‘জনম জনম’, ‘বন্ধুগো শোনো’, ‘যদি আলো আসতো’র পর এবার শ্রোতা প্রশংসা কুড়াচ্ছে প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরের ‘জংলি’ সিনেমার চতুর্থ গান ‘মায়াপাখি’। নন্দিত এই গীতিকার ও সুরকারের এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মাহতিম সাকিব। প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রিন্স মাহমুদের সুরে এটি তার প্রথম গান। সম্প্রতি  টাইগার মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এ আয়োজন নিয়ে প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘বাবাদের কাছে তার সন্তান সবসময়ই ‘মায়াপাখি’। প্রতিটি বাবা তাঁর সন্তানের জন্য  যে কথা বলতে চায়, যে বার্তা রেখে যেতে চায় সেই না বলা কথা, সেই না লেখা বার্তাই ‘মায়াপাখি’’।

স্বল্পভাষী এই সুরকার তার কোনো আয়োজন নিয়েই বেশি কিছু বলেন না। শ্রোতাদের উপরই ছেড়ে দেন তার কাজের বিচার ভার। ‘মায়াপাখি’ নিয়েও স্বল্প কথায় জানিয়ে দিলেন এই সৃষ্টির গভিরতা।

শিল্পী মাহতিম সাকিবের কথায়, প্রিন্ম মাহমুদের অনবদ্য আয়োজনে সংগীত হতে পারা অন্যরকম ভালো লাগার। একই সঙ্গে ‘জংলি’ সিনেমায় নন্দিত এই সুরকারের সুরে সেসব শিল্পী প্লেব্যাক করেছেন, তাদের পাশে নিজের নাম খুঁজে পাওয়া গর্ব ও সন্মানের।

‘জংলি’ সিনেমা মুক্তির তিন সপ্তাহ পেরিয়ে পেরিয়ে গেলেও কেন ‘মায়াপাখি’ গানটি প্রকাশ করা হয়নি, গানটি কেন এতদিন আটকে রাখা হয়েছিল? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। কারণ ‘জংলি’ সিনেমার গানগুলো নিয়ে শুরু থেকেই দর্শক শ্রোতার কৌতুহল ছিল সীমাহীন। একেকটি গানের জন্য প্রহর গুণে গেছেন সংগীতপ্রেমীরা। কারণ একটাই, ‘জংলি’ সিনেমার জন্য একসঙ্গে চারটি ভিন্ন ধাচের গান তৈরি করেছেন প্রিন্স মাহমুদ; যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি।

শ্রোতাদের দাবি, নব্বই দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রিন্স মাহমুদ তার অনবদ্য সৃষ্টির ধারা বজায় রেখে চলেছেন। সে কারণে যখনই শ্রোতা তার নতুন কোনো আয়োজনের খবর পান, তখন থেকেই সেই সৃষ্টি নিয়ে প্রহর গুণে যাওয়া শুরু হয়। তাই অনেকদিন অপেক্ষায় রেখে ‘মায়াপাখি’ শিরোনামের যে গানটি প্রকাশ করা হচ্ছে, তা অনেকের প্রত্যাশা পূরণ করবে। 

প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরের ‘জংলি’ সিনেমার প্রথম গান ‘জনম জনম’ প্রকাশিত হয়েছিল গত ১২ ফেব্রæয়ারি। গানটিতে প্লেব্যাক করেছেন তাহসান খান ও আতিয়া আনিসা। সংগীতায়োজন করেছেন সময়ের আরেক আলোচিত শিল্পী ও সংগীতায়োজন ইমরান মাহমুদুল।

গানটি প্রকাশ কালে তাহসান বলেছিলেন, ‘গানের ভুবনে যারা আমার ভীষণ প্রিয়, প্রিন্স মাহমুদ তাদের একজন। তার লেখা ও সুরের ধরন অনেকের চেয়ে আলাদা, যা সহজেই হৃদয় স্পর্শ করে। এর আগে বিভিন্ন অ্যালবামে তাঁর কথা ও সুরে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে ‘জংলি’ সিনেমার সুবাদে তাঁর সুরে প্রথম প্লেব্যাক করা। তার অ্যালবামের গানগুলো যেখাবে শ্রোতা মনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে, ঠিক একই ভাবে ‘জংলি’ সিনেমার ‘জনম জনম’ গানের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হবে না।’

শিল্পী আতিয়া আনিসা বলেছিলেন, কিংবদন্তিতুল্য সুরকার প্রিন্স মাহমুদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যার কালজয়ী গানগুলো শুনে শুনে বেড়ে ওঠা, সেই প্রিন্স সুরে প্লেব্যাক সুযোগ পাওয়ায় আমি গর্বিত। তার সুরে গাওয়ার পাশাপাশি অনেক কিছু শেখারও সুযোগ হয়েছে। এটি সংগীত ক্যারিয়ারের স্মরণীয় একটি আয়োজন।’ 

একইভাবে সিনেমার দ্বিতীয় গান “বন্ধু গো শোনো’’ নিয়ে শিল্পী ইমরান মাহমুদুলের ভাষ্য, ‘এটি এমন একটি গান, যা শ্রোতাদের মুগ্ধতার আবেশে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে।’ দ্বৈত এ গানের আরেক শিল্পী দিলশাদ নাহার কনা বলেছেন, “সময়কে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো আরকেটি অসম্ভব সুন্দর গান ‘জংলি’ সিনেমার ‘বন্ধুগো শোনো’। যার স্রষ্ঠা প্রিন্স মাহমুদ। তার পক্ষেই এমন অনবদ্য আয়োজন সম্ভব, যা শ্রোতা মনে দীর্ঘদিন অনুরণন তুলে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।’

‘জংলি’র গান নিয়ে প্রশংসা করতে পিছিয়ে যাননি নন্দিত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদ নিজেও। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের এবারই প্রথম তিনি প্রিন্ম মাহমুদের সুরে কোনো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। যার শিরোনাম ‘যদি আলো আসতো’। হাবিবের কথায়, প্রিন্স মাহমুদ একজনই, যার তুলনা চলে শুধু তার সঙ্গেই।”

এদিকে ‘মায়াপাখি’ গানটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রিন্সের ‘জংলি’ সিনেমার সংগীত সফর। এখন তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন নতুন গানের আয়োজনে। এ বছরের বিভিন্ন প্রান্তে তার সুরে গাওয়া বেশ কিছু প্রকাশ পাবে। যেখানে পছন্দের ব্যান্ড তারকাদের গান শোনার সুযোগ থাকছে শ্রোতাদের।

প্রসঙ্গত, গানের পাশাপাশি গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ সিনেমাটিও দর্শকের মাঝে সাড়া ফেলেছে। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মনোযোগ কেড়েছেন সিয়াম আহমেদ, শবনম বুবলী, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, শহীদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অনবদ্য গানে অমর কিশোর কুমার

ভারতীয় বাংলা বা হিন্দি গানের প্রবাদ পুরুষ কিশোর কুমার। তার আসল নাম আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু গায়ক নয়, প্রযোজক, নির্দেশক, সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা হিসেবেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়াতে জন্মগ্রহণ করেন কিশোর কুমার। বেঁচে থাকলে আজ ৯৬ বছর পূর্ণ করতেন বরেণ্য এই শিল্পী।  

কিশোর কুমারের গোটা পরিবারই বিখ্যাত। বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ও মা গৌরি দেবী। এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কিশোর কুমার। তার বড় ভাই অশোক কুমার ছিলেন হিন্দি ও বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা। তার আরেক ভাই অনুপ কুমারও ছিলেন বড় মাপের অভিনেতা। তিনি ৭৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিশোর কুমার যেমন গেয়েছেন হিন্দি সিনেমায়, তেমনি আলোড়ন তুলেছেন বাংলা সিনেমায়ও। ‘এ আমার গুরু দক্ষিণা’, ‘আমার পূজার ফুল’, ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’, ‘কারো কেউ নইকো আমি’, ‘এক পলকের একটু দেখা’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন তিনি। তার গানের মাঝেই অমর হয়ে আছেন এই শিল্পী। 

কিশোর কুমারের গাওয়া আরো কিছু কালজয়ী বাংলা গান রয়েছে। যেমন—‘আকাশ কেন ডাকে’, ‘সে যেন আমার পাশে আজো বসে আছে’, ‘সে তো এলো না’, ‘মোর স্বপনের সাথী তুমি কাছে এসো’, ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’, ‘হাওয়ায় মেঘ সরায়ে’, ‘সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা’, ‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো’, ‘তোমরা যতই আঘাত করো’, ‘ওগো নিরুপমা’, ‘তোমার পড়েছে মনে’, ‘ও পারে থাকব আমি’, ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে’, ‘নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে’, ‘পৃথিবী বদলে গেছে’, ‘কি আশায় বাঁধি খেলাঘর’, ‘চোখের জলের হয়না কোনো রঙ’, ‘এত কাছে দুজনে’, ‘এই যে নদী যায় সাগরে’, ‘আমি যে কে তোমার’, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, ‘আমার পূজার ফুল’, ‘আশা ছিল ভালোবাসা ছিল’, ‘আমারো তো গান ছিল’, ‘আধো আলো ছায়াতে’, ‘আমি দুঃখকে সুখে ভেবে বইতে পারি’ ইত্যাদি। এমন অনেক জনপ্রিয় গান কান পাতলেই শোনা যায় এখনও। 

আরো পড়ুন:

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শাহরুখ-রানী-বিক্রান্ত কত টাকা পাবেন?

সাইয়ারা: ১৭ দিনে আয় ৬৩৫ কোটি টাকা

কিশোর কুমার বাংলা-হিন্দি ছাড়াও মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালায়লাম, ওড়িয়া, এবং উর্দুতেও গান গেয়েছেন। তার ব্যক্তিগত অ্যালবামেও বিভিন্ন ভাষায় গান করেছেন, বিশেষত তার বাংলা গানগুলো সর্বকালের ধ্রুপদী গান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ৮ বার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন। তাকে মধ্যপ্রদেশ সরকার কর্তৃক লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং তার নামে হিন্দি চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য কিশোর কুমার পুরস্কার চালু করা হয়। 

গায়ক হিসেবে তাকে দেখা হলেও হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতাও ছিলেন কিশোর কুমার। তার অভিনীত বিখ্যাত কমেডি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে—‘বাপ রে বাপ’, ‘চলতি কা নাম গাড়ি’, ‘হাফ টিকিট’, ‘পড়োশন’, ‘হাঙ্গামা’, ‘পেয়ার দিওয়ানা’, ‘বাড়তি কা নাম দাড়ি’ ইত্যাদি। এছাড়া তার অভিনীত অন্যান্য জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে—‘নোকরি’, ‘বন্দী’, ‘দূর গগণ কি ছাঁও মে’, ‘দূর কা রাহি’ প্রভৃতি। 

কিশোর কুমার শুরুতে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও গায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পান। কিশোর কুমার নিয়ে রয়েছে অনেক রটনা-ঘটনা। যেমন—অশোক কুমারের কাছে একটি ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন গায়ক-সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণ। সেখানে কিশোর কুমারকে গাইতে শুনে সেদিনই সিনেমায় গান গাওয়ার জন্য রাজি করান। আবার ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে একটি সিনেমায় অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয়ে অস্বীকৃতি জানালে অমিতাভ বচ্চনের জন্য গান না গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কিশোর কুমার।  

১৯৭৫-৭৭ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠান ও মাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন কিশোর কুমার। রেডিওতে তার গান প্রচার বন্ধ করা হয়, এমনকি দ্বৈত সংগীতগুলো থেকে তার গাওয়া অংশগুলো কেটে বাদ দেওয়া হয়। মধুবালাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম নেন করিম আবদুল।  

যত বড় পরিচালকই হোক না কেন, সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক না পাওয়া পর্যন্ত গান রেকর্ডিং করতেন না কিশোর কুমার। লতা মুঙ্গেশকরের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন তিনি। তার সম্মানে সব সময় পারিশ্রমিক নিতেন লতার চেয়ে ১ রুপি কম। তার অভিনয়ে পাগলামির ছাপ ছিল স্পষ্ট, যা তিনি ইচ্ছা করেই তৈরি করেছিলেন। এমনকি খান্ডোয়ায় তার বাড়ির সামনে নিজেই ‘মেন্টাল হসপিটাল’ লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। 

সংগীত জীবনে চরম সাফল্যের মাইলফলক ‘আরাধনা’ সিনেমা। ১৯৬৯ সালে ‘আরাধনা’ মুক্তি পায়। এই সিনেমার নায়ক ছিলেন নবাগত রাজেশ খান্না। রাজেশ খান্নার জন্য এই সিনেমায় কিশোর তিনটি গান গেয়েছিলেন। এর মধ্যে ‘কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা’ গানটি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে গেয়েছিলেন। বাকি দুটো হলো—‘রূপ তেরা মাস্তানা’ এবং ‘মেরে সপনো কি রানী’। তিনটি গানই দারুণ জনপ্রিয়তা পায় এবং কিশোর কুমারের সংগীতজীবনকে অনেক উপরে উঠিয়ে দেয়। এই সিনেমায় ‘রূপ তেরা মাস্তানা’ গানের জন্য কিশোর প্রথমবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। 

পরবর্তী বছরগুলোতে কিশোর গায়ক হিসেবে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। সে সময়ে বলিউডে প্রতিষ্ঠিত সব নায়ক যেমন রাজেশ খান্না, শশী কাপুর, ধর্মেন্দ্র, রণধীর কাপুর, সঞ্জীবকুমার এবং দেব আনন্দের গলায় তিনি গান গান। এই সময়ে শচীন দেব বর্মন এবং রাহুল দেব বর্মনের সুরে তিনি প্রচুর কালজয়ী গান গেয়েছেন। রাহুল দেব বর্মনের সুরে তিনি ‘বম্বে টু গোয়া’ সিনেমাতে প্রথমবারের জন্য অমিতাভ বচ্চনের জন্য গান করেন। ১৯৭৩ সালে অমিতাভের ‘অভিমান’ সিনেমার জন্য তার গাওয়া গানগুলো সুপারহিট হয়। এরফলে পরবর্তী মেগাস্টার অমিতাভের নেপথ্য গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। 

কিশোর কুমারের এই সাফল্যের পর বলিউডের অন্য সুরকারেরাও তাকে নিজেদের প্রধান গায়ক হিসেবে বেছে নেন। এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল জুটি। গীতিকার আনন্দ বক্সী সুরকার লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল এবং কিশোর কুমার জুটি রাজেশ খান্নার সিনেমার জন্য বেশ কিছু অনবদ্য সংগীত উপহার দেন। যেমন: দাগ, রোটি, হাতি মেরে সাথি। লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলালের সুরেই কিশোর ও মোহাম্মদ রফি একসঙ্গে গান করেন এবং কিশোর ও লতা মঙ্গেশকরের বেশ কিছু ভালো ডুয়েট গান তৈরি হয়। 

কিশোর কুমার এবং সুরকার কল্যাণজি-আনন্দজি জুটিও বেশ কিছু হিট গান উপহার দেন। যেমন—ধর্মাত্মা, লাওয়ারিস, কাবিলা, জনি মেরা নাম, ডন, কাগজ, সফর, মুকাদ্দর কা সিকান্দর প্রভৃতি সিনেমার গান। সত্তর এবং আশির দশকজুড়ে অব্যাহত থাকে কিশোরের জয়যাত্রা। নতুন অল্প বয়সি নায়ক যেমন: ঋষি কাপুর এবং সঞ্জয় দত্তের জন্যও সফল গান উপহার দেন। রাহুলদেব বর্মনের সুরেই কিশোর কুমার সবচেয়ে বেশি হিট গান উপহার দিয়েছেন। 

রাহুল এবং কিশোর জুটির কিছু অনবদ্য সিনেমার নাম হল—শোলে, ওয়ারেন্ট, হীরা পান্না, শরীফ বদমাশ, আঁধি, রকি, দ্য বার্নিং ট্রেন, আপকি কসম, আপনা দেশ, ধরম করম, টক্কর, সীতা আউর গীতা, জোশিলা, কসমে ভাদে, রামপুর কা লক্ষ্মণ, কালিয়া, গোলমাল প্রভৃতি। নতুন সুরকার যেমন রাজেশ রোশান এবং বাপ্পি লাহিড়ির সুরেও তিনি বেশ কিছু হিট গান গেয়েছেন। রাজেশ রোশানের সুরে—দো অর দো পাঁচ, দুসর আদমি, মনপসন্দ, এবং বাপ্পি লাহিড়ির সুরে—নমক হালাল এবং শরাবী সিনেমার গান উল্লেখযোগ্য। 

হিন্দির পাশাপাশি প্রচুর জনপ্রিয় বাংলা সিনেমাসহ বাংলা আধুনিক গানও গেয়েছেন কিশোর কুমার। প্লেব্যাক করা বাংলা সিনেমার মধ্যে রয়েছে—অমরকন্টক, আশ্রিতা, অনিন্দিতা, অমর সঙ্গী, কবিতা, গুরুদক্ষিণা, জীবন মরণ, জ্যোতি, তুমি কত সুন্দর, দোলন চম্পা, পাপ পুণ্য, বান্ধবী, মিলন তিথি, মোহনার দিকে, সংকল্প, সুরের আকাশে ইত্যাদি। 

ব্যক্তিগত জীবনে চারবার বিয়ে করেছেন কিশোর কুমার। রুমা গুহ ঠাকুরতা (১৯৫০-১৯৫৮), মধুবালা (১৯৬০-১৯৬৯), যোগিতা বালি (১৯৭৫-১৯৭৮) এবং লীনা চন্দাভারকর (১৯৮০-১৯৮৭)। কিশোরের প্রথম পুত্র অমিত কুমারের মা রুমা গুহ ঠাকুরতা। অমিত কুমারও একজন বিখ্যাত গায়ক। যোগিতা বালি পরবর্তীতে মিঠুন চক্রবর্তীকে বিয়ে করেন। কিশোর কুমারের ছোট ছেলে সুমিত কুমারও (লীনা চন্দাভারকর) একজন গায়ক। 

কিশোর কুমার সর্বমোট ২,৭০৩টি গান গেয়েছেন, যার মধ্যে ১১৮৮টি হিন্দি চলচ্চিত্রে, ১৫৬টি বাংলা এবং বাকি তেলেগু ও অন্যান্য ভাষায়। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই মহান শিল্পীর মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনবদ্য গানে অমর কিশোর কুমার