ময়লা ফেলে পরিত্যক্ত জায়গা দেখিয়ে পুকুর ভরাট, ১০ জনকে আসামি করে মামলা
Published: 15th, May 2025 GMT
ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরে প্রথমে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিত্যক্ত জায়গার মতো তৈরি করা হয়। এরপর টানা চার থেকে পাঁচ মাস রাতের আঁধারে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা পেয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে সিলেটের বিয়ানীবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
ঘটনাটি ঘটেছে বিয়ানীবাজার উপজেলার ফতেপুর মৌজার নবাং গ্রামে। গত সোমবার মামলাটি করা হয়েছে। বিষয়টি আজ বৃহস্পতিবার সকালে জানাজানি হয়েছে। ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার নবাং গ্রামের আবদুর রশীদ, আবদুস সবুর, আবদুল হাই, আবদুল ফাত্তাহ, করিমুন নেছা, ফয়সল আহমদ ও জয়নাল মিয়া; মাটিজুরা গ্রামের ফরিদা ইয়াসমিন, সুপাতলা গ্রামের সাহাব উদ্দিন সাবু এবং মাথিউরা গ্রামের শাহিনুল ইসলাম। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৬(ঙ) লঙ্ঘন করায় মামলাটি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, মামলাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযোগ পেয়ে ১৯ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর ভরাটের সত্যতা পান। এ অবস্থায় পুকুর ভরাট বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট একজনকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরও রাতের আঁধারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুকুর ভরাটের কাজ অব্যাহত রাখেন। এ অবস্থায় ৮ মে রাত ১১টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুর ভরাটে বাধা দেন। এ সময় পুকুর ভরাটে ব্যবহৃত দুটি ট্রাক নিয়ে চালকেরা পালিয়ে যান; তবে দুটি মোটরসাইকেল রেখে যান। উপস্থিত লোকজন মোটরসাইকেলগুলো বিয়ানীবাজার থানায় নিয়ে যান। গত শনিবার বাদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর ভরাটের সত্যতা পেয়ে থানায় মামলা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পুকুরটি বড় ও গভীর ছিল। জমির মালিকেরা ইচ্ছে করে সেখানে ময়লা ফেলে অংশবিশেষকে পরিত্যক্ত করে ধীরে ধীরে ভরাটের উপযোগী করেন। চার থেকে পাঁচ মাস ধরে রাতের অন্ধকারে পুকুরটি ভরাট করেছেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ক র ভর ট ভর ট র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে চালানো হামলায় তছনছ হচ্ছে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চল। রাতভর অঞ্চলটি কেঁপে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের শব্দে। গত সোমবার রাতে সেখানে হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যা করা হয়েছে ৮৯ ফিলিস্তিনিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। জুলাইয়ের শেষ দিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আলোচনা থেকে সরে যায় দুই পক্ষ। এরপর গাজা সিটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল সরকার। তখন থেকেই সেখানে তীব্র হামলা চলছে। কত দিন এই হামলা চলবে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েল।
গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৯ জনের মধ্যে ৩১ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫১৩ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৫৯৯ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সবাই বেসামরিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে গাজা সিটির জাইতুন এলাকায় দুটি বাড়ি ও মধ্যাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে হামলায় এক শিশু ও তার মা–বাবাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। মাওয়াসি উপকূলে নিহত হয়েছেন চারজন।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, গাজার বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার সংখ্যা যতটা সম্ভব কমাতে চাচ্ছে তারা। গতকাল তারা বলেছে, আগের মাসে উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানও। তাঁর মতে, এতে গাজায় বেঁচে থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া এমন পরিকল্পনা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মি বন্দী আছেন। তাঁদের ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে খাবারের চরম সংকটের কারণে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় না খেতে পেয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুটি শিশু। এ নিয়ে সংঘাত শুরুর পর থেকে অনাহারে ২২৭ জনের মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে শিশু ১০৩।
কায়রোয় যাবেন হামাস নেতাএদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু করতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল–হায়া। আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছেন হামাস নেতারা।
তবে যুদ্ধবিরতির মূল শর্তগুলো নিয়ে এখনো হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং হামাসের অস্ত্র ত্যাগের মতো শর্তগুলো। তবে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র না প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরবের একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এখনো আলোচনা আবারও শুরুর আশা ত্যাগ করেনি। আর গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন করে অভিযান শুরুর যে পরিকল্পনা, তা হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্যও হতে পারে।