পটুয়াখালীর কলাপাড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিঘাটে শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার উপজেলার মরিচবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহীন মৃধা ও আহত মিরাজ হাওলাদার এ ঘটনার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনের লোকজনকে দায়ী করেছেন। আহত অন্য দু’জন হলেন দোলন মৃধা ও রানা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিঘাটে শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মৃধা এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিনের পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। মঙ্গলবার ৫০-৬০ জন শাহীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালান।
এক পর্যায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। শাহীন মৃধার দাবি, তাঁর পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, তিন দিন আগে এখানে মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অংশগ্রহণ করেন। এ কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার ইন্ধনে মহসিন ও কাজলের নেতৃত্বে অফিস পোড়ানো হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মহসিন বলেন, ‘আমি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছি। এতে শাহীন মৃধা ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদা দাবি করেন। শ্রমিকদের কাজে বাধা দেন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, জানি না। তার পরও আমাকে দোষারূপ করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কলাপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, শাহীন মৃধা ও মহসিন মামা-ভাগনে। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা সবাই চিহ্নিত। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র এ ঘটন মহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়।
আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।
জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।
যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।
এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।
গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।