আসমার মণিপুরি তাঁত থামিয়ে দিল অভাবের চোখরাঙানি
Published: 6th, May 2025 GMT
অভাব-অনটনের সংসার। যেটুকু আয়, তাতে সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদাই পূরণ হয় না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানো, সে তো আরও কঠিন। সে এক অনিশ্চয়তার দিন, দিশাহারা কাল। কী করলে এই অভাব-অনটন থেকে মুক্তি মেলে, তার কোনো পথ জানা নেই। ওই দুর্দিনে হঠাৎ মণিপুরি তাঁত, তাঁতের শাড়ি মনের মধ্যে একটুকরা আলোর ঝলকানি হয়ে ধরা দেয়।
সম্ভাবনার এই ঝলকটুকুকেই আঁকড়ে ধরেন একজন আসমা আক্তার (৫০)। একজনের কাছে শিখলেন মণিপুরি তাঁতে শাড়ি বোনার কাজ। তারপর নিজেই বাড়িতে তাঁত বসালেন, অন্যদেরও শেখালেন তাঁতে শাড়ি বোনা। এই শাড়ি বানিয়ে, বিক্রি করে, সে আয়ে এক মেয়ে ও এক ছেলেকে স্নাতক পাস করিয়েছেন। এক ছেলে পড়ছেন মেডিকেলে। বাড়িঘরের সংস্কার করেছেন। বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে এখন তাঁর ১৮টি তাঁত। সংসারে এখন আর অভাবের চোখরাঙানি নেই। প্রতি মাসে আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সাধারণ গৃহবধূ থেকে এক নীরব উদ্যোক্তা তিনি। চুপি চুপি সংসারের হাল ধরলেন দুই হাতে।
আসমা আক্তারের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগে। তাঁর স্বামীর নাম জব্বার মিয়া।
সম্প্রতি আদমপুরের মধ্যভাগে আসমা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির মধ্যে আধা পাকা একটি দালান, যার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দালানের দেয়ালে আস্তর পড়েনি। এই দালানঘরটিতেই আসমা আক্তারের পরিবারের বসবাস। এই দালানের বিভিন্ন কক্ষে বসানো হয়েছে মণিপুরি তাঁত। ঘরের তিনটি কক্ষের একটিতে দুটি তাঁত বসানো আছে। আরও তিনটি কক্ষে একটি করে তাঁত আছে।
দুটি তাঁতে তখন শাড়ি বোনার কাজ করছিলেন দুজন নারী। কক্ষের মেঝে পাকা করার জন্য একটি তাঁত খুলে রাখা হয়েছে। মেঝে পাকা হয়ে গেলেই তাঁতটি বসানো হবে। এতটা পথ পার হওয়া, এতটা আয়োজন, অত সহজ ছিল না আসমা আক্তারের কাছে। নিজে যেমন বাধা ডিঙিয়ে পায়ে–পায়ে ছুটে চলেছেন, তেমনি স্বামী জব্বার মিয়াও তাঁকে পুরো সমর্থন দিয়ে গেছেন, পাশে পাশে থেকেছেন।
আসমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, স্বামী জব্বার মিয়ার সামান্য কৃষিখেত, ছোটখাটো ব্যবসা দিয়ে সংসারের চাহিদা পূরণ করা, স্বচ্ছন্দে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করানো সম্ভব হচ্ছিল না। টানাপোড়েন বারো মাসই পায়ে–পায়ে ঘুরেছে। তখন নিজে কিছু করতে চাইলেন। এটা প্রায় ১০ বছর আগের ঘটনা। অনেকের মুখে মণিপুরি তাঁতের কথা শুনে আসছিলেন তিনি। কিন্তু এ সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। কোথায় তাঁত আছে, কীভাবে তাঁতে কাজ করতে হয়—এসবের কিছুই জানতেন না। একদিন কাছের গ্রাম বনগাঁওয়ে ছুটে যান তিনি। বনগাঁওয়ে বিলকিস বেগম নামের একজনের কাছে তাঁতের কাজ শিখে নিলেন। ছয় হাজার টাকা দিয়ে একটি মণিপুরি তাঁত কিনে ঘরে বসালেন।
আসমা আক্তার বলেন, ‘নিজের তাঁতে নিজে কাপড় বানাই। তারপর সেই কাপড় বেচতাম। সপ্তাহে দুইটা কাপড় বানাইতে পারতাম (তৈরি করতে পারতাম)।’ তিনি বলেন, তিনি যখন বাড়িতে মণিপুরি তাঁত বসালেন, তখন আশপাশের পরিচিত-অপরিচিত অনেক নারী তাঁর কাছে আসেন শাড়ি বোনা শিখতে। আয় থেকে একটা একটা করে তাঁতের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। এক এক করে পাঁচটি তাঁত বসালেন তিনি। তাঁর পরিচালনায় ১০ জন নারী তাঁতে কাজ করেন। পাশাপাশি আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। তাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাতটি শাড়ি তৈরি করতে পারতেন। স্থানীয় আদমপুর বাজার থেকে সুতা কিনে আনেন। উৎপাদিত শাড়ি বাড়ি থেকেই পাইকারেরা এসে নিয়ে যান। এখন তাঁর তাঁতের সংখ্যা ১৮।
স্বামী জব্বার মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁতই আমরার মূল পুঁজি। মূল খুঁটি। আমি দরকারমতো পরামর্শ দিছি, তাইন অইলা (তিনিই হলেন) উদ্যোক্তা। সংসারও তান (তাঁর) অবদানের শেষ নাই। সংসার যতটা চলের, ১০০ ভাগ অবদান তাইনের।’
কমলগঞ্জের বাসিন্দা, সংগঠক ও লোক গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, বসতভিটা ছাড়া তাঁদের তেমন কোনো সম্পদ ছিল না। সম্পূর্ণ মণিপুরি তাঁতের ওপর নির্ভর করে একজন নারী ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করিয়েছেন। সংসারের হাল ধরেছেন। কোনো নারীর উদ্যোগে সংসার স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এলাকায় এ রকম উদাহরণ আর জানা নেই। এ রকম উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করা, অনুপ্রাণিত করা দরকার। আসমার এই যে এগিয়ে চলার পথ, এটাই হচ্ছে প্রকৃত জীবনসংগ্রাম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মণ প র
এছাড়াও পড়ুন:
কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ
ইসলামে চারজন নারীকে নিখুঁত নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়: বিবি মরিয়ম, আসিয়া, খাদিজা (রা.) এবং ফাতিমা (রা.)। ফাতিমা ছিলেন নবীজির প্রিয় কন্যা। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে তিনি ছিলেন শিশু। ধীরে ধীরে তিনি একজন কন্যা, স্ত্রী ও মা হিসেবে ইসলামের আদর্শ নারীর নিখুঁত উদাহরণ হয়ে আবির্ভূত হন।
নিখুঁত নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.)ফাতিমা (রা.) ইসলামের মহান নারীদের একজন। তিনি তাঁর পিতার নবুওয়তের মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং নারীদের জন্য একটি আদর্শ রোল মডেল। কোরআনে নবী–পরিবারের পবিত্রতা সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করো এবং জাহিলিয়া যুগের মতো প্রদর্শনী করো না...আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে, হে নবীর পরিবার, সব অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক করতে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৩)
শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। শক্তিমান নারীতিনি যখন খুব ছোট, মাত্র পাঁচ বছর বয়স, তখন নবীজি (সা.) মক্কার হিরা গুহায় প্রথম ওহি পান। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। আজকের শিশুদের মতো যারা খেলার মাঠে উৎপীড়ন বা সামাজিক চাপের মুখোমুখি হয়, তেমনই ফাতিমা (রা.) শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কষ্ট সহ্য করেছেন।
কাবায় নবীজি সিজদায় থাকা অবস্থায় একজন বিরোধী তাঁর ওপর ময়লা নিক্ষেপ করেছিল। কান্নাভেজা চোখে ফাতিমা (রা.) তাঁর পিতার শরীর পরিষ্কার করেন। নবীজি তাঁর প্রিয় কন্যাকে শান্ত করেন। (ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নববিয়্যাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ২০০৪, খণ্ড ১, পৃ. ২৮৯)
শৈশবের কঠিনসব অভিজ্ঞতা তাকে নবীজির জীবনে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল।
আরও পড়ুনসাহাবি আবু উবাইদা (রা.)–র উপদেশ০৬ মার্চ ২০২৪বিবাহপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। এই বিবাহ মদিনায় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে বর্ণিত। যদিও ফাতিমা (রা.) তাঁর বোনদের মধ্যে একমাত্র, যিনি কোনো ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহ করেননি। নবীজি (সা.) এই বিবাহের পক্ষে ছিলেন; কারণ, তিনি জানতেন আলী (রা.) একজন ধর্মভীরু মুসলিম এবং তিনি ফাতিমা (রা.)-এর যত্ন নেবেন।
ফাতিমা (রা.) বিবাহিত জীবনে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর স্বামীকে পরিবারের জন্য রিজিক সংগ্রহে সহায়তা করতেন। কঠোর পরিস্থিতিতেও তিনি হাসান ও হুসাইন নামে দুই পুত্রসন্তানের মা হন। তিনি একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা ছিলেন। তিনি জীবনের কষ্ট সহ্য করেছেন কোনো অভিযোগ ছাড়াই। আজকের নারীদের মধ্যে কতজন এমনটি করতে পারেন?
ফাতিমার মতো কন্যা গড়ে তোলাআধুনিক সংস্কৃতি প্রায়ই নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ইসলাম শেখায় যে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। মুসলিম নারীরা দরিদ্রদের সাহায্য করে, স্বামীর বোঝা কমায়, সন্তানদের বিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে, পিতামাতাকে ভালোবাসে এবং তাদের ক্যারিয়ার, শখ বা আগ্রহের মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করে। তাদের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮আজকের মুসলিম কন্যারা কি ফাতিমা (রা.)-এর আচরণ ও ইমানের কাছাকাছি বড় হচ্ছে? তিনি শৈশবে নিপীড়ন ও সহিংসতার মুখোমুখি হয়েও ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী নারী হয়ে উঠেছিলেন।
নবীজি বলেছেন: ‘পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,০৯০)
তিনি আরও বলেছেন, ‘ফাতিমা জান্নাতের নারীদের প্রধান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ৩০ জুলাই ২০২৫তাকে দেওয়া নবীজির উপদেশনবীজি (সা.) বিভিন্ন সময়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা প্রত্যেক আদর্শ বাবার জন্য স্মরণে রাখা কর্তব্য।
১. কষ্টসহিষ্ণু হতে বলা
আলী (রা.) বলেন, একবার নবীজির কাছে এসে ফাতিমা গৃহকর্মের কষ্টের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে তিনি হাতে জাঁতা দিয়ে শস্য পিষতে পিষতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং গৃহকর্মে সাহায্যের জন্য একজন খাদেম চান।
নবীজি তখন তাঁকে কোনো দাস না দিয়ে একটি বিশেষ আমল শিখিয়ে দেন, যা তাঁর জন্য দাসের চেয়েও উত্তম। তিনি বলেন, ‘তোমাকে কি এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যা তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম? যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে। এটি তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,১১৩, ৫,৩৬১, ৬,৩১৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭২৭)
২. আল্লাহভীরু হতে বলা
নবীজি তার প্রিয় কন্যাকে বলেছেন, ‘হে ফাতিমা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নির্দেশ পালন করো।’ এই উপদেশ তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রায়ই বলতেন। এমনকি তিনি বলেছেন, ‘আমি ফাতিমাকে তার প্রভুর (আল্লাহর) বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারব না যদি সে তাকওয়া (খোদাভীতি) অবলম্বন না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,০৬৩)
৩. ধৈর্য ও সন্তুষ্টির উপদেশ
ফাতিমা (রা.)-এর জীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ এবং তিনি প্রায়ই দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করতেন। নবীজি তাঁকে ধৈর্য ধরতে ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে উপদেশ দিয়েছেন। ফাতিমা (রা.) যখন তাঁর দারিদ্র্য ও কষ্টের কথা উল্লেখ করেন, নবীজি তাঁকে বলেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তুমি জান্নাতের নারীদের সরদার হবে?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
নবীজি ফাতিমা (রা.)-কে প্রায়ই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২)
তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন যে জিকির ও নামাজ মানুষের হৃদয়কে শান্তি দেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে তিনি ফাতিমা (রা.)-কে বলেছেন, ‘তুমি নিয়মিত নামাজ আদায় করো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১,৩০৪)
৫. স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন
হজরত ফাতিমা ও আলী (রা.)-এর পারিবারিক জীবন ছিল সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার একটি আদর্শ। একটি বর্ণনায় এসেছে যে নবীজি তাঁদের ঘরে গিয়ে দেখতেন যে তারা একসঙ্গে গৃহকর্ম ভাগ করে নিয়েছেন। ফাতিমা ঘরের কাজ করতেন, আর আলী (রা.) বাইরের কাজে সহায়তা করতেন। নবীজি এই ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন।
তিনি ফাতিমা (রা.)-কে তাঁর স্বামী হজরত আলী (রা.)-এর প্রতি দায়িত্বশীল হতে উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সর্বোত্তম নারী সেই, যে তার স্বামীকে খুশি করে এবং তার আনুগত্য করে যখন সে তাকে ন্যায়সংগত কিছু আদেশ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৫৭; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,২৩১)
ফাতিমা (রা.) ছিলেন একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা, যিনি জীবনের কষ্ট সাহসের সঙ্গে সহ্য করেছেন। তিনি ইসলামের নিখুঁত নারীদের একজন এবং আধুনিক মুসলিম নারীদের জন্য একটি আদর্শ।
আরও পড়ুনজান্নাতে নারীদের সরদার হজরত ফাতিমা (রা.)০৮ জানুয়ারি ২০২৫