ্বলন্ত সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এই অপ্রয়োজনীয় ও অনভিপ্রেত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তারা অনাবশ্যক রাজনীতি করছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লিখেছিলেন ১৯০৫ সালে, ব্রিটিশ রাজ যখন বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ এই গানটিকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র মন ত র আস ম র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জবানবন্দী নেয়ার অভিযোগ তুললেন ড্যাফোডিলে

সাভারে দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দী নেয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আর কবির।

এ সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন বলে জানান উপাচার্য। 

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম আর কবির। 

উপাচার্য জানান, রবিবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সব দায় ড্যাফোডিলের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে সিটি বিশ্ববিদ্যালয়। সংঘর্ষে ড্যাফোডিলের শতাধীক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। সেদিন রাতে ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে জোরপূর্বক পরিকল্পিত হামলার জবানবন্দির ভিডিও ধারণ ও তা প্রচার করে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের একতরফা দোষী করা হচ্ছে। 

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করা যাবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিষয়টি দেখছেন বলে জানান উপাচার্য।

এ ছাড়াও ড‍্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের দ্বারা সাংবাদিকদের হেনস্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।’’ সাংবাদিকদের সাথে বিরূপ আচরণ করায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। 

উপাচার্য জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সিটি ইউনিভার্সিটির একাউন্টস থেকে দেড় কোটি টাকা চুরি, অস্ত্রসহ হামলার নির্দেশ, লুটপাটের ঘটনায় জিম্মি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে মিডিয়া ট্রায়াল করার লক্ষ্যে মিথ্যাচার করে সিটি কর্তৃপক্ষ প্রচার করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুম ইকবাল, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রমুখ। 

প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে থুতু ফেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভারের খাগান এলাকা। ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে রাতভর। আহত হন উভয়পক্ষের ২ শতাধীক শিক্ষার্থী। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয় সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও পরিবহন। পরে এ ঘটনায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া তদন্ত কমিটি গঠনসহ আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়ধীন বলে জানান সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ।

ঢাকা/সাব্বির//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানখেতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে জড়িয়ে মায়ের সামনে শিশুর মৃত্যু
  • বরগুনায় ইঁদুর মারার ফাঁদে শিশুর মৃত্যু
  • শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জবানবন্দী নেয়ার অভিযোগ তুললেন ড্যাফোডিলে