নদীতে বিলীন হয়েছে গ্রামীণ সড়ক। এতে ১০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়ার ডুমরিয়া ইউনিয়নে ডুমরিয়া-সড়াবাড়ী সড়কের চিতলিয়া নামক স্থানে গত বুধবার দুপুরে ফাটল ধরে। সড়কটির ২৫০ ফুট শৈলদহ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ডুমরিয়ার চিতলিয়া গ্রামের সুধীর বিশ্বাস ও লতা বেগম বলেন, বুধবার থেকে এ সড়ক দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ। ডুমরিয়া, ভৈরবনগর, তারইল, জামাইবাজার, মামারবাজার, চিতলিয়া, সড়াবাড়ী, পাকুরতিয়াসহ ১০ গ্রামের মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না। তাদের বাঁশবাড়িয়া হয়ে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।
একই গ্রামের রহমত মল্লিক বলেন, শৈলদহ নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে গত ৩০ ডিসেম্বর এ সড়কের সেতু ভেঙে যায়। এর চার মাস পর সড়কটি ভেঙে পড়ল। এতে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পরিবারকে ইউএনও খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা করেছেন। ভাঙনকবলিত এলাকার অন্তত ২৫টি বসতবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়নের পানি সরবরাহ লাইন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই দ্রুত নদীভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে চিতলিয়া গ্রামের মানুষ সহায়সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। মানচিত্র থেকে চিতলিয়া গ্রাম হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
চিতলিয়া গ্রামের অমর বিশ্বাস বলেন, এই সড়ক দিয়ে তারা ডুমরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজারে যাতায়াত করেন। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় তারা সহজে যাতায়াত করতে পারছেন না।
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মঈনুল হক বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লতা বেগমের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে এ পরিবারকে একটি বসতঘর করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ডুমরিয়া ও পাটগাতী ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে সড়কটিও দ্রুত সংস্কার করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ১০ গ র ম র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক
সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে।
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া।
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়।
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’