ইলিশের মূল্য নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ে ডিসির চিঠি, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
Published: 19th, June 2025 GMT
ইলিশ মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে মূল্য নির্ধারণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। বুধবার (১৮ জুন) চিঠি পাঠানোর পর এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ চিঠির বিষয়ে চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদক। তারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ইলিশ ক্রেতা কালু বলেছেন, “আড়তদার ও দাদন চক্রের কারণে ইলিশের দাম বাড়ছে। ইলিশের কেজি হওয়া উচিত ৫০০ টাকা বা তারও কম। সাধারণ মানুষ হিসেবে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০-২৩০০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই, ইলিশের দাম নির্ধারণ করা জরুরি।”
পুরান বাজারের জেলে আলম বলেন, “নদীতে নেমেছিলাম অনেক আশা নিয়ে। সারা দিনে নদী থেকে তিনটা ইলিশ পেলাম। এগুলোর দাম দিয়ে তেলের পয়সাও উঠবে না। নদীতে ইলিশ কম। ইলিশ বেশি থাকলে দাম নির্ধারণ করা যেত। যেখানে ইলিশের সংকট, সেখানে দাম নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল।”
চাঁদপুর জেলা মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত বলেছেন, “ইলিশ মাছ হলো কাঁচামাল। কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণ করে কখনো বেচাকেনা সম্ভব নয়। তাই, মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা দেখছি না। জেলেরা নদীতে নামলে নৌকা, জাল, তেল এবং তার পরিশ্রমের মূল্য আছে। দেখা যাক, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কী করে।”
চাঁদপুরের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, “কিছু দিন আগে আমরা মুরগির মাংস ও ডিমের দাম নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। ইলিশের তো উৎপাদন খরচ নেই। নদীতে যাওয়া-আসা, জাল ও নৌকার খরচসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এর মূল্যও কৃষি বিপণন আইনে নির্ধারণ করা সম্ভব। মন্ত্রণালয়ে ইলিশের মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠানোর উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.
চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেছেন, “ইলিশ উৎপাদনে সংকট নেই। পদ্মা ও মেঘনা নদীর গভীরতা অনুযায়ী জেলেরা জাল তৈরি না করায় ইলিশ কম পায়। কেননা, ইলিশ গভীর জলের মাছ। বৃষ্টি ও পানি প্রবাহ বাড়লে ইলিশও ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে। কাজেই ইলিশের একটা যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নেওয়ায় আমি তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেছেন, “ইলিশ সবাই খেতে চায়। তাই, এর দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে হলে ভালো হয়। এটা মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা মিলেই নির্ধারণ করা জরুরি।”
চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার ছৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেছেন, “জাতীয় সম্পদ ইলিশের মূল্য নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর কাজটা ভালো লেগেছে। আমি চাই, ইলিশের দাম তার আকার অনুযায়ী নির্ধারিত হোক। সেটা কোন মৌসুমে কত দামে মানুষ কিনতে পারবে, তা জানাটা জরুরি। ধরুন, আমি যদি জানি যে, ১ হাজার টাকা কেজি দরে ইলিশ পাব, তাহলে আমি ইলিশের সে দাম বাসা থেকে নিয়ে বের হতে পারছি। ইলিশের দাম নির্ধারণে আমাদের কোনো সহায়তা লাগলে, আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি।”
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “যদি ইলিশটা শুধু এ জেলায় হতো, তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীসহ সকল অংশীজনকে নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে ফেলতাম। কিন্তু, এটা অন্যান্য জেলাতেও আহরণ করায় এখানে মূল্য নির্ধারণ হলে অন্যান্য জেলায় নতুন সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধির কারসাজি করবে। তাই, মন্ত্রণালয়কেই ঠিক করতে হবে, ইলিশের দাম কেজি প্রতি কত হওয়া প্রয়োজন। আমি একটা উদ্যোগ নিলাম; দেখা যাক, কতটা সাড়া পাই।”
চাঁদপুরের বাজারে বর্তমানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা, সাড়ে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১৪৫০ টাকা এবং ১৩০০ গ্রামের ইলিশ ২৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/জয়/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় বল ছ ন মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইলিশের মূল্য নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ে ডিসির চিঠি, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
ইলিশ মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে মূল্য নির্ধারণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। বুধবার (১৮ জুন) চিঠি পাঠানোর পর এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ চিঠির বিষয়ে চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদক। তারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ইলিশ ক্রেতা কালু বলেছেন, “আড়তদার ও দাদন চক্রের কারণে ইলিশের দাম বাড়ছে। ইলিশের কেজি হওয়া উচিত ৫০০ টাকা বা তারও কম। সাধারণ মানুষ হিসেবে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০-২৩০০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই, ইলিশের দাম নির্ধারণ করা জরুরি।”
পুরান বাজারের জেলে আলম বলেন, “নদীতে নেমেছিলাম অনেক আশা নিয়ে। সারা দিনে নদী থেকে তিনটা ইলিশ পেলাম। এগুলোর দাম দিয়ে তেলের পয়সাও উঠবে না। নদীতে ইলিশ কম। ইলিশ বেশি থাকলে দাম নির্ধারণ করা যেত। যেখানে ইলিশের সংকট, সেখানে দাম নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল।”
চাঁদপুর জেলা মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত বলেছেন, “ইলিশ মাছ হলো কাঁচামাল। কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণ করে কখনো বেচাকেনা সম্ভব নয়। তাই, মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা দেখছি না। জেলেরা নদীতে নামলে নৌকা, জাল, তেল এবং তার পরিশ্রমের মূল্য আছে। দেখা যাক, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কী করে।”
চাঁদপুরের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, “কিছু দিন আগে আমরা মুরগির মাংস ও ডিমের দাম নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। ইলিশের তো উৎপাদন খরচ নেই। নদীতে যাওয়া-আসা, জাল ও নৌকার খরচসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এর মূল্যও কৃষি বিপণন আইনে নির্ধারণ করা সম্ভব। মন্ত্রণালয়ে ইলিশের মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠানোর উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর বলেছেন, “ইলিশের মূল্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করলে জেলেদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কেননা, জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে যে টাকা পাওয়ার কথা, সে পরিমাণ টাকা না পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। জেলা প্রশাসক মহোদয় চিঠি পাঠিয়েছেন, এটি আলোচনা চলছে। এখন দেখা যাক কী হয়।”
চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেছেন, “ইলিশ উৎপাদনে সংকট নেই। পদ্মা ও মেঘনা নদীর গভীরতা অনুযায়ী জেলেরা জাল তৈরি না করায় ইলিশ কম পায়। কেননা, ইলিশ গভীর জলের মাছ। বৃষ্টি ও পানি প্রবাহ বাড়লে ইলিশও ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে। কাজেই ইলিশের একটা যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নেওয়ায় আমি তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেছেন, “ইলিশ সবাই খেতে চায়। তাই, এর দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে হলে ভালো হয়। এটা মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা মিলেই নির্ধারণ করা জরুরি।”
চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার ছৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেছেন, “জাতীয় সম্পদ ইলিশের মূল্য নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর কাজটা ভালো লেগেছে। আমি চাই, ইলিশের দাম তার আকার অনুযায়ী নির্ধারিত হোক। সেটা কোন মৌসুমে কত দামে মানুষ কিনতে পারবে, তা জানাটা জরুরি। ধরুন, আমি যদি জানি যে, ১ হাজার টাকা কেজি দরে ইলিশ পাব, তাহলে আমি ইলিশের সে দাম বাসা থেকে নিয়ে বের হতে পারছি। ইলিশের দাম নির্ধারণে আমাদের কোনো সহায়তা লাগলে, আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি।”
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “যদি ইলিশটা শুধু এ জেলায় হতো, তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীসহ সকল অংশীজনকে নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে ফেলতাম। কিন্তু, এটা অন্যান্য জেলাতেও আহরণ করায় এখানে মূল্য নির্ধারণ হলে অন্যান্য জেলায় নতুন সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধির কারসাজি করবে। তাই, মন্ত্রণালয়কেই ঠিক করতে হবে, ইলিশের দাম কেজি প্রতি কত হওয়া প্রয়োজন। আমি একটা উদ্যোগ নিলাম; দেখা যাক, কতটা সাড়া পাই।”
চাঁদপুরের বাজারে বর্তমানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা, সাড়ে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১৪৫০ টাকা এবং ১৩০০ গ্রামের ইলিশ ২৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/জয়/রফিক