যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার তিনি সৌদি আরবে যাবেন। মার্কিন অর্থনীতির জন্য বড় অঙ্কের নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করাই তাঁর এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মূল উদ্দেশ্য।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট’-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক অর্থনীতিবিদ ক্যারেন ইয়ং বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সফরে (যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বেশি উপসাগরীয় বিনিয়োগের) ঘোষণা প্রত্যাশা করেন।’

ক্যারেন আরও বলেন, ‘বৈঠকে তিনি (ট্রাম্প) একটি বড় পোস্টার রাখতে চান, যেখানে বিনিয়োগগুলো কোথায় হতে পারে, তা লেখা থাকবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ঘরোয়া শিল্পের ওপর এই বিনিয়োগের প্রভাব কী হতে পারে, তার কিছু অনুমানও তিনি পোস্টারে তুলে ধরতে চান।’

ট্রাম্প সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে দেশটির কার্যত শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আজ বৈঠক করবেন। আগামীকাল বুধবার সেখানে উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতাদের এক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। সেদিনই কাতার সফরে যাবেন তিনি। পরের দিন বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরের মধ্য দিয়ে তাঁর তিন দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে উপসাগরীয় অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তাঁর এ সফরের মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো। পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দিতে ট্রাম্প সম্প্রতি রোমে গিয়েছিলেন, তা পূর্বনির্ধারিত ছিল না। তাই সৌদি আরবের মাধ্যমেই দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর শুরু হলো।

বৈঠকে তিনি (ট্রাম্প) একটি বড় পোস্টার রাখতে চান, যেখানে এই বিনিয়োগগুলো কোথায় হতে পারে তা লেখা থাকবে।ক্যারেন ইয়ং, মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক সময়ের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম। দেশটির আধুনিককালের প্রেসিডেন্টরা প্রথম বিদেশ সফরের জন্য সাধারণত যুক্তরাজ্য, কানাডা কিংবা মেক্সিকোকে বেছে নেন।

উপসাগরীয় দেশগুলোর বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তহবিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সেটাকে বিশেষ অর্জন হিসেবে প্রচার করবেন ট্রাম্প। দেশে ফিরে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সাফল্যের কথা প্রচার করতে পারবেন।

ট্রাম্পের সফরকে কেন্দ্র করে ওয়াল স্ট্রিট ও সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ নির্বাহীরা সৌদি আরবে ছুটছেন। আজ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ সম্মেলনে ব্ল্যাকরক, প্যালান্টির, সিটিগ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ও ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) অংশ নেবেন।

এমন এক সময়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নানা প্রতিকূলতার মুখে রয়েছে। ট্রাম্পের নতুন আমদানি শুল্কনীতির কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগকারীদের আস্থা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থনীতিও চাপে পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উৎপাদন কমেছে, যা গত তিন বছরে এবারই প্রথম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা বলছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। জাপানে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে, ২৮ জুন ২০১৯.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য প রথম সফর র

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতু থেকে খুলে ফেলা হচ্ছে রেললাইন

যমুনা সেতুর ওপর থেকে রেললাইন খুলে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ বৃহস্পতিবার নাট-বোল্টসহ যন্ত্রাংশ খোলার কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত ১৮ মার্চ যমুনা রেলসেতু চালু হয়েছে। এরপর থেকে সড়ক সেতু দিয়ে ট্রেন চলছে না। যমুনা সেতুর ওপর রেললাইনের প্রয়োজন নেই। এ কারণে সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের মাধ্যমে যৌথ পরিকল্পনায় সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, রেললাইন খোলা শুরু হয়েছে। উপরিভাগে যানবাহনের জটলা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আগামীতে সেতুর দুটি লেন প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। রেললাইন খুলে নেওয়া হলে সড়ক সেতুতে আরও প্রায় সাড়ে তিন মিটার জায়গা বাড়বে। এটা মূল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযোগ করতে পারব। এতে উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার বাড়বে। এ ধরনের সেতু আন্তর্জাতিকভাবে ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত হয়। বর্তমানে যমুনা সেতুর প্রতি লেন ৬ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ। এ কারণে দুর্ঘটনা বা যানজট হয়। রেললাইন অপসারণের পর প্রতি লেন প্রস্থ হবে প্রায় ৮ মিটার। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লাগে। প্রশস্তকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সাসেক-২) পরিচালক ড. ওয়ালীউর রহমান। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এবারের ঈদে সেতু দিয়ে এক দিনে ৬৫ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে সেতু কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদের আগে-পরে বিপাকে পড়ে। সেতুর ওপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় এলেঙ্গা ও সিরাজগঞ্জসহ দুই পারে থেমে থেমে যানজট হয়। সেতুর উপরিভাগ প্রশস্ত করা হলে দুর্ঘটনা ও যানজট কমতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধন হয়। এর নকশায় রেলপথ ছিল না। পরে সেতুর ওপর উত্তর পাশে লোহার খাঁচা, বার ও অ্যাঙ্গেল যুক্ত করে রেললাইন বসানো হয়। ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হয়। নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে ট্রেন চলার কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতি বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি তৈরি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ