জাতিসংঘের প্রতিবেদন ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা কেন নয়, রুল হাইকোর্টের
Published: 14th, May 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান আহরণ বা গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি কেন সংরক্ষণ করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন।
এর আগে ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখা এবং গণহত্যায় (জুলাই-আগস্ট) দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো.
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ ও গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল। ওই প্রতিবেদন গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি যুক্ত করে চলতি মাসে সম্পূরক আবেদনটি করেন রিট আবেদনকারী।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
পরে আইনজীবী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জড়িতদের বিচারের জন্য গত বছরের আগস্টে রিটটি করা হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে রুল দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আইন সংশোধন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দল কাজ করছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে দেখা যায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে খুন করা হয়েছে। এখানে কীভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে, এখানে রাজনৈতিক প্রভাব কেমন ছিল এবং সে সময় বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল অর্থাৎ প্রতিবেদনটি যথাযথ। এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তাই তিনটি উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি সংরক্ষণ করা উচিত। শুনানি নিয়ে আদালত ওই রুল দেন।
আরও পড়ুনদায়ীদের সুবিচার নিশ্চিতের তাগিদ ফলকার টুর্কের০৫ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরার আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন
মাগুরার আলোচিত সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়েছে। আজ সোমবার অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অংশ নেন। দুপুর ১২টার দিকে মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। মঙ্গলবার আবারও এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের শনাক্ত করা ও তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন। এখন যুক্তিতর্ক চলছে। আগামীকালও যুক্তিতর্ক হবে। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ জানাবেন আদালত। আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ যেসব প্রমাণ রয়েছে, তাতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করা যায়।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সোহেল আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তিতর্কে আমি অংশ নিয়েছি। মামলায় সকল সাক্ষী বলেছেন তাঁরা শুনেছেন। কেউই এই ঘটনা দেখেননি। বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন।
মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল আছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছিল ৫ তারিখ (মার্চ) দিবাগত রাতে এবং শিশুটির বোনের স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তাঁর বাবা শিশুটিকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৬ মার্চ সকালে শিশুটির বোনের কক্ষে। এ সময় শিশুটির বোন ওই বাড়ির মধ্যে ছিলেন।
শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।