স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা। লালগালিচা এলাকা তীব্র অপেক্ষায়। চারদিকে শত শত ক্যামেরার চোখ। যে চোখ অপেক্ষায় তাঁর জন্য। নিরাপত্তাবলয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন হাজার হাজার দর্শক। কারও হাতে মোবাইল, কারও হাতে অটোগ্রাফ নেওয়ার খাতা কিংবা প্রিয় তারকার ছবি। মৃদু শব্দে বেজে চলছে ফরাসি শিল্পীর কণ্ঠে গান। যে গানের সুর অন্যরকম আবেশ সৃষ্টি করছে। এমন সময় ঘোষণা এলো লালগালিচায় আসছেন হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। হই হই রব পড়ে গেল চারদিকে।

অপেক্ষায় থাকা তরুণ-তরুণী ও বয়োবৃদ্ধরাও চিৎকার করে উঠলেন। ঘোষণামাত্রই রাজকীয়ভাবে আগমন ঘটল জোলির। এ যেন স্বয়ং চাঁদের আলো নেমে এলো লালগালিচায়। এসেই শুভ্র হাসির সঙ্গে চুমু উড়িয়ে অভিবাদন জানালেন সবাইকে। নিজেও কুর্নিশ করে নিলেন উপস্থিতি সবার পক্ষ থেকে উড়ে আসা ভালোবাসা।

১৭ বছর পর লালগালিচায়
পরিচালক আরি অ্যাস্টারের নতুন চলচ্চিত্র ‘এডিংটন’-এর প্রিমিয়ার উপলক্ষে কান চলচ্চিত্র উৎসবের লালগালিচায় ১৭ বছর পর দেখা গেল অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে। এবার উৎসবের ৭৮তম এ আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবি ‘এডিংটন’-এ তিনি অভিনয় করছেন সম্মানজনক ভূমিকা শপার্ড ট্রফির মেরিন বা শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। কান উৎসবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির এই প্রত্যাবর্তন শুধু গ্ল্যামারেই নয়, ইতিহাসেও অনন্য। কারণ, ২০০৮ সালে তিনি শেষবারের মতো এই লালগালিচায় হেঁটেছিলেন। তাও ছিলেন তাঁর যমজ সন্তান নক্স ও ভিভিয়েনকে গর্ভে ধারণ করে। তখন তাঁর পাশে ছিলেন ব্র্যাড পিট। পরেছিলেন ফরাসি ব্র্যান্ড জেরার দারে’র ডিজাইন করা একটি পিস্টাচিও-সবুজ গাউন। তাঁর এবারের উপস্থিতি যেন সেই স্মরণীয় মুহূর্তেরই এক গৌরবময় পুনরাবৃত্তি। এবার তিনি এলেন নিজের বলিষ্ঠ উপস্থিতি, নিজের ইতিহাস আর নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে।

নতুন পরিচয়ে এলেন ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট
কান চলচ্চিত্র উৎসবে এ বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হলিউড অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। এবার তিনি এসেছেন ভিন্ন পরিচয়ে–নির্মাতা হিসেবে। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য ক্রনোলজি অব ওয়াটার’ প্রদর্শিত হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ এ উৎসবে। লিডিয়া ইউকনাভিচের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস La Mécanique des Fluides (২০১১) অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে এক তরুণ সাঁতারুর জীবনকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে, যে বেড়ে ওঠে সহিংসতা ও মদ্যপানে ক্ষতবিক্ষত এক পরিবারে। সেই অন্ধকার পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে সাহিত্যে আশ্রয় খুঁজে পায় সে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে খুঁজে পায় নিজের নতুন পরিচয় ও মুক্তির পথ।

প্রযোজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি শুধু একজন নারীর জীবনের গল্প নয়, বরং তা সংগ্রাম, আত্ম-অন্বেষণ ও শিল্পের মাধ্যমে আত্মমুক্তির এক গভীর মানবিক চিত্র। ফটোকল ইভেন্টে ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের উপস্থিতি আলো ছড়িয়েছে, আর তাঁর সাহসী নির্মাণভঙ্গি কুড়িয়েছে প্রশংসা। এ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সৃজনশীলতার এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখলেন ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, এটি হতে পারে তাঁর দীর্ঘ ও শক্তিশালী নির্মাতাযাত্রার শুরু।

লালগালিচায় দাঁড়িয়ে বিদ্রোহের ইঙ্গিত
লালগালিচায় নতুন পোশাকবিধির কড়াকড়ির মধ্যে এক সাহসী, সচেতন ফ্যাশনের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। লালগালিচায় তিনি হাজির হলেন এক অভিনব পোশাকে। হালকা গোলাপি, স্বচ্ছ ম্যাক্সি স্কার্ট, যার নিচে ছিল একটি টুইড শর্ট স্যুট। মাথায় এলোমেলোভাবে বাঁধা খোলা চুল, যেন হাওয়ায় খেলা করছিল তা। সেই চুলের ডগায় হট পিংক ডিপ-ডাই রঙের সাবলীল এক প্রতিবাদের ইঙ্গিত। ওপরে পরেছিলেন ম্যাচিং টুইড ব্লেজার, যার বাটনে ছিল কালো-রুপালি ‘CC’ চিহ্ন। গলায় হীরার চকচকে চোকার, পায়ে হালকা গোলাপি পাম্প হিল– একদিকে পরিমার্জিত, অন্যদিকে অনমনীয়।

এবারের কান উৎসবের নতুন ড্রেস কোড অনুযায়ী, লালগালিচায় এবং উৎসবের যেকোনো অংশে নগ্নতা নিষিদ্ধ। বিষয়টি বিবেচনা করে নতুন স্টাইল বেছে নিয়েছিলেন এ তারকা। পোশাকে আংশিক স্বচ্ছতা থাকলেও, তিনি কৌশলে ঢেকে রেখেছেন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ– শুধু সামান্য উন্মোচিত হয়েছে কোমর ও উরুর নিচের কিছুটা। তিনি সরাসরি এই নতুন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। এই উপস্থিতিতে যেন প্রতিধ্বনিত হলো তাঁর আগের প্রতিবাদ। মনে পড়ে ২০১৮ সালের সে ঘটনা, যখন উঁচু হিলের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তিনি লালগালিচায় নিজের হাই হিল খুলে ফেলেছিলেন। সেই প্রতিবাদের পর বদলেছিল সেই নিয়ম। ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট শুধু ‘টোয়াইলাইট’-এর তারকা নন। তিনি এখন নিজেই এক প্রতিবাদী শিল্পভাষা। কানের মতো প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে তিনি বোঝালেন, নিয়ম মানা যায়, তবে তাতে নিজের অবস্থান ও মতামত প্রকাশের পথও থাকে।

ড্রেসকোড নিয়ে আরও প্রতিবাদ
ক্রিস্টেন সীমার মধ্যে থেকে প্রতিবাদ জানালেও, অনেকেই সরাসরি নিয়ম অমান্য করলেন। যেমন হেইডি ক্লুম, যিনি এলি সাবের এক বিরাট ট্রেইনযুক্ত গাউনে হাজির হয়ে স্পষ্টত নতুন নিয়ম ভাঙলেন। কারণ, নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ‘অতিরিক্ত আয়তনের পোশাক, যা অতিথিদের চলাফেরায় সমস্যা সৃষ্টি করে, তা নিষিদ্ধ।’ অন্যদিকে, বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হ্যালি বেরি শেষ মুহূর্তে বদলে ফেললেন নিজের পোশাক। প্রথমে তাঁর নির্বাচিত গৌরব গুপ্তার নকশা করা একটি ট্রেইনযুক্ত গাউন ছিল, কিন্তু নিয়মে সেটি নিষিদ্ধ হওয়ায় পরে তিনি পরেন একটি জাকেমাস স্ট্রাইপড পোশাক, যার পেছনে ছিল একটি বিনম্র গোলাপি রাফল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র উপস থ ত উৎসব র নত ন প

এছাড়াও পড়ুন:

সময় এখন বৃক্ষ রোপণের

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর পাশাপাশি পরিচর্যা জরুরি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ‘গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ প্রতিপাদ্যে প্রতি বছর আয়োজন করে বৃক্ষরোপণ উৎসবের। এর ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রাম, পাবনার ঈশ্বরদী ও  ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সুহৃদরা বিভিন্ন স্থানে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেন

কুড়িগ্রাম
সুজন মোহন্ত
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃক্ষকে বলেছিলেন ‘মহাপ্রাণ’। ‘সৃষ্টির প্রথম বাণী তুমি, হে আলোক–/এ নব তরুতে তব শুভদৃষ্টি হোক।/একদা প্রচুর পুষ্পে হবে সার্থকতা,/উহার প্রচ্ছন্ন প্রাণে রাখো সেই কথা......।’ কবিগুরুর এ সুর ধরে সুহৃদরাও বৃক্ষ রোপণ ও সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন বুনেন। কেন্দ্রীয় সুহৃদ সমাবেশের নিয়মিত আয়োজন ‘বৃক্ষরোপণ উৎসব’-এর অনুসরণে কুড়িগ্রামে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৯ জুন বিকেলে শহরে স্টেশন রোডে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেন সুহৃদরা। ‘বৃক্ষ লাগাই ভূরি ভূরি, তপ্ত বায়ু শীতল করি’ প্রতিপাদ্যে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের পরিত্যক্ত জমিতে জলপাই, জাম, অর্জুন, কৃষ্ণচূড়া, আম, কাঁঠাল, নিমসহ ফলদ, বনজ ও ঔষধি চারার বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ লাগানো হয়। 
এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক সাঈয়েদ আহমেদ বাবুসহ স্থানীয় সুহৃদের মধ্যে কার্যক্রমে অংশ নেন রিফাত হোসেন, জোবায়ের ইসলাম আকাশ, বাইজিদ মুস্তাকিম, একান্ত সেন, মার্জিয়া মেধা, তারেক খান, রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।
সাঈয়েদ আহমেদ বাবু বলেন, ‘বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। সুস্থ ও বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য বৃক্ষ রোপণ অব্যাহত রাখতে হবে, কারণ গাছ জীবনের জন্য জরুরি। 
কর্মসূচি শেষে সুহৃদরা সাংগঠনিক সভা 
করেন। সভায় বৃক্ষ রোপণের পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত হয়।’

 

ঈশ্বরগঞ্জ 
বিলকিস জাহান সেতু 
 ঈশ্বরগঞ্জ সুহৃদ সমাবেশ ২০ জুন সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে কয়েক প্রজাতির বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করে। নবগঠিত কমিটির সুহৃদদের উপস্থিতিতে কর্মসূচি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন সুহৃদ সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রানা। কর্মসূচি শেষে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের একটি কক্ষে এ বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গাছ লাগানোর উপকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে সুহৃদের বৃক্ষরোপণ উৎসব সফল করতে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার ওপর গুরুত্ব আরোপময় করা হয়। v
সুহৃদ, ঈশ্বরগঞ্জ

 

ঈশ্বরদী
সেলিম সরদার
ঈশ্বরদী সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ও ‘সবুজ পৃথিবী’র যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুর পাড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষ রোপণ করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ।
‘সবুজ পৃথিবী’ ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি সেলিম সরদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সুহৃদ ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। v
সমন্বয়ক, সুহৃদ সমাবেশ, ঈশ্বরদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁকবদলের নাম উৎসব
  • ছবির মতো সুন্দর ভেনিস
  • ইতিহাস গড়া দিনে ঋতুপর্ণাদের উৎসব
  • ‘অবুঝ মন’ থেকে ‘উৎসব’ 
  • আড়ংয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আছে প্রভিডেন্ট ফান্ড-গ্র্যাচুইটি 
  • আড়ংয়ে জব সার্কুলার ২০২৫, আছে প্রভিডেন্ট ফান্ড-বিমা 
  • সময় এখন বৃক্ষ রোপণের
  • ‘বেহুলার লাচারি’–শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
  • ‘আনটাং’ যাচ্ছে আফ্রিকায়
  • ইতিবাচক লেখনিতে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার: ডিবিএ সভাপতি