আত্মনিয়ন্ত্রণে জাপানিরা নানা রকম পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। সেই সব পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অধুনা বিশ্ব-বাস্তবতায় দেখা যায়, জটিল জীবন যাপন পদ্ধতি আমাদের মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই নেতিবাচকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জাপানিরা একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই পদ্ধতির নাম রুইকাতসু। 

আমরা সাধারণত কাউকে কান্না করতে দেখলে বলি, কান্না থামাও, দুঃখ করো না, মেনে নাও, এটাই বাস্তবতা-থেমে যাও। কিন্তু জাপানিরা বলছে, মন খারাপ হয়েছে, কাঁদো। কাঁদলে মন ভালো হয়ে যায়। তাদের ভাষায়, কাঁদো এবং কান্নার অভ্যাস করো। তবে কান্নার উদ্দেশ্য যেন হয়, কষ্ট কমিয়ে নিজেকে মুক্তি দেওয়া, মনকে শক্ত করা, এবং নতুন শক্তি খুঁজে পাওয়া।

তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা জাপানে মানুষ এক সময় আবেগ প্রকাশের সঠিক উপায় হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিল। এরপর তারা কান্নাকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জীবনে অন্যান্য প্রয়োজনীয় রীতির মতোই প্রাধান্য দিতে থাকেন।

আরো পড়ুন:

‘ডাবল ক্লিনজিং’ ত্বকের জন্য ভালো, নাকি খারাপ

মানসিক চাপ কমাতে তিন মাসের গাইডলাইন

এই ভাবনা জাপানিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন হিডেফুমি ইওশিডা। তিনি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। এই শিক্ষক মনে করেন, কান্না মানুষের দুর্বলতা নয়। কান্না হলো মানুষের শক্তি। এটি আবেগের প্রকাশের অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। যদি কখনও অনেক ক্ষণ ধরে প্রাণভরে কান্না করা যায় তাহলে মন হালকা হয়ে যায়, তবে তিনি এর মর্ম উপলব্ধি করবেন।

মানুষের কান্নার অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা দেওয়ার জন্য হিডেফুমি ২০১৩ সাল থেকে কান্নার কর্মশালা শুরু করেন। মানুষ যাতে ইমোশনাল হয়ে পড়ে এবং কাঁদে এজন্য তিনি সিনেমা দেখিয়ে কিংবা পুরনো চিঠি পড়তে দিয়ে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। আবার কখনও এমন গল্প শোনাতেন, যাতে মানুষ কাঁদে। দেখা যেত সত্যি মানুষ মানসিক ভাবে অনেক হালকা বোধ করে বেরিয়ে আসছেন।

মনোবিদেরা বলছেন, কান্না মানুষের শরীর ও মন ভালো রাখে। মানুষ নিজেকে চাপমুক্ত মনে করতে পারে। কান্না আবেগ থেকে আসে। কান্নার সময চোখের জলে থাকে কর্টিসল নামের হরমোন ক্ষরণ হয়। যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। স্ট্রেস হরমোন শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে তা মানসিক ভাবেও ভাল থাকতে সাহায্য করে।
জাপানের তোহো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, কাঁদলে মানসিক উদ্বেগ কমে, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হয়, এমনকি কাঁদলে ঘুমও ভাল হয়।

রুইকাতসু বা কান্না মূলত ব্যক্তিকে সুখী করার একটি পদ্ধতি।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি