দুর্ভিক্ষের ‘মারাত্মক ঝুঁকিতে’ গাজার ২১ লাখ বাসিন্দা
Published: 14th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল মানবিক ও ত্রাণসহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় সেখানে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এতে অবরুদ্ধ উপত্যকার ২১ লাখ বাসিন্দা, বিশেষ করে শিশুরা দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গত সোমবার প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে গঠিত একটি সংস্থা হচ্ছে আইপিসি।
আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনো দুর্ভিক্ষ শুরু হয়নি। তবে পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে, তাতে দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
কয়েক মাসের আলোচনার পর গত বছরের শেষ দিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরপর সেখানে ত্রাণসহায়তা ঢুকতে শুরু করলে সাময়িক স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুই মাসের মাথায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল আবারও নির্বিচার ও নৃশংসভাবে হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটতে শুরু করে।
বর্তমানে গাজার প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার বাসিন্দা ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মধ্যে রয়েছেন বলে আইপিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, এতে দিন দিন সেখানে দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে। গাজার ২১ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
গাজার বর্তমান খাদ্যসংকট পরিস্থিতি তুলে ধরে আইপিসির মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজার প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দা, অর্থাৎ উপত্যকাটির প্রতি পাঁচজনে একজন বর্তমানে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ খাদ্যসংকট যদি চলতেই থাকে, তাহলে আগামী ১১ মাস, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল নাগাদ পাঁচ বছরের কম বয়সী গাজার প্রায় ৭১ হাজার শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।
খাবারের জন্য ভিক্ষা
খাবারের জন্য গাজার ফিলিস্তিনের মরিয়া হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে আইপিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গাজার অনেক পরিবার খাবারের জন্য ভিক্ষার মতো কাজ করতেও বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ আবর্জনার স্তূপে কিছু পেলে তা বিক্রি করে খাবার কেনার চেষ্টা করছেন।
চলমান সংঘাতের কারণে গাজায় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকট চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গাজার খাদ্যসংকট নিয়ে এর আগে গত বছরের অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আইপিসি। সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে তাদের সর্বশেষ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সময়কার তুলনায় বর্তমানে গাজার খাদ্যসংকটে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেখানকার মানুষের জীবনে বয়ে এনেছে চরম দুর্দশা।
আইপিসির মূল্যায়নে উঠে এসেছে, গাজার ১৯ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি, অর্থাৎ সেখানকার ৯৩ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২ লাখ ৪৪ হাজার রয়েছেন বিপর্যয়কর খাদ্যসংকটে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা, দাতব্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারের নেওয়া একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ আইপিসি। বিশ্বের কোনো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে কি না অথবা কোথাও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে গুগলের জেমিনি এআই
গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে ভিডিও ও অডিও তৈরি, শিশুদের জন্য ছবিসহ বই প্রকাশ বা ভ্রমণ পরিকল্পনা—সবই করা সম্ভব। কিন্তু এর সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ ও ঝুঁকিও। সম্প্রতি একদল গবেষক একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেখিয়েছেন, ভুল হাতে পড়লে জেমিনি এআই স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সিনেমায় প্রায়ই দূর থেকে ঘরের বাতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা তাপমাত্রা বদলে দেওয়ার মতো দৃশ্য দেখা যায়। গবেষকদের প্রদর্শনীতে ঠিক তেমন দৃশ্যই বাস্তবে দেখা গেছে। জেমিনি ব্যবহারে পরিচালিত ডিভাইস হ্যাক করে ঘরের স্মার্ট যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ও সেগুলো ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি করার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন তাঁরা।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষক দলটি একটি গুগল ক্যালেন্ডার ইনভাইটেশনের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকা জেমিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট হ্যাক করে। এরপর ইনভাইটেশন লিংকে বিশেষভাবে তৈরি ক্ষতিকর কোড যুক্ত করে। গবেষকেরা জেমিনিকে ইনভাইটেশনের বিবরণ সংক্ষেপে বলার প্রম্পট দিলে কোডটি সক্রিয় হয়ে পড়ে। এরপর তা ঘরের অন্যান্য ডিভাইসে ধারাবাহিকভাবে কমান্ড কার্যকর করতে থাকে। ফলে এটি স্পষ্ট যে ভুল ব্যবহারে এআই ভয়াবহ হুমকি তৈরি করতে পারে। স্মার্ট ডিভাইসগুলো এমন আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর সঙ্গে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) যুক্ত হলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
হ্যাকিংয়ের প্রক্রিয়ার পুরো প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ না করলেও গবেষকেরা জানান, স্মার্ট হোম প্রযুক্তিতে এআই ব্যবহারের আগে শক্তিশালী সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সম্ভবত এ কারণেই গুগল এখনো তাদের স্মার্ট স্পিকারে জেমিনি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। তবে গুগলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিগগিরই জেমিনি স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্ট টিভি, এমনকি গাড়িসহ আরও বেশ কিছু যন্ত্রাংশে জেমিনি এআই যুক্ত করা হবে।
এআইয়ের মাধ্যমে স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বীকার করেছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এআই দিয়ে স্মার্ট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। যদিও এখনো এ ধরনের আক্রমণ বাস্তবে ঘটেনি। তবে তারা জানিয়েছে, যেকোনো বিপর্যয় এড়াতে তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।
সূত্র: নিউজ১৮