বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য বেছে নিচ্ছেন ‘সূর্যোদয়ের দেশ’ খ্যাত জাপানকে। উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণাবান্ধব পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে জাপান এখন বিদেশে পড়াশোনার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য।

উচ্চশিক্ষা-পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেইসেসের ম্যানেজিং পার্টনার ও চিফ কাউন্সেলর রুহাম মনজুর বলেন, জাপানের শিক্ষা-সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক নয়, পেশাগতভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে তাঁরা গবেষণা, ইন্টার্নশিপ ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারেন।

জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন গবেষণায় ব্যস্ত থাকেন আর শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতা পরায়ণ।

আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে২৬ অক্টোবর ২০২৫

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়াশোনার সুযোগ

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী জাপানে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে আসেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর সরাসরি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা জাপানের দূতাবাসের মাধ্যমে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ আর রয়েছে বিভিন্ন বৃত্তির সুযোগও।

জনপ্রিয় বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা

জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির পরিমাণ বেশি। সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘এমইএক্সটি স্কলারশিপ’ শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ভর্তি ফি, এমনকি আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া পর্যন্ত বহন করে। এ ছাড়া রয়েছে এডিবি-জাপান স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ও জাপান ওয়ার্ল্ড ব্যাংক স্কলারশিপ, যেখানে টিউশন ফি ছাড়াও জীবনযাপন, বই, ভ্রমণ এবং চিকিৎসাবিমার খরচ অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেলোশিপ ও পারফরম্যান্স স্কলারশিপও পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অফিসে ই–মেইল করে এসব সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।

আরও পড়ুননিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের সুযোগ এবং সম্ভাবনা কেমন২২ ঘণ্টা আগে

বৃত্তির যোগ্যতা ও প্রস্তুতি

জাপানের শিক্ষার পরিবেশ প্রতিযোগিতামূলক ও গবেষণামুখী। তাই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হলে ভালো একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি গবেষণার আগ্রহ, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমী মানসিকতা থাকতে হয়। আবেদনকারীদের স্টেট অব পারপাজ গবেষণার পরিকল্পনা এবং সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে হয়। এই বিষয়গুলোই বৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জীবনযাপন ও খরচ

জাপানের জীবনযাপন বেশ উন্নত ও পরিশৃঙ্খল। রাজধানী টোকিওসহ বড় শহরগুলোয় নাগরিক সুবিধা অনেক বেশি। বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে বছরে গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার মার্কিন ডলার টিউশন ফি লাগে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ কম।

আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স থেকে পিএইচডি ও রিসার্চের সাতসতেরো২৭ অক্টোবর ২০২৫

ভাষা শেখা ও যোগাযোগদক্ষতা

জাপানি ভাষা জানলে পড়াশোনা ও কাজ—দুটিই সহজ হয়। অনলাইনে ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে জাপানি ভাষা শেখার অনেক কোর্স পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জেএলপিটি (জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজে প্রফিসিয়েন্সি টেস্ট) দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ

জাপানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্টটাইম কাজ করতে পারেন। গবেষণাগার, রেস্টুরেন্ট, সুপারশপ বা টিউটরিংয়ের মতো চাকরিতে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। সময়ানুবর্তিতা ও পেশাদার আচরণ জাপানের কর্মসংস্কৃতির মূল ভিত্তি।

আরও পড়ুনহার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, মূল্য হারাতে বসেছে ১০ ডিগ্রি২৮ অক্টোবর ২০২৫

উচ্চশিক্ষা শেষে ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা

উচ্চশিক্ষা শেষে জাপানে কাজের বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভালো অবস্থানে আছেন। অনেকেই সনি, টয়োটা ও হিটাচির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। জাপান থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় সরাসরি চাকরির সুযোগও তৈরি হয়।

জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শুধু একটি ডিগ্রির জন্যই নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, গবেষণার গভীরতা এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ। সঠিক সময়ের প্রস্তুতি, বৃত্তির সুযোগ গ্রহণ এবং আত্মবিশ্বাসী আবেদন আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন২৮ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কাজের সুযোগ২৮ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আমার যদি কিছু হয়, তার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেবে, প্রশ্ন শ্রীলেখার

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার আলোচিত অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। কালীপূজার আগের দিন আবাসিক এলাকায় অবৈধ বাজি বিক্রি বন্ধ করার পর এ অভিনেত্রীর আবাসনের ফেসিলিটি ম্যানেজার তাকে একাধিকবার হুমকি দিয়েছেন। 

ঝামেলার শুরু ১৯ অক্টোবর থেকে। কালীপূজার আগের দিন বহুতল আবাসনের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বাজি বিক্রি করতে দেখেন শ্রীলেখা মিত্র। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানান তিনি। পুলিশেও খবর দেন। অভিযোগ পেয়ে আবাসনে পুলিশ এসেছিল। তারপর থেকেই যত সমস্যার সূত্রপাত। নিজের ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ধার্য খরচ দেওয়ার পরও তাকে কোনো ধরনের নিরাপত্তা, সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ শ্রীলেখার। 

আরো পড়ুন:

আমি অর্ধেক মরে বেঁচে আছি: শ্রীলেখা

ফেরদৌসের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, মুখ খুললেন শ্রীলেখা

আবাসিক ভবনটির প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে প্রতিদিন সকালে আবর্জনা নিয়ে যান সংশ্লিষ্ট পৌরকর্মী। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে শ্রীলেখার ফ্ল্যাটের আবর্জনা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ অভিনেত্রীর। শ্রীলেখা বলেন—“আমি বাজি বিক্রি বন্ধ করেছিলাম বলেই আজকের এই পরিস্থিতি।”  

এ পরিস্থিতিতে শ্রীলেখা তার ফ্ল্যাটের সামনে সিসিটিভি লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাতেও বাধা দেন ফেসিলিটি ম্যানেজার। সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও শ্রীলেখা তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, সেখানে অভিনেত্রীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। শ্রীলেখা বলেন, “আমার ফ্ল্যাটের সামনে সিসিটিভি লাগিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই এটা লাগাতে দেবে না। যেসব লোক আমার সিসিটিভি লাগিয়েছে, তাদেরও হুমকি দিয়েছে। তারা কীভাবে ভবন থেকে বের হয়ে যায়, সেটা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।”  

খানিকটা ব্যাখ্যা করে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “সিসিটিভি লাগানোর কারণে আবাসনের ফেসিলিটি ম্যানেজার বলেছেন, ‘আমাকে আর কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হবে না।’ বাজি বিক্রি নিয়ে প্রতিবাদ করায় সেদিনও তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। কোথা থেকে এত সাহস পান উনি? আমার সব জানা আছে।” 

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “অন্যায় দেখার পরও যদি চোখ বন্ধ করে থাকতাম, শাসক দলের লাইনে থাকতাম তাহলে এত এত সমস্যার মুখোমুখি আমাকে হতে হতো না। অন্যায় দেখলে কথা বলার বদভ্যাস আছে, তারই ভুক্তভোগী আমি। হুমকি, এই অসভ্য আচরণ প্রত্যেক দিন চলছে, এরপর যদি আমার কিছু হয়, তাহলে তার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেবে কি? আমি তো আমার নিজের নিরাপত্তাটা দেখব!”      

আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “আমি পুলিশ, করপোরেশনসহ নানা জায়গায় জানিয়েছি। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। আমি শিল্পী মানুষ, এ রকম অশান্তি করার কোনো ইচ্ছা নেই। এর ফলে আমার শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একজন মহিলা একা থাকে বলে হেনস্তা করা সহজ, তাই না!”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ