গুগল ম্যাপসে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম বদলে ফেলায় গুগলের বিরুদ্ধে মামলা মেক্সিকোর
Published: 15th, May 2025 GMT
গুগল ম্যাপসে মেক্সিকো উপসাগরের নাম ‘গালফ অব মেক্সিকো’র বদলে ‘গালফ অব আমেরিকা’ দেখা যাওয়ায় গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেক্সিকো। বিতর্কের সূত্রপাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দেশটির ফেডারেল সংস্থাগুলোকে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র পরিবর্তে ‘গালফ অব আমেরিকা’ নাম ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের এই আদেশের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিজেদের মানচিত্রে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম বদলে ফেলে গুগল। নতুন এ পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীরা গুগল ম্যাপসে উপসাগরটির নাম ‘গালফ অব আমেরিকা’ দেখতে পেলেও মেক্সিকোতে বসবাসকারীরা আগের নাম অর্থাৎ ‘গালফ অব মেক্সিকো’ দেখতে পাচ্ছেন। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো বাদে অন্য দেশ থেকে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম গালফ অব মেক্সিকো (গালফ অব আমেরিকা) দেখা যাচ্ছে।
গুগলের এ সিদ্ধান্তকে একতরফা ও আন্তর্জাতিক নিয়মবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম। সম্প্রতি দেশটির রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কোনো দেশ আন্তর্জাতিক জলসীমাসংলগ্ন কোনো ভূখণ্ডের নাম একতরফাভাবে পরিবর্তন করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো রাজ্য, পাহাড় কিংবা হ্রদের নাম পরিবর্তন করে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু যে অংশ মেক্সিকো বা কিউবার সীমানার মধ্যে পড়ে, সেটির নাম তারা ইচ্ছেমতো পাল্টাতে পারে না।’
রিও গ্র্যান্ড নদীর মধ্যবিন্দু ধরে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে। এই উপসাগর ঘিরে রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার উপকূলরেখা। মেক্সিকো সরকারের দাবি, এ উপসাগরের নাম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং ‘গালফ অব মেক্সিকো’ নামটি বহু যুগ ধরে প্রচলিত। গুগলের এই নাম পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক বাস্তবতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর আগে গুগলকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছিল মেক্সিকো সরকার।
আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র বদলে দেখা যাবে ‘গালফ অব আমেরিকা’, কারণ কী২৯ জানুয়ারি ২০২৫মেক্সিকো সরকার বারবার অনুরোধ করলেও মানচিত্রে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি গুগল। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস টার্নার জানান, তারা দীর্ঘদিনের নীতিমালা অনুসরণ করেই মানচিত্র হালনাগাদ করেছে এবং বিষয়টি নিরপেক্ষভাবেই দেখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গুগলের পাশাপাশি অ্যাপলও তাদের ম্যাপস সেবায় একই ধরনের পরিবর্তন এনেছে। তবে মেক্সিকো আপাতত অ্যাপলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে নিজের অবস্থানের তথ্য অন্যকে জানাবেন যেভাবে০২ জানুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আত্মগোপনে থাকা আ.লীগ নেতা বেন্টু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আত্মগোপনে থাকা আজিজুল আলম বেন্টু (৫৩), তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিনের (২৯) বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আজিজুল আলম বেন্টু আত্মগোপনে রয়েছেন।
রোববার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।
মামলার বাদী আমির হোসাইন জানান, আজিজুল আলম বেন্টু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিন (২৯)।
দুদক জানায়, তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিলে ৯ দশমিক ৪০০৮১৮৯ একর জমির সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। ফলে আয়বর্হিভূত ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখা যায়।
অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিনী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে নাসিমা আলমের দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকার। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে।
২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। তারও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাও দিয়েছেন।
দুদক বলছে, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় বেন্টুর স্ত্রী-ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘মামলটি দায়ের করার পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’