কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক মৎস্য খামারের তিনটি পুকুরে ৭০ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা। মৎস্য কর্মকর্তার ধারণা, অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাবলেট প্রয়োগ করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অপরদিকে বগুড়ার আদমদীঘিতে একটি ফার্মে ঢুকে ১৫ দিন বয়সী সহস্রাধিক পোলট্রি মুরগির বাচ্চা মেরে ফেলে দুর্বৃত্তরা। খামারির ভাষ্য, পদদলিত করে বাচ্চাগুলো মেরে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই ঘটেছে এ দুটি ঘটনা। 

তিন পুকুরের সব শেষ

দৌলতপুরের আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামে মাছের খামার রয়েছে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক বেনজির আহমেদ বাচ্চুর। পাঁচটি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদন করেন তিনি। একসঙ্গে থাকা তাঁর তিনটি পুকুরে গতকাল বুধবার ভোরে মাছ মরে ভেসে ওঠে। 

একই এলাকার মাছ চাষি রতন আলী ওই তিনটি পুকুরের দেখভাল করেন। এগুলোর একটি তিন বিঘা, একটি দুই বিঘা ও একটি এক বিঘা আয়তনের। রতন বলেন, মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তরা সম্ভবত বিষ বা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে পুকুরগুলোর মাছ মেরে ফেলে। এসব পুকুরের পাঙাশ, মনোসেক্স তেলাপিয়া, রুই, মৃগেলসহ শত শত মণ মাছ মারা গেছে। পাঙাশগুলোর ওজন দেড় থেকে আড়াই কেজির মতো। কয়েকটি রুই, মৃগেল ও চিতল মাছের ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি। 

স্থানীয় পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বিশ্বাস বলেন, কয়েকদিন আগে তিনটি পুকুরের মাছের দাম ৫০ লাখ টাকা বলেছিলেন। কিন্তু বেনজির আহমেদ বাচ্চু বিক্রি করেননি। 

ভুক্তভোগী বেনজির আহমেদ বাচ্চুর ভাষ্য, পুকুর তিনটিতে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মাছ ছিল। পাঙাশ-মনোসেক্স তেলাপিয়ার পাশাপাশি ৮ থেকে ১২ কেজি ওজনের চিতল, রুই ও মৃগেল মাছও ছিল। বিষ দিয়ে সবই শেষ করে দিয়েছে। 

দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, এ বিয়ষে অভিযোগ পেয়েছেন। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমদ বলেন, পুকুরগুলোতে প্রায় ১২ হাজার কেজি পাঙাশসহ দেশীয় নানা মাছ ছিল। এগুলোর দুই থেকে সাড়ে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন ছিল। পুকুরের কাদা ও পানি পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাবলেট প্রয়োগ করা হয়েছে। পানি অক্সিজেনশূন্য হয়ে মাছগুলো মারা গেছে।

সহস্রাধিক বাচ্চা পদদলন

আদমদীঘির নসরতপুর কলেজপাড়ায় দুর্বৃত্তরা সহস্রাধিক মুরগির বাচ্চা মেরে ফেলেছে। ওই এলাকার পান্না পোলট্রি ফার্মে মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হারুনুর রশিদের বাড়ি পাশেই। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই মুরগির বাচ্চা ফুটানো ও লালন-পালনের পর বাজারজাত করেন।

হারুনুর রশিদ বলেন, তাঁর খামারে এক হাজারের বেশি বিভিন্ন জাতের মুরগি বাচ্চা ছিল। এগুলো ১৫ দিন বয়সী। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর খাবার দিয়ে খামারের দরজা বন্ধ করে বাসায় যান। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় দিকে তাঁর কেয়ারটেকার হাসান আলী আবারও খাবার দিতে এসে দেখেন, দুর্বৃত্তরা খামারনের বেড়া কেটে ঢুকে সব বাচ্চা পদদলিত করে মেরে ফেলেছে। এতে তাঁর ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এ ঘটনায় হারুনুর রশিদের স্ত্রী শবনম মোস্তারি বাদী হয়ে আদমদীঘি থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। থানার এসআই আমিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ লতপ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভারতকে পাল্টা জবাব দিতে হবে’: ট্রাম্পের শুল্ক ইস্যুতে শশী থারুর

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের জবাব দেওয়া উচিত।

কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।

সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের শশী থারুর বলেন, ‘প্রথমে আমাদের আলোচনায় বসা উচিত। জানি না, ট্রাম্প আমাদের ওপর এত রেগে আছেন কেন। চীনকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের মাত্র ২১ দিন। এখন যদি তারা শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, তবে আমাদের জবাবও হতে হবে পাল্টা শুল্ক।’

থারুর জানান, বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে গড়ে ১৭ শতাংশ শুল্ক নেয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদেরও সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা উচিত। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি এটা করে, আমরাও একই কাজ করব।’

বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।শশী থারুর, কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা

গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভারত বারবারই বলেছে, তার জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সস্তা তেল কেনা দরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।

ট্রাম্পের চাপের মুখেও ভারত কি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে—এমন প্রশ্নে থারুর বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে, কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।’

বর্তমানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা কার্যত স্থগিত রয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে কৃষিসহ বেশ কিছু কৌশলগত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার দিতে ভারতের রাজি না হওয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। দেশীয় কৃষকদের স্বার্থেই এমন অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।

ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারতের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। আমি জানি, এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী ও পশুপালকদের স্বার্থে ভারত প্রস্তুত।’

আরও পড়ুন‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী১ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষির সঙ্গে যুক্ত। সরকার যে–ই হোক—মোদির কিংবা আমাদের; কৃষকের পাশে দাঁড়াতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে থারুর বলেন, ‘বিদেশে আমাদের সত্যিকার বন্ধুরা বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু যাঁরা বুঝতে প্রস্তুত নন, আমাদের সম্পর্ককে আমাদের মতো করে মূল্য দেন না, তাঁদের বাদ দিয়ে আমাদের অন্য বন্ধু খুঁজতে হবে।’

আরও পড়ুনভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের, মোট দাঁড়াল ৫০১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ