মন ভালো করার জাপানি উপায় ‘রুইকাতসু’
Published: 18th, April 2025 GMT
আত্মনিয়ন্ত্রণে জাপানিরা নানা রকম পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। সেই সব পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অধুনা বিশ্ব-বাস্তবতায় দেখা যায়, জটিল জীবন যাপন পদ্ধতি আমাদের মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই নেতিবাচকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জাপানিরা একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই পদ্ধতির নাম রুইকাতসু।
আমরা সাধারণত কাউকে কান্না করতে দেখলে বলি, কান্না থামাও, দুঃখ করো না, মেনে নাও, এটাই বাস্তবতা-থেমে যাও। কিন্তু জাপানিরা বলছে, মন খারাপ হয়েছে, কাঁদো। কাঁদলে মন ভালো হয়ে যায়। তাদের ভাষায়, কাঁদো এবং কান্নার অভ্যাস করো। তবে কান্নার উদ্দেশ্য যেন হয়, কষ্ট কমিয়ে নিজেকে মুক্তি দেওয়া, মনকে শক্ত করা, এবং নতুন শক্তি খুঁজে পাওয়া।
তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা জাপানে মানুষ এক সময় আবেগ প্রকাশের সঠিক উপায় হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিল। এরপর তারা কান্নাকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জীবনে অন্যান্য প্রয়োজনীয় রীতির মতোই প্রাধান্য দিতে থাকেন।
আরো পড়ুন:
‘ডাবল ক্লিনজিং’ ত্বকের জন্য ভালো, নাকি খারাপ
মানসিক চাপ কমাতে তিন মাসের গাইডলাইন
এই ভাবনা জাপানিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন হিডেফুমি ইওশিডা। তিনি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। এই শিক্ষক মনে করেন, কান্না মানুষের দুর্বলতা নয়। কান্না হলো মানুষের শক্তি। এটি আবেগের প্রকাশের অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। যদি কখনও অনেক ক্ষণ ধরে প্রাণভরে কান্না করা যায় তাহলে মন হালকা হয়ে যায়, তবে তিনি এর মর্ম উপলব্ধি করবেন।
মানুষের কান্নার অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা দেওয়ার জন্য হিডেফুমি ২০১৩ সাল থেকে কান্নার কর্মশালা শুরু করেন। মানুষ যাতে ইমোশনাল হয়ে পড়ে এবং কাঁদে এজন্য তিনি সিনেমা দেখিয়ে কিংবা পুরনো চিঠি পড়তে দিয়ে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। আবার কখনও এমন গল্প শোনাতেন, যাতে মানুষ কাঁদে। দেখা যেত সত্যি মানুষ মানসিক ভাবে অনেক হালকা বোধ করে বেরিয়ে আসছেন।
মনোবিদেরা বলছেন, কান্না মানুষের শরীর ও মন ভালো রাখে। মানুষ নিজেকে চাপমুক্ত মনে করতে পারে। কান্না আবেগ থেকে আসে। কান্নার সময চোখের জলে থাকে কর্টিসল নামের হরমোন ক্ষরণ হয়। যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। স্ট্রেস হরমোন শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে তা মানসিক ভাবেও ভাল থাকতে সাহায্য করে।
জাপানের তোহো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, কাঁদলে মানসিক উদ্বেগ কমে, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হয়, এমনকি কাঁদলে ঘুমও ভাল হয়।
রুইকাতসু বা কান্না মূলত ব্যক্তিকে সুখী করার একটি পদ্ধতি।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।