গাজায় এবার মানবিক সহায়তা কেন্দ্র বানাচ্ছে ইসরায়েল, নেপথ্যে কী, যা দেখা গেল ছবিতে
Published: 15th, May 2025 GMT
বিতর্কিত এক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা কেন্দ্র নির্মাণে গাজার বিভিন্ন স্থান প্রস্তুত করছে ইসরায়েল। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে এমনটি দেখা গেছে।
ইসরায়েল সরকার গত মার্চে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ স্থগিত করে দিয়েছিল।
ইসরায়েলি মন্ত্রীদের দাবি, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। জাতিসংঘ, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গত সোমবার বিশ্ব সংস্থাটির প্রকাশিত এক মূল্যায়নে বলা হয়, গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকিতে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছে, গাজার বিভিন্ন স্থান থেকে যাতে ত্রাণ বিতরণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে তারা এক নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। এটি পরিচালনা করবে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। সুরক্ষা দেবে নিরাপত্তা ঠিকাদার ও ইসরায়েলি বাহিনীগুলো।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিগুলো বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই। এতে দেখা গেছে, গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে অন্তত চারটি স্থানে সম্প্রতি জমি সমতল করে রাস্তা ও মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।
সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো কোথায় নির্মাণ করা হবে তা প্রকাশ্যে জানায়নি ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আগেই ব্রিফিং পাওয়া মানবিক সহায়তা–সংক্রান্ত সূত্রগুলো বিবিসি ভেরিফাইকে জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত চারটি কেন্দ্র ও উত্তরে নেতজারিম করিডরের কাছে আরেকটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নেতজারিম করিডর ইসরায়েলি সেনানিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড, যা গাজাকে কার্যত দুভাগে ভাগ করেছে।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এ পরিকল্পনার সহায়তায় গঠিত হয়েছে। তারা বলেছে, প্রথম ধাপে ১২ লাখ মানুষকে খাদ্য, পানি ও পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ করা হবে, যা গাজার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের কম।
সহায়তা কেন্দ্রগুলো কোথায় নির্মাণ করা হবে তা প্রকাশ্যে জানায়নি ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আগেই ব্রিফিং পাওয়া মানবিক সহায়তা–সংক্রান্ত সূত্রগুলো বিবিসি ভেরিফাইকে জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত চারটি কেন্দ্র ও উত্তরে নেতজারিম করিডরের কাছে আরেকটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।গতকাল বুধবার সংস্থাটি জানায়, তারা মে মাস শেষ হওয়ার আগেই কার্যক্রম শুরু করবে। আর পূর্ণাঙ্গ বিতরণ কেন্দ্র চালু না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক পথে ত্রাণ সরবরাহ চালু রাখার জন্য তারা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি গাজার উত্তরাঞ্চলেও সহায়তা কেন্দ্র গঠনের দাবি জানিয়েছে, যা মূল পরিকল্পনায় ছিল না।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলেছে, তারা এ পরিকল্পনার সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে না। এ পরিকল্পনা মৌলিক মানবিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র ওলগা চেরেভকোর অভিযোগ, ‘সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে ইসরায়েল খাদ্য ও জ্বালানিকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে।’
ওলগা চেরেভকো বিবিসি ভেরিফাইকে বলেন, ‘সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হাতে গোনা কয়েকটি কেন্দ্রের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। এ ধরনের বন্দোবস্ত গাজার বড় এলাকা, বিশেষ করে বেশির ভাগ নাজুক মানুষ, যাঁরা সহজে চলাফেরা করতে পারেন না বা সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, তাঁদের জন্য সহায়তা কার্যত বন্ধ করে দেবে।’
অক্সফামের বুশরা খালিদি এ পরিকল্পনাকে ‘প্রহসন’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরবরাহ ব্যবস্থার কোনো সমাধানই ইসরায়েলের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কৌশল ঠেকাতে পারবে না। অবরোধ তুলে নিন, সীমান্ত খুলে দিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন।’
জানা গেছে, প্রস্তাবিত এই নতুন ব্যবস্থা এখনো ইসরায়েলি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই। এতে দেখা গেছে, গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে অন্তত চারটি স্থানে সম্প্রতি জমি সমতল করে রাস্তা ও মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে কী দেখা গেছে
গাজা থেকে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় সম্ভাব্য চারটি বিতরণকেন্দ্র শনাক্ত করতে কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি ব্যবহার করেছে বিবিসি ভেরিফাই। এগুলোর আকার, আকৃতি ও নকশা গাজার মধ্যে বিদ্যমান অন্যান্য বিতরণকেন্দ্র; যেমন ইরেজ, ইরেজ ওয়েস্ট ও কিসুফিমের মতো। সবচেয়ে বড় কেন্দ্রের তুলনা করা যেতে পারে গাজার কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের ভেতরে অবস্থিত বিতরণকেন্দ্রটির সঙ্গে।
কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে বিবিসি দেখেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম গাজার একটি স্থানে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ চলছে। জায়গাটি একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রামের কাছে, যেটি এখন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ঘাঁটি।
চলতি বছরের এপ্রিলের শুরু থেকে তোলা কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে দেখা গেছে, সেখানে একটি রাস্তা ও একটি বড় প্রস্তুতিস্থল তৈরি করা হয়েছে। সেটিকে ঘিরে বালু দিয়ে বড় প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। জায়গাটি মিসর সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫০ মিটার দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুনফিলিস্তিন নিয়ে ইহুদিদের তীব্র মতবিরোধ, ভাঙছে পরিবারও ৪ ঘণ্টা আগে৮ মে তোলা হাই রেজল্যুশনের একটি ছবিতে দেখা যায়, প্রায় ২০ একর এলাকাজুড়ে বুলডোজার ও খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলছে। কাছেই একটি সুরক্ষিত ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আইডিএফের সাঁজোয়া যান।
একটি জায়গার ছবিতে দেখা গেছে, সেখানকার চারপাশে আলো বসানোর কাজ চলছে। বিবিসি ভেরিফাই ওই জায়গার ভৌগোলিক অবস্থান নির্ধারণ করেছে। ১১ ও ১২ মে তোলা আরও কিছু ছবিতে দেখা যায়, আরও তিনটি জায়গার পরিসর ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে।
ম্যাকেঞ্জি ইন্টেলিজেন্সের জ্যেষ্ঠ ছবি বিশ্লেষক স্টু রে বলেন, এসব জায়গা সম্ভবত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র হিসেবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। কয়েকটি জায়গার অবস্থান আইডিএফের ঘাঁটির খুব কাছাকাছি, যা ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েলি বাহিনী এসব কেন্দ্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়।
এ বিষয়ে জানতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি ভেরিফাই। কিন্তু সম্ভাব্য সহায়তাকেন্দ্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। তবে বলেছে, গাজায় তাদের সব অভিযান ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে’ পরিচালিত হচ্ছে।
গাজার প্রবেশপথ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সংস্থা কোগাট এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুননাকবা: ১০০ বছর আগে যেভাবে ইহুদি রাষ্ট্র প্রকল্পের শুরু৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজিম্মিদের উৎসর্গ করে হলেও যুদ্ধে জিততে চান নেতানিয়াহু, বিভক্তি বাড়ছে ইসরায়েলে১৪ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ইসর য় ল ব তরণ ক ব যবস থ সরবর হ প রস ত অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের দাফু পাম্প ও মোটর নিয়ে এল ন্যাশনাল পলিমার
বাংলাদেশের বাজারে আসছে চীনের পাম্প প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দাফুর পাম্প ও মোটর। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এখানকার বাজারে আসতে চলেছে চীনা কোম্পানিটি। আগামী সেপ্টেম্বরে দেশের বাজারে দাফু গ্রুপের মোট ৩০ ধরনের পানির পাম্প ও মোটর পাওয়া যাবে।
এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তি হয় এবং পাম্প ও মোটর বাজারজাতকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ন্যাশনাল পলিমার দেশের বাজারে পাইপ ফিটিংস, পিভিসি ও ডব্লিউ পিভিসি ডোর ও পানির ট্যাংক পাওয়া যায়। নতুন করে তারা এবার দাফুর পরিবেশক হিসেবে পাম্প ও মোটর সরবরাহ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনপলি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিয়াদ মাহমুদ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দাফু গ্রুপের পরিচালক মি. টিম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনপলি গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা লোকমান হাকিম, বিজনেস বিভাগের প্রধান শেখর সাহা ও বিপণন প্রধান রকিব আহমেদসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পরিবেশকেরা।
অনুষ্ঠানে দাফুর তৈরি সারফেস পাম্প, সাবমার্সিবল পাম্প, সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, সোলার ওয়াটার পাম্পসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রদর্শনী করা হয়।
ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপের এমডি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ‘গুণগত মান ও দীর্ঘমেয়াদি আস্থার ফলে দাফুর তৈরি মোটর ও পাম্প বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দেশের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনা। এতে শিল্প ও কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই উৎপাদনশীলতা বাড়বে।’
দাফু গ্রুপের পরিচালক মি. টিম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাম্প তৈরি করব। এ জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের চীনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে পাম্পের বাজার এখন বেশ বড়। পাম্পের চাহিদাও অনেক। তাই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে আমাদেরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে। ফলে এ দেশের মানুষ আরও বেশি কার্যক্ষম, সাশ্রয়ী ও স্মার্ট পণ্য চাইছেন। আমরা তা সরবরাহের চেষ্টা করব।’
ন্যাশনাল পলিমারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, ‘পাইপ, ট্যাংক ও দরজার পাশাপাশি আমরা এখন পাম্পের মাধ্যমে পানির নিরবচ্ছিন্ন উৎস নিশ্চিত করব। নতুন এই পণ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে আমাদের প্রায় ৪ হাজার পরিবেশক, ২৫ হাজার খুচরা বিক্রেতা ও ৮৫০ জন দক্ষ বিক্রয়কর্মী প্রস্তুত রয়েছেন।’