ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল মানবিক ও ত্রাণসহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় সেখানে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এতে অবরুদ্ধ উপত্যকার ২১ লাখ বাসিন্দা, বিশেষ করে শিশুরা দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গত সোমবার প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে গঠিত একটি সংস্থা হচ্ছে আইপিসি।

আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনো দুর্ভিক্ষ শুরু হয়নি। তবে পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে, তাতে দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

কয়েক মাসের আলোচনার পর গত বছরের শেষ দিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরপর সেখানে ত্রাণসহায়তা ঢুকতে শুরু করলে সাময়িক স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুই মাসের মাথায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল আবারও নির্বিচার ও নৃশংসভাবে হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটতে শুরু করে।

বর্তমানে গাজার প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার বাসিন্দা ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মধ্যে রয়েছেন বলে আইপিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, এতে দিন দিন সেখানে দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে। গাজার ২১ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

গাজার বর্তমান খাদ্যসংকট পরিস্থিতি তুলে ধরে আইপিসির মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজার প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দা, অর্থাৎ উপত্যকাটির প্রতি পাঁচজনে একজন বর্তমানে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ খাদ্যসংকট যদি চলতেই থাকে, তাহলে আগামী ১১ মাস, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল নাগাদ পাঁচ বছরের কম বয়সী গাজার প্রায় ৭১ হাজার শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।

খাবারের জন্য ভিক্ষা

খাবারের জন্য গাজার ফিলিস্তিনের মরিয়া হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে আইপিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গাজার অনেক পরিবার খাবারের জন্য ভিক্ষার মতো কাজ করতেও বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ আবর্জনার স্তূপে কিছু পেলে তা বিক্রি করে খাবার কেনার চেষ্টা করছেন।

চলমান সংঘাতের কারণে গাজায় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকট চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গাজার খাদ্যসংকট নিয়ে এর আগে গত বছরের অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আইপিসি। সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে তাদের সর্বশেষ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সময়কার তুলনায় বর্তমানে গাজার খাদ্যসংকটে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেখানকার মানুষের জীবনে বয়ে এনেছে চরম দুর্দশা।

আইপিসির মূল্যায়নে উঠে এসেছে, গাজার ১৯ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি, অর্থাৎ সেখানকার ৯৩ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২ লাখ ৪৪ হাজার রয়েছেন বিপর্যয়কর খাদ্যসংকটে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা, দাতব্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারের নেওয়া একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ আইপিসি। বিশ্বের কোনো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে কি না অথবা কোথাও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইপ স র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া আর নেই

কারো মৃত্যু সংবাদ পেলেই তড়িঘড়ি করে খুন্তি-কোদাল, দা, চাকু, স্কেল আর করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া।

শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মনু মিয়ার চাচাতো ভাই আবদুর রউফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মনু মিয়া। গত ১৪মে তাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এক রকম মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা হয়েছিল তার। তারপর বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর নিজ গ্রামে ফেরেন। এরপর ভালই ছিল, হঠাৎ তিনি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন জানা যায় তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরপর আজ সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মনু মিয়া কবর খোঁড়ার পর মৃত ব্যক্তির পরিবারের কারো কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক বা যাতায়াত খরচ নিতেন না। এমনকি খাবারের বেলায়ও ছিল তার একই নিয়ম। নিজের বাড়ি থেকে খেয়ে রওনা না হতে পারলে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েও খেতেন নিজ খরচে।

মনু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ১৫ মার্চ। কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করছিলেন ১৯৭২ সাল থেকে। এ পর্যন্ত ৩ হাজারেরও বেশি খবর খুঁড়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মনু মিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেসময় মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ডোবায় মনু মিয়ার ঘোড়াটির মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন।

ধারণা করা হয়, ঘোড়াটিকে বাড়ি থেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণে মারা যায় ঘোড়াটি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে স্ত্রী ও স্বজনরা তার কাছে বিষয়টি গোপন রাখেন।

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাহরাইনকে ‘সেভেনআপ’ বাংলাদেশের
  • অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা অবনতির দিকে
  • নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
  • ডাইনোসরের আগে পৃথিবীতে কাদের রাজত্ব ছিল, কী খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
  • হারিয়ে যাওয়া ভাষা রক্ষায় এআই
  • নিউমুরিং টার্মিনাল বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনীর পরিচালনার ব্যাপারে আলোচনা
  • পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও গবেষক চাই, ভোটার নয়
  • ‘আরেকটু চিন্তা করতে পারত, দলটা তো আগে…’, নাজমুলকে নিয়ে বিসিবি সভাপতি
  • শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়া প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘জেনে নেই’
  • ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া আর নেই