অশ্লীলতার অভিযোগে অভিনেত্রী-নির্মাতাদের লিগ্যাল নোটিশ
Published: 14th, May 2025 GMT
সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে অশ্লীলতার অভিযোগে কয়েকজন তারকা অভিনেত্রী ও মেন্টরকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
যাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন, তারা হলেন— মেন্টর নির্মাতা প্রবীন রহমান চৌধুরী, মেন্টর গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মেন্টর তানিম রহমান অংশু এবং সিনথিয়া ইয়াসমিন, অভিনেত্রী কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, মডেল শাম্মি ইসলাম নিলা ও আলিশা।
আইনজীবী মো.
আরো পড়ুন:
ছোটবেলা থেকেই খুব খেলতে চাইতাম: তাসনুভা তিশা
সাগরপাড়ে প্রেমের ঢেউ, চমকের চুমুর ছবি ভাইরাল!
বর্তমানে আমরা দেখতে পেয়েছি, সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ-২০২৫ টুর্নামেন্ট ছাড়া হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন মডেলসহ ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন। সেই সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে মারিয়া মিম, সিনথিয়া ইয়াসমিন, কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, শাম্মি ইসলাম নিলা ও আলিশা তাদের শালীনতা বজায় না রেখে অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গিমাসহ ক্রিকেট খেলার জন্য বা প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সঠিক ড্রেস না পরে ছোট ছোট ড্রেস পরে ক্রিকেট খেলার নামে সমাজে ছোট-বড় সবার মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। একইসঙ্গে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং অভিনেত্রী মারুফা আক্তার জামান নিজেও ইন্টারভিউতে বলেন, ফিগার যদি না দেখাতে পারে তাহলে কীভাবে হলো? এ থেকে স্পষ্ট, ক্রিকেটের নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অভিনেত্রীরা, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে।
শালীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে এ নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বেশিরভাগ যেহেতু মুসলিম এবং ইসলামকে ধারণ করেন, তাই সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ নামে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে না দিয়ে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের সব খেলোয়াড়দের শালীন ড্রেস মেইনটেইন করে খেলার জন্য আহ্বান করা হলো। তাতে যেমন সমাজ অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আরো বেশি ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।
নির্মাতা ও কয়েকজন অভিনেত্রীর নাম উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, নির্মাতা প্রবীন রহমান চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও তানিম রহমান অংশু উক্ত খেলা পরিচালনা করছেন, তাই তাদের সুপরামর্শে অশ্লীল ড্রেসকোড পরা অভিনেত্রীদের শালীনতায় ফিরিয়ে আনবেন এবং ক্রিকেট খেলার নামে যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে তা থেকে ক্রিকেটকে মুক্ত রাখবেন। নোটিশ গ্রহীতা মারিয়া মিম, সিনথিয়া ইয়াসমিন, কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, শাম্মি ইসলাম নিলা ও আলিশা ক্রিকেট খেলার নামে অশ্লীল ড্রেস কোড না পরে সুন্দর শালিন ড্রেস কোডের মাধ্যমে খেলায় অংশগ্রহণের ও প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য আহ্বান করা হলো।
পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে অশ্লীল ড্রেস পরে ও অঙ্গ-ভঙ্গি করে কেন ক্রিকেট খেলার মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়েছেন, তার জন্য জবাব দাখিল করতে বলা হলো। অন্যথায় সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ-২০২৫ এই ক্রিকেট খেলা নিয়ে সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানোর দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৫ মে রাজধানীর বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০২৫’-এর উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার (১৩ মে) এ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এ আসরে জয় লাভ করেছে গিগাবাইট টাইটানস। এ দলে খেলেছেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ, শরিফুল রাজ, মৌসুমী হামিদ, মেহজাবীন চৌধুরী প্রমুখ।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক র জন য ইসল ম রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা আইনজীবী সমিতির ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে: অডিট
বিগত পাঁচ বছরে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলামসহ ওই আমলে সমিতির নেতৃত্বে থাকা আইনজী বীদের বিরুদ্ধে মানিস্যুট মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায়।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় এ অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নূরুল হাসান রুবা।
সভায় সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু উক্ত টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়- তা জানতে চাইলে সাধারণ সদস্যরা সকলেই মামলার ব্যাপারে সম্মতি দেন। এসময় সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেকের প্রস্তাবে সিনিয়র সিভিল আইনজীবীদের দিয়ে ১১ সদস্যের প্যানেল করে মামলার আরজি লেখার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
এসময় জেলা পিপি অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান তুষার, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ হোসেন রনিসহ অনেক সিনিয়র আইনজীবী ও সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা চলাকালে অর্থ আত্মসাতের ধরন দেখে অনেকেই বিষ্মিত হন। সমিতির নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করেও কোটি কোটি টাকার লেনদেন যেমন করা হয়েছে- তেমনি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অসামঞ্জস্য লেনদেন এমনকি কারণ ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই নামে বেনামে টাকা আত্মসাতের চিত্র ফুটে ওঠে সভায়।
আবার ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের দিন এবং পরদিনও (৬ আগস্ট) টাকা উত্তোলনের প্রমাণ মেলে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত অডিটে এমন তথ্যও সাধারণ সভায় অডিটের বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
অডিটে ২৬ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। ৭৮ পৃষ্ঠার অডিট প্রতিবেদনে ২৬ দফা অনিয়মের বিস্তারিত তুলে ধরে বলা হয়, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, ভুয়া বিল, অনুমোদনবিহীন বিনিয়োগ এবং ব্যক্তিগত ঋণের নামে সমিতির তহবিল থেকে মোট ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৯ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অডিট প্রতিবেদনে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এফডিআর ও ডিপিএস বিনিয়োগে অনিয়ম, নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন ছাড়া একাধিক এফডিআর ভেঙে নগদ উত্তোলন এবং নতুন এফডিআর খোলা হয়েছে। যার কোনোটির নথি নেই।
কয়েকজন সাধারণ সদস্য ও কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ফেরতের কোনো প্রমাণ নেই। অফিস রক্ষণাবেক্ষণের নামেও অর্থ আত্মসাতের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নির্মাণকাজের জন্য ভুয়া বিল তৈরি এবং বাজার দরের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের প্রমাণ মিলেছে। গঠনতন্ত্রবিরোধী ব্যয়ও হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই নগদ উত্তোলন ও খরচ, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কোনো নথি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত নগদ অর্থ ও ব্যাংক স্টেটমেন্টের হিসাব মেলেনি। আর্থিক রেজিস্টার, বিল ভাউচার ও চেক কাউন্টারফয়েল অডিট টিমকে সরবরাহ করা হয়নি। প্রাথমিক হিসাবে অনিয়মের আর্থিক পরিমাণ ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৯ টাকা হলেও অডিট টিম জানিয়েছে, লুকানো বা অসম্পূর্ণ নথি পরীক্ষা করলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইনগত তদন্ত শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাৎসরিক অডিট অনলাইন অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম চালু, আর্থিক লেনদেন সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে অডিট প্রতিবেদনের এমন চিত্র সাধারণ সভার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলেও অভিযুক্তদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চব্বিশের ৫ আগস্টের পর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামসহ তৎকালীন কেবিনেটের অনেকেই গা ঢাকা দিলেও ৬ আগস্ট ব্যাংক লেনদেন কীভাবে হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অধিকাংশ ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রভাবশালী আইনজীবী সংগঠন। যেখানে সদস্য সংখ্যা এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি এবং বার্ষিক লেনদেন কয়েক কোটি টাকা ছাড়ায়। তহবিল ব্যবহৃত হয় সাংগঠনিক কার্যক্রম, সদস্য কল্যাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইন সহায়তা তহবিলের জন্য।
অডিট প্রতিবেদন প্রকাশের পর খুলনার আইনজীবী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, এ ঘটনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস