৬ শর্তে ইবি মেগাপ্রকল্পের কাজ সম্পন্নের নির্দেশ
Published: 29th, January 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ছয় শর্তে দ্বিতীয় দফা মেয়াদ বাড়িয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়নাধীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ৪ বছর মেয়াদী মেগাপ্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ বছর করা হয়। কিন্তু ৪০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এজন্য দ্বিতীয় দফায় ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করে ২০১৮ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধিত এ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আর বৃদ্ধি করা হবে নাসহ ছয় শর্তে এ প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয় কমিশন। এছাড়া এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসব শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-
(ক) এ প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হবে না
(খ) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পের অনুকূলে বকেয়া অর্থ অতি দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা করতে হবে, বর্ধিত মেয়াদ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে ও নির্মাণ কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে সুষ্ঠুভাবে তদারকি করতে হবে।
(গ) প্রকল্প পরিচালক অনুমোদিত আরডিপিপি অনুযায়ী নির্মাণ কাজ পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী স্টিল সাটারিং, স্যানিটারি সামগ্রী, বৈদ্যুতিক তার ও অন্যান্য সামগ্রী, টাইলস ইত্যাদির গুণগতমান যাচাই করতে হবে। নির্মাণ সাইটে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি, মালামাল ও শ্রমিকের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনগাফিলতি দেখা দিলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।
(ঘ) প্রস্তাবিত বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পের সব প্যাকেজের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নেবেন।
(ঙ) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য প্রকল্প থেকে তিনটি দশতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেগুলো যাতে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে না থাকে, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাস্তবতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভবন নির্মাণ করা উচিত হবে। এতে সময় ও সরকারী অর্থের অপব্যয় রোধ করা সম্ভব হবে।
(চ) ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার অনতিবিলম্বে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী আসবাবপত্র, ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, ক্রীড়া সামগ্রী, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং সনাক্ত করার জন্য অমোচনীয় কালি দিয়ে প্রকল্পের নামকরণ করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় ক্রয় করা যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের ইনভেন্টটরি প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২৭তম সভায় এ মেগাপ্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পের অধীনে নয়টি ১০তলা ভবন নির্মাণ ও ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ বেশকিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা রাখা হয়। নয়টি ১০তলা ভবনের মধ্যে পাঁচটি আবাসিক হল, দুটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার এবং একটি করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন রয়েছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড.
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের পর আবারও কাজ শুরু হয়। তবে কিছুদিন কাজ চলার পর নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার পর কয়েক মাস বিরতি শেষে কাজে ফেরেন ঠিকাদাররা।
মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় সর্বশেষ ৫ মাস ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল দিতে না পারায় ধীর গতিতে চলে নির্মাণ কাজ। ফলে পরিকল্পনা মাফিক কাজের অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পটি শেষ করতে বর্তমানে পুরোদমে কাজ চললেও আরো ২ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল দপ্তর। ফলে সময় বৃদ্ধির জন্য একনেকে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রদবদল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সময়মতো কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন প্রশাসনের অবহেলা ও অদূরদর্শিতাকে দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, “প্রশাসনিক রদবদল, করোনা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। যেহেতু পরিকল্পনা কমিশন থেকে দেড় বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কারণ এরপর আর হয়তো মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। তখন আমরা, বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।”
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. নওয়াব আলী বলেন, “আমরা ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। আবেদন প্রক্রিয়াধীন ছিল। ইউজিসি থেকে একটি টিম সরেজমিনে দেখে গেছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন গৃহীত হয়েছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভবন ন র ম ণ ন শ চ ত করত প রকল প র ব যবস থ শ ষ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
লবণশ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে
দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৫৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক সরাসরি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আরও ৫ লাখের বেশি শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে লবণ খাত দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘দেশে লবণ খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পরামর্শ সভা’ শিরোনামে সভাটির আয়োজন করে আইজেক প্রকল্প। আইজেক প্রকল্পের পূর্ণ নাম হচ্ছে ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার। কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ইনোভিশন কনসালটিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৮৫ জন শ্রমিক ও কৃষককে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪৪ জনকে চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে ২টি হাসপাতাল ও ৬টি লবণ কারখানার সঙ্গে আইজেক প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান লবণকে ‘সাদা সোনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ক্ষুদ্রঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে লবণ খাতকে শক্তিশালী করব।’ তিনি লবণশ্রমিকদের শ্রম অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় লবণচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অনিশ্চিত আয়ে ভুগি। আমাদের নিয়মিত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শহীদ হাসান ফেরদৌস। আইএলও কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান রুচিকা বেহল লবণ চাষ ও আইজেক প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ, বিসিকের লবণ বিভাগের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভিশনের পোর্টফোলিও পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবসায় কৌশল ও ইএসজি প্রধান ফিরোজ আলম তালুকদার, এসিআই লিমিটেডের ব্যবসায় ব্যবস্থাপক জিসান রহমান, প্রিটি কম্পোজিট টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব কামরান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর, আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞ জনসন, আইএলওর ইআইএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাদ গিলানি।
বক্তারা বলেন, লবণের বিশুদ্ধতা বাড়ানো এবং লবণভিত্তিক শিল্পের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। কাঁচা লবণের বিশুদ্ধতা ও আর্দ্রতা সমস্যা দূর করতে কাঠামোগত অদক্ষতার সমাধান প্রয়োজন।