বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার লক্ষ্যে আবারও লড়াইয়ে নামতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হওয়ার আগে শক্তির কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না দলটি। সেই লক্ষ্যেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ঘোষণা করেছে এক ব্যালান্সড ও অভিজ্ঞতায় ভরপুর ১৫ সদস্যের দল।

দলে ফিরেছেন চোট কাটিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, নির্ভরযোগ্য পেসার জশ হ্যাজেলউড এবং পেস-অলরাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন। আগামী ১১ জুন ঐতিহাসিক লর্ডসের মাঠে শুরু হবে শিরোপা রক্ষার সেই গুরুত্বপূর্ণ মিশন।

গতবার ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে জয় পেয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল অজিরা। এবারও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রতিটি বিভাগেই আনা হয়েছে ভারসাম্য। কামিন্সের নেতৃত্বে পেস আক্রমণ সাজানো হয়েছে স্টার্ক, হ্যাজেলউড ও স্কট বোল্যান্ডকে ঘিরে। স্পিন বিভাগে আছেন নাথান লায়ন এবং ম্যাট কুহনেম্যান।

আরো পড়ুন:

ফাইনালে ভারত না থাকায় ক্ষতি ৬৩ কোটি

মুশফিকুরের থেকে তামিমের চাওয়া ‘অন্তত ১০০ টেস্ট’

অলরাউন্ডার হিসেবে থাকছেন ক্যামেরুন গ্রিন, উঠতি প্রতিভা স্যাম কনস্টাস এবং বো ওয়েবস্টার। উইকেটের পেছনে মূল ভরসা অ্যালেক্স ক্যারি, ব্যাকআপ হিসেবে রয়েছেন জশ ইংলিস। ব্যাটিং লাইনআপে এক ঝাঁক অভিজ্ঞ মুখ—উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেইন, স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেড। স্মিথ থাকছেন সহ-অধিনায়কের ভূমিকায়।

নির্বাচক কমিটির প্রধান জর্জ বেইলি বলেন, “আমাদের এই স্কোয়াডে রয়েছে অভিজ্ঞতার গভীরতা, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং ভারসাম্য। উপমহাদেশ সফরে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা ফাইনালের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”

এই একই দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬ জুন থেকে শুরু হওয়া তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও অংশ নেবে।

অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত স্কোয়াড:
প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, স্কট বোল্যান্ড, ক্যামেরুন গ্রিন, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেইন, স্টিভ স্মিথ (সহ-অধিনায়ক), ট্রাভিস হেড, ম্যাট কুহনেম্যান, নাথান লায়ন, অ্যালেক্স ক্যারি, জশ ইংলিস, স্যাম কনস্টাস, বো ওয়েবস্টার।

ভ্রমণ রিজার্ভ: ব্রেন্ডন ডগেট।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট স ট চ য ম প য়নশ প ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

সড়ক–রেলের প্রকল্প থেকে সাশ্রয়, পরিবহন খাত এখনো বিশৃঙ্খল

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সড়ক ও রেল খাতে প্রকল্প ব্যয় কমানোর ওপর বেশি জোর দিয়েছে। এরই মধ্যে চলমান ও প্রায় সমাপ্ত বেশ কিছু প্রকল্পে ব্যয় কমানো হয়েছে। এ ছাড়া ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রকল্প বাদ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল মনোভাব দেখা গেছে।

তবে বিগত সরকারের আমলে পরিবহন খাতে যে বিশৃঙ্খলা ছিল, তা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধায় এবারও সাফল্য খুব একটা নেই। ঢাকার যানজট নিরসন ও গণপরিবহনে নৈরাজ্য আগের মতোই আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন, সেতু বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এই দুই মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভাগগুলো কী পরিমাণ ব্যয় সাশ্রয় করেছে, তার একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, গত এক বছরে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে।

রেলওয়ে এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকার বেশি ব্যয় করত। এখন আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কিছুটা কমেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার হাওরের ওপর দিয়ে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে করিমগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছিল। জনগুরুত্বপূর্ণ নয় এবং হাওর অঞ্চলের জলাভূমির জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, এমন বিবেচনায় প্রকল্পটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার কিশোরগঞ্জের হাওরের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করেছিল। এ নিয়ে জলাভূমির জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অভিযোগ এনেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্তর্বর্তী সরকার সড়ক ও রেল খাতের জন্য উপদেষ্টার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবকাঠামো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলী শেখ মইনউদ্দিনকে বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব দেয়। তিনি এই দুই মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পের ব্যয় কীভাবে কমানো যায়, তার ওপর জোর দিয়েছেন। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। শুরু থেকে সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের আমলারাই এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অন্তর্বর্তী সরকার সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি দলের মাধ্যমে ফারুক আহমেদকে নিয়োগ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দুবাই ও হংকংসহ বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনায় অভিজ্ঞতা রয়েছে নতুন এমডির।

ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ কমানো এবং মেট্রোরেল পরিচালনায় কারিগরি ত্রুটি এড়াতে জোর দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন তিন মাসের মধ্যে চালু করা হয়। ব্যয় হয় মাত্র ১৮ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বলা হয়েছিল, এ কাজে ব্যয় হতে পারে ৩৫০ কোটি টাকা। আর সময় লাগতে পারে এক বছর।

বড় প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও সেতু বিভাগের অধীনে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব প্রকল্পে বাড়তি ব্যয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতি বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রণীত শ্বেতপত্রের তথ্যানুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের সময় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা অপচয় বা নষ্ট হয়েছে। এ সময় উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়নে ব্যয় হওয়া অর্থের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লুটপাট হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভা হয় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওই সভায় বলেছিলেন, এখন থেকে মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে। পরে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও বড় প্রকল্প না নেওয়ার পক্ষে মত দেন। সড়ক ও রেল খাতে সরকারের এই নীতির প্রতিফলন ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই দুই মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্প খুব একটা নেয়নি। রেলওয়ের অধীনে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কক্সবাজারে মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ভোলা-বরিশালে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের আরেকটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রস্তাবিত এ সেতু নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি।

রেলে আয়-ব্যয়ের অনুপাত কমানো লক্ষ্য

গত অর্থবছরে রেলওয়ে এক টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে আড়াই টাকার বেশি। রেলের হিসাবে, চলতি অর্থবছরে এক টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৯ পয়সা। এ ক্ষেত্রে কেনাকাটায় কৃচ্ছ্রসাধন, জ্বালানি খরচ কমানো এবং জমি ইজারা দিয়ে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এক টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় দুই টাকার নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এই লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে রেলওয়ে।

গত এক বছরে রেলের অবৈধ জমি উদ্ধারে ১৭৭টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ৯৯ একর জমি উদ্ধার এবং প্রায় ছয় হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে ১০ জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়। এগুলো ঢাকা-নরসিংদী, ঢাকা-গাজীপুর ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচল করছে।

চলমান ও সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর ব্যয় হ্রাসের একটি তালিকা করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্প ব্যয় থেকে প্রায় ৮ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা সাশ্রয়ের কথা জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পে সাশ্রয় হয়েছে ৬২২ কোটি টাকা। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা, আখাউড়া-লাকসাম মিশ্রগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ৮৫৯ কোটি টাকা, রেলের ইঞ্জিন কেনার প্রকল্পে ৩৯ কোটি টাকা, আখাউড়া-আগরতলা রেলসংযোগ প্রকল্পে ১৯২ কোটি টাকা এবং খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ১৮৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কাজ কমে গেছে। ফলে ব্যয়ও কমেছে। তবে অপ্রয়োজনীয় কিছু ব্যয়ও বাদ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে ভাঙা রেলস্টেশন নির্মাণেও ব্যয় কমানো হয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন এবং কাজ কমানোর কারণে কিছু ব্যয় কমেছে।

সওজে ঠিকাদারের জালিয়াতি বন্ধে সাফল্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলায় ৩০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারণে ৬৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত হয়ে যায়। অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টার দপ্তরে গেলে তদন্তে নামে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। তারা দেখতে পায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাত্র ৭৫০ মিটার রাস্তা পুনর্নির্মাণ করলেই চলে। কিন্তু ব্যয় বাড়াতে সড়কটি সম্প্রসারণের প্রকল্প তৈরি করা হয়। অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় তা বাতিল করে দেন সড়ক উপদেষ্টা।

সওজ সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের যেকোনো প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগের আগে মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তা গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে সওজের সব ক্রয়কাজ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর সম্পন্ন করত। এতে তদারকির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল। বর্তমান সরকার ক্রয়কাজের দায়িত্ব নির্বাহী প্রকৌশলীর হাতে ন্যস্ত করেছে। ক্রয়কাজে স্বচ্ছতা আনতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন সংস্থা এই উদ্যোগ নিতে দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিয়ে আসছিল।

গত এক যুগে সওজের ঠিকাদারি কাজের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোট কাজের ৯০ শতাংশ পেয়েছে। এসব ঠিকাদার সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের ‘আশীর্বাদে’ ছিলেন। অনেকে জালিয়াতি করা দলিল জমা দিয়ে একচেটিয়া কাজ বাগিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫ ঠিকাদারের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ভেঙে দিয়েছে বলে সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ব্যয় সাশ্রয় বিষয়ে সওজের পক্ষ থেকেও একটি তালিকা করা হয়েছে। দাবি করা হয়, গত এক বছরে সদ্য সমাপ্ত ২২টি প্রকল্প থেকে ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমানো হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

সড়কে শৃঙ্খলা অধরা ও দুর্ঘটনা কমেনি

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত জুনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৯৬ জন। দিনে গড়ে নিহতের সংখ্যা ২৩। গত মে মাসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৫৮৮ জনের। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, গত জুনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ৫৬৬ জনের। মে মাসে নিহত হয়েছেন ৪৯০ জন। এক মাসের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। বিআরটিএর মাসিক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতি মাসেই প্রাণহানি বাড়ছে।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এমন পুরোনো বাস-ট্রাক উচ্ছেদে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পিছু হটে। অন্তর্বর্তী সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ এসব বাস-ট্রাক উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২০ জুলাই থেকে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৫১টি বাস-ট্রাক জব্দ করা হয়। এর মধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো এই অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ১২ আগস্ট ধর্মঘটের ডাক দেয়। এতে অভিযান কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশন বা অল্প কিছু কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনার দায়িত্ব পায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা। গত এক বছরে একটি পথেও নতুন বাস নামাতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে ঢাকার মানুষকে বাধ্য হয়ে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে চলাচল করতে হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে চলে না। এই খাতের মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করার উদ্যোগ নিলে গত ১৩ জুলাই বনানীসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করা হয়। সরকার পিছু হটে। অর্থাৎ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আগের সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও আটকে দিতে পেরেছে।

সময় কম, আরও কিছু করার আছে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবহন ও সড়ক খাতে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, তা সংস্কার করে সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনা কঠিন কাজ। অন্তর্বর্তী সরকারের আগ্রহ থাকলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না। সময়ের স্বল্পতাও একটা বিষয়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমলাতন্ত্র এত দিন বলত যে রাজনৈতিক চাপে তারা দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাদের শক্ত ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা তারা করেনি। আসলে বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার তারাও সুবিধাভোগী।

সড়ক ও রেল খাতে প্রকল্প ব্যয়ে রাশ টানার বিষয়ে সাধুবাদ জানিয়ে সামছুল হক বলেন, এর বড় কারণ হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যক্তিগত প্রাপ্তির আশায় সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ জন্য অপচয় কিছুটা বন্ধ করা গেছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারকে এটা ধরে রাখতে হবে।

অধ্যাপক সামছুল হকের প্রত্যাশা, দীর্ঘ মেয়াদে অপচয় বন্ধ ও প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকার আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিক। যেমন প্রকল্পের কোনো সুবিধা (গাড়ি বা বিদেশ ভ্রমণ) বাইরের কোনো কর্মকর্তা নিতে পারবে না। দামি গাড়ি কেনা বন্ধ করতে হবে। প্রকল্পে যার কিছু দেওয়ার নেই, এমন লোকের বিদেশ ভ্রমণ আইন করে বন্ধ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ