বক যেভাবে হয়ে ওঠে কৃষকের পরম বন্ধু
Published: 7th, March 2025 GMT
বোরো ধান আবাদের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকেরা। পোকামাকড় খেতে এসব জমিতে জড়ো হচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক। ফসলের মাঠে বকের ওড়াউড়ি দেখতে ভালো লাগে। শুধু তা-ই নয়, পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে কৃষকের উপকার করে থাকে ‘কৃষকবন্ধু’ বক।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। শর্ষে ঘরে তোলার পর বোরো ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকেরা। এসব জমি ঘিরে আনাগোনা বেড়েছে অসংখ্য সাদা বকের। ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষের সময় জমিতে থাকা কীটপতঙ্গ বের হয়ে আসে। এসব কীটপতঙ্গ খেতেই জড়ো হয় ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, জমি চাষের সময় প্রতিদিন সকাল হলেই কোথা থেকে যেন ছুটে আসে এসব বক। একসঙ্গে ফসলের মাঠে এত বকের উপস্থিতি বছরের অন্য সময় দেখা যায় না। দল বেঁধে এসব বক খেতের পোকামাকড় খেয়ে থাকে। বকগুলোর ওড়াউড়ি বেশ উপভোগ করেন তাঁরা। এ দৃশ্য দেখে তাঁদের মন ছুঁয়ে যায়।
ফসলের মাঠে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় থাকে। এসব খেতেই সাদা বকগুলো জমিতে জড়ো হয়। এতে ফসলের মাঠের ক্ষতিকর পোকামাকড় নিধন হয়। কৃষকদের উপকার হয়।ইমতিয়াজ আলম, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তামঙ্গল ও বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময় চলে গেলেও মানিকগঞ্জে সকালে এখনো কিছুটা শীতের আবহ রয়ে গেছে। জেলা সদরের দিঘি, ছুটিভাটবাউর, কয়ড়া, পিতলাই, ভাটবাউরসহ বিভিন্ন এলাকায় বোরো আবাদ করতে জমি চাষ করছেন কৃষকেরা। এর পাশাপাশি বীজতলায় বোরোর চারা তুলতে ও চারা রোপণে কৃষকদের সময় ব্যস্ততায় যাচ্ছে। ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষের সময় জমিতে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় বের হয়ে আসে। তখনই পোকামাকড় খেতে জমিতে এবং এর আশপাশে অসংখ্য সাদা বকের ঝাঁক এদিক-সেদিক ওড়াউড়ি করে।
মঙ্গলবার বিকেলে দিঘি গ্রামে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করছিলেন কৃষক মহির আলী (৫০)। কথা হলে তিনি বলেন, ‘হাল বাইলে খেত থেকে পোকা উঠে। এই পোকা খাইতে বক আইস্যা ভিড় করে। যখন হাল বাই, তখন বক পিছে পিছে ঘুরে। দেখতে ভালোই লাগে।’ তাঁর কথা, বক শিকার করা ঠিক নয়। বক পোকামাকড় খাওয়ায় ফসল আবাদে কীটনাশক কম লাগে। পোকামাকড় খেয়ে বক কৃষকের উপকার করে।
বকগুলোর ওড়াউড়ি বেশ উপভোগ করেন কৃষকেরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পোকা পাচারের ঘটনা বাড়ছে
সারা বিশ্বে নানা ধরনের প্রাণী পাচারের ঘটনা দেখা যায়। বিশালাকার গন্ডার থেকে শুরু করে দারুণ দারুণ সব আকর্ষণীয় পাখি পাচার হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতা থাকলেও পোকা বা কীটপতঙ্গ চোরাচালানের ঘটনা বাড়ছে। এ বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে শুল্ক কর্মকর্তারা একটি স্যুটকেস খুলে সারি সারি ছোট টেস্ট টিউব খুঁজে পান। প্রতিটি টিউবে একটি করে জীবন্ত রানি পিঁপড়া দেখা যায়। সেই ঘটনা একটি বৈশ্বিক পোকা পাচার চক্রকে উন্মোচন করে।
খুব সাধারণভাবে পোকা চোরাচালানের সংবাদ শোনা যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের চোরাচালানের পরিধি বেড়েছে। যদিও এর পরিণতি ভয়ানক। ছোট ছোট ব্যাগে করেই হচ্ছে পোকা পাচার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বৃহৎ ও আকর্ষণীয় প্রাণী প্রজাতির পাচারকে গুরুত্ব দিলেও পোকা চোরাচালান নজরে আসছে না। বিজ্ঞানীরা এই পোকা চোরাচালানকে সবুজ অপরাধ হিসেবে দেখছেন। এই কাজ জীবন্ত সিস্টেমের ক্ষতি করছে।
বিজ্ঞানী অ্যাংগাস নার্স ও এলিয়ট ডোরনবস বলেন, এখনকার সময় অ্যানথ্রোপোসিন যুগ, এই সময় পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। যদিও পৃথক প্রজাতির সঠিক হ্রাস গণনা করা কঠিন। প্রতিবছর প্রায় ১-২ শতাংশ হারে পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের নিউ হ্যাম্পশায়ারে গুবরে পোকা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পৃথক প্রজাপতি হ্রাস হয়েছে বছরে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। বাস্তবে পোকামাকড় প্রজাতির হ্রাসের সঠিক হার জানা বেশ কঠিন।
সাধারণভাবে বলা যায়, পোকা বা কীটপতঙ্গ পৃথিবীর মৌলিক ব্যবস্থাগুলোর একটি বিশাল অংশ পরিচালনা করে। আমাদের খাবার টেবিলে আসা অনেক ফসলের পরাগায়ণ করে, বর্জ্য ভেঙে দেয় এবং পুষ্টি উপাদানকে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। তারা পাখি, মাছ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাদ্য সরবরাহ করে। যখন পোকার সংখ্যা কমে যায় বা বিরল প্রজাতি অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন খাদ্যশৃঙ্খলে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ কেবল লোমশ বা দাঁতওয়ালা প্রাণীদের প্রতি আগ্রহ দেখায়। হাতি, গন্ডার ও বাঘ রক্ষায় বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। গুবরে পোকা, প্রজাপতি, পিঁপড়া বা স্টিক ইনসেক্টের প্রতি মানুষ তেমন মনোযোগ দেয় না। এসব পাচার হচ্ছে নানাভাবে। বার্ডউইং বাটারফ্লাই বা রানি পিঁপড়ার মতো পোকারা ছোট ও নীরব হওয়ায় জীবন্ত চালান ডাকযোগেই পাঠাতে দেখা যায়। একটি নরম মোড়কের খামে অনেক জীবন্ত পোকা পাচার হতে দেখা যায়। অনেক অনলাইন মাধ্যমে এসব পাচার হওয়া পোকা কেনাবেচা হতে দেখা যায়। বিক্রেতারা সহজে পরিচয় গোপন করতে পারেন এসব মাধ্যমে। পাচার হওয়া পোকা নিয়ে একটি গবেষণা এমডিপিআইতে প্রকাশিত হয়েছে।
পোকা পাচারের বিরুদ্ধে তেমন শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ নেই বলা যায়। আন্তসীমান্ত বন্য প্রাণী বাণিজ্য পরিচালনা করার প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তি সিআইটিইএস কিছু পোকা হিসেবে বার্ডউইং প্রজাপতি রক্ষা করতে পারে। অন্য অনেক পোকা এ তালিকায় নেই। পোকা চোরাচালানকে ছোট প্রাণী বলে সামান্য মনে করা একটি ব্যয়বহুল ভুল। পোকানির্ভর বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ছে।
সূত্র: আর্থ