পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শাটডাউন কর্মসূচি সাময়িকভাবে শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেলে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সমকালকে বলেন, শিক্ষকদের অনুরোধ ও কারিগরি শিক্ষার স্বার্থে আমরা সাময়িকভাবে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শিথিল করেছি।
এর আগে গতকাল সকালে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) উদ্যোগে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যৌথ বৈঠক হয়। বৈঠকে আইডিইবি, পলিটেকনিক শিক্ষক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এবং ছাত্র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সবাই আন্দোলন শিথিল করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
১৬ এপ্রিল থেকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। ২৯ এপ্রিল থেকে শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয় এবং অধিকাংশ ইনস্টিটিউটে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। এর আগে বিক্ষোভ মিছিল, গণসমাবেশ ও আইডিইবি অফিসে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আইডিইবির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো.
সরকারের পদক্ষেপের (হাইকোর্টের রায় স্থগিত, অধ্যক্ষ বদলি, উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন) প্রশংসা করেন বক্তারা। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের আশা করেন তারা।
সভা শেষে ছাত্র প্রতিনিধিরা নেতাদের সঙ্গে গিয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের তালা খুলে দেন। এতে করে প্রতীকীভাবে শাটডাউন কর্মসূচির শিথিলতা শুরু হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই : যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো অংশ সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের কথা তাঁর জানা নেই। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথ এ কথা বলেন।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বোমারু বিমানগুলো ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলা চালায়, যেখানে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এক ডজনের বেশি ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়।
এই হামলার ফলাফল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে বোঝা যায় এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কতটা পিছিয়ে দিতে পেরেছে।
হেগসেথ বলেন, আমি এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য দেখিনি বা জানি না, যা বলছে যেসব জিনিস যেখানে থাকার কথা ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে বা অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের পুরোটা পর্যবেক্ষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, কিছু সরিয়ে নিতে অনেক সময় লাগত।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, ফর্দো পারমানবিক স্থাপনায় হামলার বাইরে যেসব গাড়ি আর ছোট ট্রাক ছিল, সেগুলো ছিল কংক্রিট শ্রমিকদের, যারা টানেলের মুখ ঢাকার কাজ করছিল। কোনো কিছুই ওই স্থাপনা থেকে সরানো হয়নি।’ তবে তিনি এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।
বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, হামলার আগেই ইরান সম্ভবত ফোর্দোর গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনাটি থেকে অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি মজুত সরিয়ে ফেলেছে এবং তারা এটি এমন কোনো গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখতে পারে, যার অবস্থান ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘের পরমাণু পরিদর্শকদের অজানা।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ম্যাক্সার টেকনোলজিসের স্যাটেলাইট চিত্রে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা গেছে। চিত্রে দেখা যায়, স্থাপনাটির একটি প্রবেশপথের বাইরে দীর্ঘ লাইনে অনেক যানবাহন অপেক্ষা করছে।
রোববার রয়টার্সকে এক জ্যেষ্ঠ ইরানি সূত্র জানিয়েছেন, হামলার আগেই ৬০ শতাংশ মাত্রার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগ অংশ একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস ইউরোপীয় গোয়েন্দা মূল্যায়নের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত মূলত অক্ষত রয়েছে, কারণ এগুলো শুধুমাত্র ফোর্দোতে কেন্দ্রীভূত ছিল না।
এই দাবিগুলো অস্বীকার করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সফলতাকে সাংবাদিকরা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তিনি এ অভিযোগ করেন এমন এক সময়ে, যখন ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন ফাঁস হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এসব হামলা ইরানকে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পারে মাত্র।
হেগসেথ বলেন, ওই মূল্যায়নটি ছিল কম বিশ্বাসযোগ্য। তিনি সিআইএ পরিচালক জন র্যটক্লিফের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, নতুন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তা পুনর্গঠনে ইরানের বছর কয়েক সময় লাগবে।
র্যাটক্লিফ, হেগসেথ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন বৃহস্পতিবার একটি গোপন ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের ১০০ সদস্যের সবার সঙ্গে এই হামলার বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেন।
জাতীয় গোয়েন্দা বিষয়ক পরিচালক হিসেবে সাধারণত যিনি এই ধরনের ব্রিফিং পরিচালনা করে থাকেন, সেই তুলসি গ্যাবার্ড অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিলেন না। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না—এই মন্তব্য করে তুলসি গ্যাবার্ড ভুল করেছেন, কারণ এ বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে।
সেনেট ব্রিফিংটি মূলত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তবে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। চলতি সপ্তাহে সেনেটররা একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট দিতে পারেন, যাতে ইরানে হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়েছে। তবে এই প্রস্তাব আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই হামলাকে ঐতিহাসিকভাবে সফল বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি এমন এক সময়ে এ মন্তব্য করেছেন, যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার কোনো হামলা চালায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো ইরানের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্য হবে।