রাজধানীর বাজারে ক্রেতা হাতে গোনা যায়, শাকসবজি ও মাছের সরবরাহ কম
Published: 10th, June 2025 GMT
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ির বাসিন্দা মনির হোসেন ১৫ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে একটি লোহালক্কড়ের দোকানে কাজ করেন। মাসে আয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সাত হাজার টাকা যায় এক রুমের একটি বাসা ভাড়া বাবদ। বাকি টাকায় চারজনের সংসার চালান। টানাটানির মধ্যেও সুযোগ পেলে কালেভদ্রে আশেপাশে ঘুরতে বের হন। আজ মঙ্গলবার সকালেও শহর ফাঁকা দেখে তা-ই করলেন। স্ত্রী আর তিন বছরের ছেলে ও চার বছরের মেয়েকে নিয়ে বের হন। একটু ঘুরেফিরে বাসায় ফেরার পথে সবজি, মাছ ও আদা-রসুন কিনতে কারওয়ান বাজারে ঢোকেন।
মনির হোসেন প্রথম অলোকে বলেন, ‘বাজার এখনো আগের মতো জমে ওঠেনি। এই সময়ে সব ধরনের পণ্যের দাম কিছুটা কম থাকে। তাই বাসায় যাওয়ার আগে বাজারে এসেছি কিছু কেনা যায় কি না, তা দেখার জন্য। দাম কিছুটা কম থাকায় এক কেজি মাছ আর কিছু শাকসবজি কিনলাম।’
কোরবানির ঈদের তিন দিন পর আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে মনির হোসেনের মতো হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতাকে দেখা গেল। অর্থাৎ কারওয়ান বাজার এখনো জমেনি। ফলে চিরচেনা সেই ভিড়ভাট্টাও নেই। অল্প যে কয়েকজন ক্রেতা এসেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির। আলাপকালে তাঁদের বেশির ভাগই জানান, এ রকম সময়ে বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা কম থাকে। সে জন্যই তাঁরা বাজারে এসেছেন। বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্তদের কেউ কেউ বললেন, বাসায় ফ্রিজ নেই বলে প্রতিদিনই বাজারে আসতে হয়।
বাজারে ক্রেতা যেমন কম, তেমনি শাকসবজি ও মাছ-মাংসের সরবরাহও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদের পর ক্রেতা কম, তাই সরবরাহও কম। দামও এখন কমতি। পটোল, বেগুন, করলা, ঢ্যাঁড়স, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মাহবুব আলম বলেন, এই সময়ে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকে। কোরবানির ঈদের তিন দিন হয়ে গেছে। এখন বাজারে ধীরে ধীরে শাকসবজির চাহিদা ও সরবরাহ—দুটোই বাড়বে।
রাজধানীর আরও তিন-চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ রয়েছে। সব জায়গাতেই ক্রেতার সমাগম খুবই নগণ্য। শুধু সবজি আর মাছ-মুরগির কিছু দোকান খোলা। ঈদের আগে আগে শসা, টমেটো, গাজর প্রভৃতি পণ্যের দাম বাড়লেও এখন তা কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগের রাত পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হয়েছে। এরপর বেচাবিক্রি কমেছে। প্রতিবছরই ঈদের সময় এ রকম হয়। সে জন্য অনেক বিক্রেতা এখন ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন। আগামীকাল বুধবার বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ঈদের ছুটির কারণে অনেক মানুষ এখনো ঢাকায় ফেরেননি। তাই বাজার এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি। দোকানপাট আস্তে আস্তে খুলছে। তাতে বাজারে সবজির সরবরাহ খানিক বাড়ছে। যদিও বেশির ভাগ দোকানে আগের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কাল বুধবার থেকে সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সব বাজারে সবজির মতো মাছ ও মুরগির দু-চারটি দোকান খোলা। মাংসের দোকান বলতে গেলে এখনো বন্ধ রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের কামারপট্টি এলাকার রাস্তার ওপর কয়েক পদের মাছ নিয়ে বসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের এই সময়ে মাছের চাহিদা কম থাকে। তবে আমাদের এই বাজারে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় থাকে। কারণ, তাঁরা কোরবানি দেন না। সকাল থেকে যদি আমার দোকানে ১০০ জন মানুষ এসে থাকেন, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নিম্নবিত্ত। যেখানে কিচেন মার্কেটে ৪০০ টাকা কেজিতে পাবদা মাছ বিক্রি করে, সেখানে আমরা পাবদা মাছ ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করি।’
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা জিকো রোজারিও বলেন, ‘মূল বাজারের চেয়ে এখানে মাছের দাম তুলনামূলক কম। তাই জীবন্ত এক কেজি শিং মাছ কিনেছি ৩০০ টাকা দিয়ে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রওয় ন ব জ র সরবর হ শ কসবজ কম থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//