কিশোরগঞ্জের চৌদ্দশত বাসস্ট্যান্ডে পিকআপের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী দুই ভাইসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টার দিকে চৌদ্দশত নান্দলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কুলিয়ারচর গোবরিয়া-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ভাটি জগৎচর গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে নূর ইসলাম (৭০) এবং একই ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মৃত মধু মিয়ার দুই ছেলে আবু তাহের (৬৫) ও আবুল কাসেম (৬১)।

জানা যায়, আবু তাহের ও আবুল কাসেম তাদের সহপাঠী নূর ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে অটোরিকশা যোগে কিশোরগঞ্জ কোর্টে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিষয়ে উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করতে যান। এ সময় অটোরিকশাটি চৌদ্দশত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গেলে পেছন থেকে একটি পিকআপ তাদের ধাক্কা দেয়। এতে তারা গুরুতর আহত হন। তাদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে আবু তাহের নিহত হন। অপর দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তাদের মধ্যে আবুল কাসেমকে ঢাকা মেডিকেল এবং নুর ইসলামকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নেওয়ার পথে তারা মারা যান।

কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুর্ঘটনায় আহত তিনজনকে স্থানীয়রা নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে আবু তাহের মারা যান। বাকি দু’জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

কটিয়াদী হাইওয়ে থানার ওসি মামুনুর রশিদ বলেন, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর খবর তিনি জানেন না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ দ র ঘটন ন হত ত ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষক-কর্মচারী ছাড়া কেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) বর্তমান পরিস্থিতি চরম হতাশাজনক। নবনির্মিত ভবন, তিনটি ব্যাচে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী—সবকিছুই আছে, কিন্তু নেই কোনো শিক্ষক ও জনবল। শিক্ষক ছাড়া একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে চলে? 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করলেও শুরু থেকেই কোনো স্থায়ী শিক্ষক বা প্রশাসনিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মাত্র দুজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দুই দিন করে ক্লাস নিচ্ছেন, যা ১৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রায় বন্ধ। ব্যবহারিক সুবিধার অভাবে ল্যাব থাকা সত্ত্বেও সেগুলো অব্যবহৃত পড়ে আছে। নেই পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, এমনকি হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিছানাও। এর ওপর ৯ লাখ ১১ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় এই অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত চিত্রই প্রকাশ ঘটেছে। সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদেরই দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে, এটি আরও বেশি হতাশাজনক।

উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটিতে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাঝুঁকিতে রয়েছেন। একজন মাত্র নৈশপ্রহরী দিয়ে এত বড় একটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব। বাইরের উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের অবাধ প্রবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। যখন একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘অনাথ বা এতিমের মতো’ অনুভব করেন এবং কোনো সমস্যা হলে কার কাছে যাবেন তা জানেন না, তখন বুঝতে হবে পরিস্থিতির গভীরতা কতটা ভয়াবহ।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, ৪৩৫ জন জনবলের চাহিদা পাঠানো হলেও মাত্র ৩৫ জনের অনুমোদন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল আটকে আছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদ্দীন আহমেদ কেবল ‘প্রক্রিয়া চলমান’ বলেই দায় সারছেন। প্রশ্ন হলো, এই প্রক্রিয়া আর কত দিন চলবে?

বাংলাদেশে মোট ২৩টি সরকারি আইএইচটি রয়েছে। যদি ময়মনসিংহের আইএইচটির মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও এমন জনবলসংকট থাকে, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্য কীভাবে পূরণ হবে? এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সংকট নয়, এটি দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। সরকারকে অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ভবন নির্মাণ করলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত শিক্ষক, জনবল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকা জনবলকাঠামোর অনুমোদন দ্রুত করা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় এই আইএইচটিগুলো কেবল কংক্রিটের কাঠামো হয়েই থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ