পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনার চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় ১৫ বছর আগে আশ্রয় নিয়েছিলেন নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া আশকার প্রামাণিক। বসতভিটা হারিয়ে পরিবারের জন্য এক বেলা খাবার জোটানোও ছিল কঠিন। চরের জমিতে চাষ করে কোনোরকমে সংসার চালাতেন। আজ তাঁর খামারে ২৫টি গরু, যার মধ্যে ১০টি দুধ দেয় এমন গাভি। খামার, কৃষিজমিসহ তাঁর সম্পদের পরিমাণ এখন প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১০০ লিটারের বেশি দুধ।
জীবনের পালাবদল সম্পর্কে আশকার প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে ১০ বারের মতো যমুনার ভাঙনে পড়ছি। আমি প্রায় পথের ফকির হয়া গেছিল্যাম। সেই জায়গার থ্যাই আমার ভাগ্য বদলায়া দিছে গরু। ধারদেনা কইর্যা দুইডা বকনা বাছুর কিনছিল্যাম। আইজ ১০টা গাভি আছে। বাছুর আর বড় ষাঁড় মিলায়া ১৫টা গরু। দৈনিক আড়াই মণ দুধ পাই। এহন গরু পালনই আমার প্রধান পেশা।’
আশকার প্রামাণিকের মতো ভাগ্যবদলের এমন অনেক গল্প শোনা যায় বেড়ার চরাঞ্চলে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বেড়ার প্রায় ১৫টি চর থেকে প্রতিদিন এক লাখ লিটারের বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। এসব দুধ ছানা ও ঘি তৈরির কারখানাসহ নানা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।
একসময় চরের মানুষদের জীবনে ছিল দুর্দশা ও অনিশ্চয়তা। কৃষিকাজই ছিল প্রধান অবলম্বন। এখন অনেকেই জীবিকার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন গরু পালন। দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী প্রবীণ খামারি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘চরে গরু পালনের নীরব বিপ্লব হইছে। গরুতে চরের অন্তত ৯০ ভাগ মানুষের ভাগ্য বদলাইছে।’
চরের খামারিদের মতে, অন্যান্য এলাকার তুলনায় চরে গরু পালনের খরচ অনেক কম। কারণ, প্রায় আট মাস ধরে চরে সহজেই পাওয়া যায় প্রচুর কাঁচা ঘাস। ফলে বাইরে থেকে গোখাদ্য কিনে আনার প্রয়োজন পড়ে না।
বেড়া উপজেলার যমুনাপাড়ের চরে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা, চরনাকালিয়া, চরনাগদা, চরসাঁড়াশিয়াসহ বিভিন্ন চরে এখন প্রতিটি বাড়িতে গরুর খামার গড়ে উঠেছে। প্রতিটি বাড়িতে চলছে দুধ দোহনের তোড়জোড়। দুধ সংগ্রহে ছুটে বেড়াচ্ছেন দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। দুধভর্তি বিশেষ পাত্রগুলো নৌকায় তুলে পাঠানো হচ্ছে উপজেলা সদরের ঘাটে।
হাটুরিয়া গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী মো.
চরের দুধ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যমুনাপাড়ের পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, ডাকবাংলো, নাকালিয়া বাজার ও নগরবাড়ী ঘাটে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তা চলে যায় মিল্ক ভিটাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে।
যমুনার চরাঞ্চলের দুধ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে। সম্প্রতি পাবনার বেড়া পৌর এলাকার আমাইকোলা মহল্লায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//