সংকট কাটাতে গত ৭ মে শিল্পে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সপ্তাহ পেরোলেও সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সরবরাহ খুব একটা বাড়েনি। ভোগান্তি আগের মতো রয়ে গেছে। ২৫ কোটি ঘনফুটের বিপরীতে মিলছে মাত্র চার থেকে পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা দিনের বড় একটা সময় বন্ধ থাকছে। এর ফলে উৎপাদনে ধস নেমেছে। বিদেশি ক্রেতাদের পণ্য সময়মতো সরবরাহ করাতে পারছেন না শিল্প উদ্যোক্তারা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি আয়। আগামী ঈদে সময়মতো শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লোকসান ঠেকাতে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে পড়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। সমস্যার সমাধান চেয়ে সম্প্রতি জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে চিঠি পাঠায় টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংগঠনটির সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাস সরবরাহে যে সংকট, তা অব্যাহত থাকলে বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন আরও কমে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সামনে ঈদুল আজহায় শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি হতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কাও রয়েছে বলে চিঠিতে সতর্ক করা হয়।
এরপর গত ৭ মে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জ্বালানি উপদেষ্টা। সভা শেষে তিনি জানান, শিল্পে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে। এর মধ্যে রমজানে বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট থেকে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরিয়ে শিল্প খাতে দেওয়া হবে। মে থেকে আগস্ট– এই চার মাসে চারটি অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো আমদানি করা হবে। এর ফলে দৈনিক আরও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।
তবে শিল্পমালিকরা বলছেন, এখনও তারা প্রায় আগের মতো গ্যাস পাচ্ছেন। পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি, বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে সংকট প্রকট হয়েছে। নিট গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি।
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী এলাকায় গ্যাস সরবরাহকারী তিতাসের এক ব্যবস্থাপক সমকালকে জানিয়েছেন, তারা এক সপ্তাহ আগে যে পরিমাণ গ্যাস পেতেন, এখনও প্রায় সমপরিমাণ গ্যাস পাচ্ছেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস থেকে গাজীপুর অঞ্চলে সরবরাহ একটু বাড়ানো হয়েছে। সেটিও চার থেকে পাঁচ কোটি ঘনফুটের বেশি না।
পেট্রোবাংলার সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬ মে দেশে দৈনিক মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে বিদ্যুতে দেওয়া হয় ১০৭ কোটি, সারে ১২.
পেট্রোবাংলার এক পরিচালক সমকালকে বলেন, রমজানে বিদ্যুতে যে গ্যাস দেওয়া হতো, তা এপ্রিলেই কমানো হয়েছে। আর রমজানের চেয়ে বর্তমানে গ্যাসের মোট সরবরাহ কমেছে প্রায় ১৪ কোটি ঘনফুট। ফলে চাইলেই শিল্পে সরবরাহ খুব বেশি বাড়ানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বাড়তি যে এলএনজি কার্গো আসার কথা রয়েছে, তা আসবে চলতি মাসের শেষের দিকে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
জানতে চাইলে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির সমকালকে বলেন, চাইলেই তো রাতারাতি গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো যায় না। তার ওপর গত দু’দিন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। তাই বিদ্যুতেও বেশি গ্যাস দিতে হচ্ছে। এর পরও তিতাসকে যতটুকু সম্ভব বেশি গ্যাস দিতে বলা হয়েছে। আর বাড়তি এলএনজি কার্গো কেনার অর্থ জোগাড় করতে হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) অনুমোদন পাওয়া গেছে। ২১ বা ২২ মে কার্গোটি দেশে আসার কথা রয়েছে। তখন শিল্পে সরবরাহ আরও বাড়বে।
সাভার ও আশুলিয়ায় শিল্প ধুঁকছে
সাভারের হেমায়েতপুরের বৃহত্তর পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান একেএইচ গ্রুপ। এই তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। কারখানার মালিক আবুল কাশেম সমকালকে জানান, এপ্রিলের চেয়ে এ মাসে গ্যাস সংকট আরও বেড়েছে। সরকার গ্যাস সংকট উত্তরণে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ এজ পোশাক কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বলেন, আমাদের পোশাক কারখানায় প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপ)। সেখানে গ্যাস পাচ্ছি ১ থেকে ২ পিএসআই। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিদেশি ক্রেতা হারাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ায় কারখানা রয়েছে এক হাজার দুইশর বেশি। কয়েক মাস ধরে এসব কারখানা গ্যাস সংকটে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে আছে। সাভারের উলাইল এলাকার আল-মুসলিম পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপক মোসলেমুদ্দিন জানান, জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য পোশাক কারখানাগুলোয় ১৫ পিএসআই চাপের গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু গত ১ জানুয়ারি থেকে এ চাপ ২-৩ পিএসআইয়ে নেমে এসেছে। এতে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন ওই কারখানায় দেখা যায়, ড্রায়ার মেশিনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় তৈরি পোশাক ওয়াশ করা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। তিতাসের আশুলিয়া জোনের ব্যবস্থাপক আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন জানান, লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সাভার ও আশুলিয়া শিল্প এলাকায় গ্যাসের চাপ কম।
গাজীপুরেও সংকট
গতকাল দুপুরে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা জিন্স লিমিডেট কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংকটে শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছেন। তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারেক হাসান বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ ছিল ১ পিএসআইয়েরও কম। অথচ কারখানা চালানোর জন্য প্রয়োজন ১৫ পিএসআই। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শুধু ডিজেল কেনায় প্রতিদিন বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। পাশের মৌচাক এলাকার ফ্যাশন ওয়্যার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পরিস্থিতি আরও খারাপ। এ কারখানায় গ্যাস সবরাহ নেই বললেই চলে। পাঁচ হাজার শ্রমিকের কারখানাটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আংশিক চালানো হচ্ছে। গতকাল এ কারখানার ৭৫ শতাংশ শ্রমিক অলস সময় পার করেছেন। সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা সমকালকে বলেন, ডিজেল বাবদ প্রতিদিন চার লাখের বেশি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। তারপরও পুরোপুরি চালাতে পারছি না। এখন ঠিকমতো উৎপাদন করতে না পারলে ঈদের আগে বড় ধাক্কা আসতে পারে। ঈদের আগে বেতন-বোনাস দিতে না পারলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় কে জানে।
সফিপুর আনসার একাডেমি এলাকার স্টারলিং নামক পোশাক তৈরির কারখানার নিজস্ব জেনারেটরটি গ্যাস সংকটে কারণে চালানো যাচ্ছে না। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় শ্রমিকদের কর্মস্থলে বসে থাকতে হচ্ছে।
গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মহর আলী বলেন, জেলা ও মহানগরে দুই হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারখানা পরিদর্শনে গেলে কর্তৃপক্ষ প্রায় সময়ই গ্যাস সংকটের বিষয়ে অভিযোগ করেন। তিতাস গ্যাসের গাজীপুর জোনের ব্যবস্থাপক রিদওয়ানুজ্জামান সমকালকে বলেন, জেলা ও মহানগরে দৈনিক প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। তবে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ কোটি ঘনফুট।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ ঘনফ ট গ য স পর স থ ত ম হ ম মদ প এসআই এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য যে দেশগুলো বেশি দায়ী সেই দেশগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বরাদ্দকৃত অর্থ পেয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো ধনী পেট্রো দেশগুলো রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং কার্বন ব্রিফ জাতিসংঘে জমা দেওয়া তথ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, কীভাবে জনসাধারণের কোটি কোটি ডলার বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খরচ করা হচ্ছে।
তদন্তে একটি ব্যাপকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা পাওয়া গেছে যা ধনী দূষণকারীদের থেকে দুর্বল দেশগুলোতে মূলধন স্থানান্তর করে, তাদের অর্থনীতি স্বচ্ছ করতে এবং একটি উষ্ণ বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে।
কিন্তু আরো দেখা গেছে যে, তহবিলের বৃহত্তম অংশের বিতরণে কোনো কেন্দ্রীয় তদারকি ছিল না। এই বিতরণ সম্পূর্ণরূপে আলাদা আলাদা দেশগুলোর বিবেচনার ভিত্তিতে ছিল। তাই এটি রাজনৈতিক স্বার্থের বিষয় ছিল এবং সবসময় যেখানে এই তহবিল যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ হয়নি।
অবশ্য সরকারি তথ্য জলবায়ু তহবিলের সব প্রাপকের সন্ধান করার জন্য যথেষ্ট বিস্তৃত নয়। তবে গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে তহবিলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ বিশ্বের ৪৪টি দরিদ্রতম দেশে গেছে, যা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে পরিচিত। এর বেশিরভাগই ছিল অনুদানের পরিবর্তে ঋণের আকারে।
কিছু স্বল্পোন্নত দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পেয়েছে, যার পরিশোধের শর্ত সরকারকে আরো ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিতে পারে। বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলার ক্ষেত্রে ঋণের অংশ ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।
বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার জন্য দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের এক শীর্ষ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য তাদের বৃহত্তর দায়িত্ব পালন এবং সমাধানের জন্য তহবিল সরবরাহের ক্ষমতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক জমা দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে কোপেনহেগেনের লক্ষ্যমাত্রা বিলম্বিতভাবে পূরণ করা হয়েছিল। ওই সময় ২০ হাজারেরও বেশি বৈশ্বিক প্রকল্পের আওতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে পেট্রো ডলারের দেশগুলোর কাছে, সেইসাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের কাছে।
ফ্রান্স ও কানাডার সমান মাথাপিছু জিডিপিসহ জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক সংযুক্ত আরব আমিরাত জাপান থেকে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে যা জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আবুধাবিতে একটি অফশোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের জন্য ৬২৫ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে একটি বর্জ্য পোড়ানোর যন্ত্রের জন্য ৪৫২ মিলিয়ন ডলার।
বিশাল তেলক্ষেত্র এবং আরামকোর বেশিরভাগ মালিকানাধীনতার কারণে শীর্ষ ১০ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সৌদি আরব। এই দেশটি জাপান থেকে প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তার বিদ্যুৎ কোম্পানিকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং একটি সৌর খামারের জন্য ৭৮ মিলিয়ন ডলার।
বলকান অঞ্চলের ছয়টি দেশ যারা ইইউতে যোগদানের আশা করছে তারা জলবায়ু অর্থায়নে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে। অর্থের সিংহভাগ সার্বিয়ায় গেছে, যা মাথাপিছু ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় ১০ গুণ বেশি অর্থ পেয়েছে।
প্রতিবেদনের সময়কালে ভারত ছিল এককভাবে বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী, যেটি প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। একইসময় চীন পেয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, যা বেশিরভাগই বহুপাক্ষিক ব্যাংক থেকে।
ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিচালক সারা কোলেনব্র্যান্ডার বলেন, “এর ফলে ইসরায়েল, কোরিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো - যারা গত ৩০ বছরে প্রচুর পরিমাণে কার্বন পদচিহ্নের কারণে ধনী দেশ হয়ে উঠেছে - তাদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বাধ্য করছে। এটা হাস্যকর যে এই জাতীয় দেশগুলো টোগো, টোঙ্গা এবং তানজানিয়ার মতো দেশগুলোর মতো একই বিভাগে রয়ে গেছে।”
বিশ্বের কিছু দরিদ্রতম দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পায়, যদিও সতর্ক করা হয়েছে যে অনেকেই শর্তাবলী এবং সুদ পরিশোধ করতে পারে না।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জলবায়ু অর্থায়ন পরিচালক ঋতু ভরদ্বাজ বলেন, “জলবায়ু অর্থায়নের লুকানো গল্প প্রতিশ্রুতির পরিমাণে নয় বরং এর আকারে। জলবায়ু অর্থায়ন দরিদ্র দেশগুলোর উপর আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দান করা অর্থ যদি একটি ছাড়ের ঋণও হয়, তবুও সেই ঋণগুলোর এমন শর্তও থাকে যা গ্রহীতার চেয়ে ঋণদাতাকেই বেশি লাভবান করতে পারে।”
ঢাকা/শাহেদ