নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আইভীর জামিন নামঞ্জুর
Published: 12th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শামসুর রহমানের আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ডিভিশনের আবেদন করলে আদালত সেটা আমলে নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, আইভীকে যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে শুধু ওই মামলাতেই জামিন চেয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেন। তখন আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তারা ডিভিশনের আবেদনও করেন।
আইভী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, সাবেক মেয়র আইভী ছিলেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার। আমরা আদালতে প্রার্থনা করেছি, তাকে যেন ডিভিশন দেওয়া হয়। আদালত নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলেছেন আদালত।
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আইভী কখনো মাঠে নামেননি। তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা মিথ্যা। এসব ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে একটি মামলায় কাস্টডি দিয়েছে। বাকি মামলাগুলো তো তাকে কাস্টডি ইস্যু করেনি। যাতে আমাদের জামিন চাওয়ার ব্যাপারে ব্যত্যয় ঘটছে।
প্রমঙ্গত, গত ৯ মে ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার নিজ বাসভবন চুনকা কুটির থেকে ডা.
আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে আইভীকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম কেউ বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ আজ বুধবার এ কথা বলেন।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো.মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
ট্রাইব্যুনাল–২–এ আজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এই মামলার ১৬ আসামির অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। তাঁরা এ সময় বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা ২টার দিকে শুনানি শেষ হয়।
শুনানির শেষের দিকে ট্রাইব্যুনালকে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সঙ্গে সংবিধানের সংঘর্ষ হলে এই আইন থাকবে। এটা সুপিরিয়র ল। আইন অনুযায়ী এই মামলায় হেয়ারিং (শুনানি) দ্রুততার সঙ্গে করা হবে, বিলম্ব হলে তাতে বাধা দেবেন ট্রাইব্যুনাল।
জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের অ্যাকশন (পদক্ষেপ) দেখে বুঝেন নাই?ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম বিলম্ব হয় এমন কার্যক্রম করা যাবে না। করলে ট্রাইব্যুনাল টুঁটি চেপে ধরবে। ট্রাইব্যুনাল তাড়াহুড়া করছে না, আইনই এমন।’
‘পালিয়ে গেছে, মরেনি, এটাই কি অপরাধ’
সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.শাহিদুল ইসলামের আইনজীবী ছিলেন মাহাদী হাসান ও আসাদুজ্জামান বাবু। তাঁরা বলেন, এই মামলায় ৫৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষীদের কেউই জবানবন্দিতে শাহিদুলের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। এই মামলায় ২১টি জব্দ তালিকা আছে, সেখানেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। গণ–অভ্যুত্থানের ১ মাস পর চারটি জাতীয় গণমাধ্যম সংবাদ করে এই ঘটনায়, সেখানেও শাহিদুলের নাম আসেনি। সেই সঙ্গে এই আসামির পক্ষে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো দালিলিক প্রমাণ আনুষ্ঠানিক অভিযোগে নেই। এসব কারণে এই মামলা থেকে শাহিদুলের অব্যাহতি চান তাঁরা।
কল রেকর্ডসহ কিছু তথ্য–প্রমাণ চেয়ে শাহিদুল ইসলামের পক্ষে এই আইনজীবীরা দুটি আবেদন করলে তা খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলা থেকে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো.আরাফাত হোসেনের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী এস এম মিরাজুল আলম। তিনি বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট আরাফাত অন্য এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। পরদিন ৫ আগস্ট তাঁর দায়িত্ব পড়েছিল আশুলিয়ায়। আরাফাত গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাঁকে কখনো অস্ত্র দেওয়া হয়নি। ফলে গুলি করে কাউকে হত্যা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া তিনি ডিবির কর্মকর্তা হওয়ায় পুলিশের কাউকে লাশে আগুন দিতে নির্দেশ দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সেখানে কোনো অপরাধ করেছেন এমন কোনো ভিডিও ফুটেজ বা অন্য কোনো প্রমাণও নেই।
আইনজীবী মিরাজুল আলম বলেন, ‘সেসময় অনেক পুলিশ মারা গেছেন। আরাফাত জীবন বাঁচাতে থানা থেকে পালিয়ে গেছেন, এমন ভিডিও আছে। আরাফাত মরেননি, সেটা কি তাঁর অপরাধ?’
এই মামলায় ১৬ জন আসামি। এই মামলা থেকে সব আসামির পক্ষেই অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এ মামলার আট আসামি পলাতক।
এর আগে ৭ আগস্ট এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য ২১ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।