তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া। বড় ভাই ইব্রাহিম ভূঁইয়া সৌদি আরব থাকেন। মেজো ভাই বাড়িতে মুরগির খামারের ব্যবসা করেন। হাবিবুল্লাহ শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তাঁর স্বপ্ন বিদেশ গিয়ে বেশি বেতনে চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা আনবেন। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধে নামতে বাধ্য হন তিনি। সেখানে নিহত হয়েছেন এ যুবক।

নিহত হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া (২০) শিবপুরের আইয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাশিরদিয়া গ্রামের আবু সিদ্দিক ভূঁইয়া ও মানসুরা বেগমের ছোট ছেলে।

জানা গেছে, হাবিবুল্লাহ বিদেশ যেতে চাইলে পাশের ব্রাহ্মন্দী গ্রামের দালাল ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আবু সিদ্দিক ভূঁইয়া। চুক্তি হয় ১৫ লাখ টাকায় হাবিবুল্লাহকে ইতালিতে পাঠাবেন। ইতালির কথা বলে ফারুক তাঁর বন্ধু ঢাকার আরেক দালাল শফিকের মাধ্যমে হাবিবুল্লাহকে ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে দুই মাসের ওমরা ভিসায় সৌদি আরব নিয়ে যান। দুই মাস পর সৌদি আরবের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় শফিক আরেক দালাল সুলতানের কাছে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। হাবিবুল্লাহকে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যান সুলতান। সেখানে তাঁকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে ট্রেনিং করায়। এর আগে হাবিবুল্লাহকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে রাশিয়ান ভাষায় লেখা এক বছরের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করায়। ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ রাশিয়ার ৪৫ জন সেনা সদস্যের সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত হন হাবিবুল্লাহ। ভেঙে যায় সুখের স্বপ্ন।

এরপর থেকে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার পরিবারে চলছে মাতম। নিহত হাবিবুল্লাহর মা মানসুরা বেগম জানান, গত ৩০ এপ্রিল রাতে রাশিয়া থেকে তাঁর ছেলের বন্ধু ফোন করে জানায় হাবিবুল্লাহ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে মারা গেছে গত ২৭ মার্চ। তাঁর বড় ছেলে ইব্রাহিম ভূঁইয়া সৌদি আরব থাকেন। তাঁকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। গত রোববার প্রথমে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান তারা।

মানসুরা বেগম বলেন, গত ৫ ও ৬ এপ্রিল নরসিংদী জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন এবং ঢাকা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তারা। সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের লাশ যেন দেশে আনা হয় এবং দালালের কঠিন বিচার করা হয়। 

শিবপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাশিরদিয়া ওয়ার্ডের সদস্য জুয়েল মেম্বার জানান, হাবিবুল্লাহ বিদেশে মারা গেছেন বলে লোকমুখে শুনেছেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।

আইয়ুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক স্বপন চন্দ্র সরদার জানান, এ ব্যাপারে তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নরস দ হ ব ব ল ল হক

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ