চাটুকারিতা না করার অঙ্গীকার সম্মিলিত পরিষদের নেতাদের
Published: 15th, May 2025 GMT
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত পরিষদের নেতারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলের চাটুকারিতা না করার অঙ্গীকার করেছেন।
সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে পোশাকশিল্পের সংশ্লিষ্ট নেতারা নির্লজ্জ চাটুকারিতা করেছেন। আমরা আত্মসম্মান নিয়ে ব্যবসা করতে চাই। চাটুকারিতা করে বিদেশে অর্থ পাচারকারী কোনো ব্যবসায়ীকে আমরা সমর্থন করব না। এটি প্রতিরোধ করার জন্য যা যা করা দরকার সেটি করব।’
বিজিএমইএর নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা মোহাম্মদ আবুল কালাম এবং প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ফারুক হাসান।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেড় দশকের অধিকাংশ সময় বিজিএমইএর নেতৃত্বে ছিল সম্মিলিত পরিষদ। এই জোটের নেতৃত্ব দেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান। বর্তমানে এস এম মান্নান ও সিদ্দিকুর রহমান আত্মগোপনে, আর বাকিরা কারাগারে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংগঠনটির নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। তখন সম্মিলিত পরিষদের নেতারা পর্ষদ টিকিয়ে রাখতে এস এম মান্নানকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। পরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামানকে সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২০ অক্টোবর বিভিন্ন অভিযোগে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে বিতর্কিত কোনো প্রার্থী নেই। বিতর্কিত ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানির সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি, কাস্টমস ও ব্যাংক খাতে জটিলতা রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা আদায়ে আমরা অভিজ্ঞ ও নতুন প্রজন্মের সমন্বয়ে প্যানেল করেছি।’
নির্বাচনে জয়ী হলে পোশাকশিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করা নিয়ে সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষি এবং বন্ধ কারখানা সচল করতে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন আবুল কালাম।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আমরা নির্বাচিত হলে সেখানে স্বচ্ছতা আনতে যা যা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সেটি নেব।’
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিয়ে কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে মামলাগুলো হয়েছে। আমাদের জানামতে, যেসব ব্যবসায়ীর নামে মামলা হয়েছে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। অসুবিধা হবেও না। মামলাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে এটা করা হলেও ব্যবসায়ী মহল থেকেও দাবিটি ছিল। নতুন দুই বিভাগের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করা পর্যন্ত সময়টা চ্যালেঞ্জিং হবে। এনবিআর কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে কাস্টম হাউসে কাজ হচ্ছে না। এতে রপ্তানিতে ক্ষতি হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ হিল রাকিব, মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র জ জ ম ন ব জ এমইএর ব যবস য় ন বল ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সংকটে নেতৃত্ব দিয়েছি, ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে: মনিরুজ্জামান
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি ও সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, “আমরা অতীতে যেভাবে সংকটে বিজিএমইএকে নেতৃত্ব দিয়েছি, ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এই সংগঠন কেবল পোশাক রপ্তানিকারকদের নয়, এটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাই সংগঠনটির নেতৃত্বে দায়িত্ববান, পরীক্ষিত ও কার্যকর লোকের প্রয়োজন।”
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে সম্মিলিত পরিষদ আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ও চৈতী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ফারুক হাসান।
আরো পড়ুন:
দুই ব্রোকারেজ হাউজ পেল ডিএসইর ফিক্স সার্টিফিকেশন
পুঁজিবাজারে পতন অব্যাহত
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাজিরুল শোভন ইসলাম।
কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, “আমরা বারবার প্রমাণ করেছি-সংকটে আমরা সামনে থাকি। আমরা কথা নয়, কাজ দিয়ে নেতৃত্ব দেই। সম্মিলিত পরিষদ গত ২০ বছর ধরে বিজিএমইএর আস্থার প্রতীক হয়ে আছে।”
প্যানেল লিডার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, “বিশ্বব্যাপী চরম প্রতিযোগিতার এই সময়ে প্রয়োজন অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও গভীর বোঝাপড়ার। আমরা বিজিএমইএকে এমন এক আধুনিক ও সেবাকেন্দ্রিক সংগঠনে রূপ দিতে চাই, যেখানে সদস্যদের প্রয়োজনই হবে নীতি-নির্ধারণের মূলভিত্তি।”
তিনি আরো জানান, ২১ মে সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবে।
মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, “আমরা গত দুই দশক ধরে বিজিএমইএর সদস্যদের স্বার্থে মাঠে থেকেছি।এবারও আমাদের পরিকল্পনায় থাকবে প্রযুক্তি-নির্ভর বিজিএমইএ, স্মার্ট সার্ভিস, নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, এসএমই কারখানার উন্নয়ন, সোলার এনার্জির বিস্তার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ' ব্র্যান্ডিংকে শক্তিশালী করা।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে সম্মিলিত পরিষদের নেতারা বলেন, “আমাদের দায়িত্ব দায়িত্বশীলভাবে সদস্যদের পাশে থাকা, তাদের দাবিকে শক্ত কণ্ঠে সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা। বিজিএমইএ নির্বাচনে যারা এবার প্রথম ভোট দেবেন, সেই তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আমরা ভবিষ্যতের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে চাই।”
ঢাকা/এনএফ/এসবি