কলাপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-আগুন, আহত ৩
Published: 13th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম শাহীন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) নামের নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে আসছিলেন। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (মহসিন) ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সরবরাহের একটি কাজ পেয়েছেন।
শাহীন মৃধার অভিযোগ, আমিনুলের লোকজন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তাঁর কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় স্থানীয় বাসিন্দা দোলন মৃধা (৩৫), মিরাজ হোসেন (৩৭) ও তাঁর গাড়িচালক রানা (৩২) আহত হয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম বলছেন, শাহীন মৃধা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহে বাধা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ আছে। তিনি আজকের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলে একদল যুবক ধানখালীর মরিচবুনিয়া এলাকায় যান। তাঁরা শাহীন মৃধার শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, তাঁর বসবাসের একটি ঘর ও শ্রমিকদের বসবাসের ছাউনিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে ঘরে থাকা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ আসবাব পুড়ে যায়।
খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর জন্য রওনা হলে পথে ছয় লেন সড়ক এলাকায় একদল লোক আটকে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লোকজন সরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো.
ব্যবসায়ী শাহীন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী যুবকেরা লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে তাঁর কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি সন্ত্রাসীরা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালাবদ্ধ করে হামলাকারী চক্র আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি বের হতে না পারলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমন জাহিলি কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আসলে শাহীন মৃধা আওয়ামী লীগের লোক। তাঁর সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুরের সুসম্পর্ক ছিল। সে নিজে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এলাকার লোকজন এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ করে আসছে। আমি আরএনপিএল নামের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছি। এতে শাহীন মৃধা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এমনকি আমার শ্রমিকদের মালামাল সরবরাহে বাধা দিয়েছে। এসব নিয়ে শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।’ তিনি বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। ঢাকায় বসবাস করেন। এখন এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তিনি জানেন না। তাঁকে নিয়ে কোনো কথা বলে থাকলে তা উদ্দেশ্যমূলক। তিনি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির পাশের স্থাপনায় চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতা চালায়। বর্তমানে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ল ম ল সরবর হ ল ইসল ম আগ ন ন এল ক য় আম ন ল কল প ড় র একট
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে লোড-আনলোডে শ্রমিক সরবারহ নিয়ে বিরোধের জেরে শাহিন মৃধা নামে এক ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১১টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম শাহিন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আরো পড়ুন:
নাসিক ভবনে অটোরিকশাচালকদের হামলার অভিযোগ
রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্ভিস জেটি ঘাটে লোড-আনলোডের শ্রমিক সরবারহকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে শাহিন মৃধা ও আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এরই জেরে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৫০-৬০ লোক শাহিন মৃধার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় শাহিন মৃধা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
ঘটনা সম্পর্কে শাহীন মৃধার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, তার ভাই রুবেল মৃধা বলেন, “এক নেতার নির্দেশে কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে আমার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মহসিন তালুকদার কলাপাড়া থেকে শতাধিক লোক ভাড়া করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আমরা বিচার দাবি করছি।”
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার বলেন, “আমি ১২ লাখ টাকার একটি কাজ পেয়েছি। মানে বার্জ আর পেলুডার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছি। কাজ পাওয়ার পরই শাহিন মৃধা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। তাকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছি। পরে আরো ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে, ওই টাকা না দেওয়ায় গতকাল সোমবার রাতে আমার লোকজনকে মেরে বার্জ আর পেলুডার ছিনতাই করেছে। সেগুলো কোথায় আছে তা জানি না।”
তিনি বলেন, “আজ সকালেও আমার লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। আমি থানায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে অভিযোগ করেছি, কিন্তু পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। আগুনের ঘটনার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত না। তিনি (শাহিন মৃধা) নিজেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছেন।”
কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ