জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ সনদের বাস্তবায়নকেই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে বলে মনে করে জুলাই সনদ।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান (রুবেল) বলেন, ঐকমত্য কমিশনের কিছু সুপারিশ কমিশনের বৈঠকের আলোচনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কিছু সুপারিশ গণতান্ত্রিক রীতি–পদ্ধতির অনুসরণ করে না। এই সুপারিশমালা বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যেটা জুলাই সনদের বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে আশঙ্কার মুখে ফেলছে। শুধু গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন কিংবা ভিন্নমতের মীমাংসার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। ফলে এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়া অনৈক্য ও বিভেদের সৃষ্টি করবে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।

বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে প্রস্তাবগুলোয় ভিন্নমতের উল্লেখ ছিল। সেই সঙ্গে ভিন্নমত নিরসনের উপায় নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে ভিন্নমতগুলোকে উল্লেখ করে জনগণের মতামত নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা হয়েছিল এবং সনদের প্রতিটি ধারায় তা উল্লেখ আছে। কিন্তু ভিন্নমত বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। যেসব বিষয়ে মাসের পর মাস রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা ও তর্ক–বিতর্ক করে সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি, সেসব বিষয়ে সঠিকভাবে ওয়াকিবহাল না হয়েই সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে গণভোটে তা নিরসনের চিন্তা বাস্তবোচিত নয়।

দুই নেতা বলেন, ‘ভিন্নমত চাপিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া মোটেই গণতান্ত্রিক নয়। তা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং অনৈক্য বাড়িয়ে দেবে বলে আমরা মনে করি।’ তাঁরা আরও বলেন, নির্বাচিত সংসদের কর্তৃত্ব খর্ব করে অন্তর্বর্তী সরকারের জারিকৃত আদেশেই সংবিধান সংস্কার করা হলে, সেটা টেকসই হবে না; বরং এটা এমনকি সংবিধান সংস্কার পরিষদ নাম দিয়েও তাকে রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করবে।

গণসংহতি আন্দোলনের দুই নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিতে প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জনগণের অনুমোদন গ্রহণ। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রকাশ হিসেবে আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা প্রদানের জন্য এবং আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা বলেছিলাম শুরু থেকেই। কিন্তু তা কমিশন যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাব হিসেবে নিয়ে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করেনি। ফলে আমরা শুরু থেকেই সংবিধান সংস্কার পরিষদের প্রস্তাব করে এলেও আগামী সংসদের নাম যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হতে পারেনি। এ বিষয়েও রাজনৈতিক ঐক্য ও সমঝোতার পথ অনুসরণ করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী দলগুলোর মধ্যকার ঐক্য এই গণ–অভ্যুত্থানের ও ঐকমত্য প্রক্রিয়ার ভিত্তি। সেই ঐক্যবদ্ধতার ভিত্তিতেই জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সনদ বাস্তবায়নে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। আর এই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের পথরেখা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বারবার বলেছি।’

দুই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দেখে মনে হচ্ছে, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। কোনো বিশেষ পক্ষকে খুশি করতে জাতীয় ঐকমত্যকে হুমকির মুখে ফেলছে বলেও জনগণের ভেতরে ধারণা তৈরি হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতি আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জাতীয় স্বার্থের জন্য উদ্বেগজনক। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, অবিলম্বে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করুন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক জ ল ই সনদ ভ ন নমত জনগণ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা ঐক্য হতে পারে না। তাহলে এই কমিশন কেন করা হয়েছিল? তিনি বলবেন, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা। আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন মির্জা ফখরুল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংবিধান সংস্কারে জগাখিচুড়ির গণভোট
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল
  • দলগুলোর মতপার্থক্য সামনে এল আরও তীব্রভাবে
  • সংস্কার প্রতিবেদন সহজবোধ্য করে জনগণের কাছে তুলে ধরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
  • জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা: কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল
  • জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার করতে হবে: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে, জানুন ১০ প্রশ্নের উত্তরে
  • সংসদ ২৭০ দিনে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে
  • সংসদ ২৭০ দিনে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তাবগুলো সংবিধানে যুক্ত হবে: আলী রীয়াজ