ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হামলা শুরুর বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইরানের বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইরান–ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির মধ্যেই ইরানের হামলার অনুমোদন দিলেন ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের সপ্তম দিন। এদিন ও আগের রাতে ইরানে পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল। অন্যদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসরায়েলের বিরসেবা শহরের একটি হাসপাতাল। তেল আবিবের কয়েকটি এলাকায়ও হামলা করা হয়। গতকাল রাত একটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া গেছে।

দুই সপ্তাহের সময়

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট গতকাল রাতে এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের বার্তা পড়ে শোনান। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব বলেন, ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘সরাসরি যুক্ত’ হবে কি না, তা নিয়ে ‘নানা জল্পনাকল্পনা’ চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে (সংঘাতে) যাব কি যাব না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।

এর আগে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্পের অনুমোদনের খবর সামনে আনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে গতকাল সিবিএস জানায়, ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা ভাবছেন ট্রাম্প। তবে ইরান নিজেদের পারমাণবিক প্রকল্পগুলো বন্ধে রাজি হবে, এমন আশায় এখনো হামলা শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।

গত বুধবার ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন সংবাদিকেরা। স্পষ্ট জবাবের দিকে না গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটি করতে পারি, না–ও পারি।’ তবে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, তা পেন্টাগন বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত আছে বলে গতকাল মার্কিন সিনেট কমিটিকে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদনের খবরের দিকে ইঙ্গিত করে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ইরান নিয়ে তাঁর ভাবনা সম্পর্কে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর কোনো ধারণা নেই।’

চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চান, তা আগে থেকেই বলে আসছেন বিশ্লেষকেরা। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। গতকাল পর্যন্ত মার্কিন একটি বিমানবাহী রণতরিসহ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ আরব সাগরে অবস্থান করছিল। আরেকটি রণতরি মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে। বেশ কিছু সামরিক উড়োজাহাজও ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের পথে রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা চালায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোয় তেহরান হামলা শুরু করতে পারে বলে মনে করেন মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পারসি। সিএনএনকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে লড়াই দীর্ঘমেয়াদি হলে তেহরান হয়তো শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে না। তবে লড়াইটা ওয়াশিংটনের জন্যও সহজ হবে না।

ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা

গত বুধবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলে আরাক শহরে অবস্থিত খোনদাব পরমাণু স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে ইসরায়েল। পরমাণু স্থাপনার কাছে ভারী পানির একটি পারমাণবিক চুল্লিতেও হামলার দাবি করা হয়েছে। ভারী পানির চুল্লিগুলো প্লুটোনিয়াম তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মতোই। নতুন করে হামলা হয়েছে নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায়ও।

তবে ভারী পানির ওই চুল্লিতে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছিল না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আওতাধীন পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। খোনদাব পরমাণু স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে তারা।

এ ছাড়া গতকাল ও আগের দিন বুধবার রাতভর ইরানের বেসামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে অনেকে আহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টসের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন।

তবে ইসরায়েলের হামলায় হতাহতের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে না ইরান। সর্বশেষ গত সোমবার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২৭৭ জন।

সাত দিন ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকেন্দ্র, গ্যাসক্ষেত্র, জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার, সম্প্রচারমাধ্যম, বিমানবন্দরসহ সামরিক-বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল ইরানের দুই–তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এফিন ডেফরিন।

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হাসপাতালে ক্ষয়ক্ষতি

গতকাল ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিরসেবা শহরে সোরোকা হাসপাতাল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, সোরোকা হাসপাতাল নয়, কাছেই ইসরায়েলের একটি সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যালয় ছিল তাদের লক্ষ্য। এর আগে সোমবার ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশে একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

গতকাল ওই হামলার পর ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় হাসপাতালের ছাদ ধসে যায়। আহত হন কয়েকজন। পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, সোরোকা হাসপাতালসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানের ‘সন্ত্রাসী স্বৈরশাসকেরা।’ এ জন্য তাদের ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।

গতকাল তেল আবিবেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। হামলায় বহুসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ। হামলায় তেল আবিবের কাছে রামাত গান এলাকায় কয়েকটি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাণিজ্যিক এই এলাকার বাসিন্দা ইয়ানিভ (৩৪) রয়টার্সকে বলেন, এটি ছিল ভয়ানক। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তাঁর কানে তালা লেগে যায়। পুরো ভবন কেঁপে ওঠে।

রামাত গানে হামলার সময় সেখানে অবস্থিত লিথুয়ানিয়ার দূতাবাস ভবন থেকে ২০০ মিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল ইরানের হামলার জেরে কমপক্ষে ২৭১ জনকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। হামলায় ইসরায়েলে সর্বশেষ গত সোমবার ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল দেশটির সরকার।

আবারও খামেনিকে হত্যার হুমকি

চলমান সংঘাতের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আবার হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা তাঁর লক্ষ্য.

..এমন একজন মানুষকে আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া যায় না।’ খামেনিকে হত্যা এই ‘যুদ্ধের’ একটি লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন কাৎজ। গত মঙ্গলবারও খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন কাৎজ।

খামেনিকে সম্ভাব্য হত্যার বিষয়ে বুধবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত অর্থনীতিবিষয়ক সম্মেলনের ফাঁকে ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি সবকিছুই শুনেছেন। তবে খামেনিকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করতে চান না। তিনি বিশ্বাস করেন, এই সংঘাত বন্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।

এরই মধ্যে গতকাল এক্সে একটি পোস্ট দেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেন, তেহরানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইছে। এটা প্রমাণ করে ইসরায়েলের শাসনব্যবস্থা কতটা দুর্বল ও অক্ষম।

নিউইয়র্ক–ওয়াশিংটনে সংঘাতবিরোধী বিক্ষোভ

ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এই সংঘাতে যেন যুক্তরাষ্ট্র না জড়ায়, বিক্ষোভ থেকে সে দাবিও করা হয়। বুধবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল ‘ইরানে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন’, ‘গণহত্যায় অর্থ দেওয়া বন্ধ করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড।

নিউইয়র্কে বিক্ষোভের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শত শত মানুষ শহরটির ম্যানহাটান এলাকায় মিছিল করছেন। তাঁরা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার হুমকি এবং ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য সরকারের নিন্দা জানান।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চায় না রাশিয়াও। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্ক করে বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। গতকাল ফোনালাপ করেন ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ফোনালাপে চলমান সংঘাতে রাশিয়া মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী বলে জানান পুতিন। সি আহ্বান জানান ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির।

ইরান নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাক্ষাৎ করার কথা ছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এ ছাড়া আজ শুক্রবার ইরান ও ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ইরান, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়ার অনুরোধে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র য় ইসর য় ল পরর ষ ট র দ শট র প ত হয় ছ হত য র ন এল ক এল ক য় মন ত র গতক ল অবস থ র একট পরম ণ র খবর

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয় ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত নিলেন জোহরান মামদানি

নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন জোহরান মামদানি। তিনি শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

তবে তার এই জয় সহজে আসেনি। নির্বাচনী প্রচারের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তিনি নিজ দলের রিপাবলিকান প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। নিউইয়র্কবাসী জোহরান নয়, কুয়োমোকে ভোট দিতে বলেছেন।

আরো পড়ুন:

 কে এই জোহরান মামদানি?  

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, আপনার হাতে বিকল্প নেই। আপনাকে ভোট দিতেই হবে তাকে। আমি আশা করব সে দারুণ কাজ করবে। সে কাজের মানুষ, মামদানি নয়।”

তবে শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকান ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ডেমোক্র্যাট মামদানির জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি শেষমেশ। তিনি ৫০.৪ শতাংশ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেছেন নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ভোটে জিতে নিজের বিজয় ভাষণেই ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন জোহরান মামদানি। তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি যত দূর জানি, আপনি দেখছেন। আমি আপনাকে চারটি শব্দ বলব: টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)।”

ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে মামদানি আরো বলেন, “আমাদের মধ্যে কারো কাছে আপনি পৌঁছাতে চাইলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”

সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি বলেন, “যদি কেউ এই জাতিকে দেখাতে পারে কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো যায়, তবে সেটি সেই শহরই, যেখানে ট্রাম্পের উত্থান ঘটেছিল। রাজনীতির এই অন্ধকার সময়ে নিউইয়র্ক হবে আলোর প্রতীক।”

ব্রুকলিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে শ্রমজীবী মানুষকে ধনী ও ক্ষমতাবানরা বোঝাতে চেয়েছে যে ক্ষমতা তাদের হাতে নয়। কিন্তু গত এক বছরে আপনারা প্রমাণ করেছেন, আপনাদের হাতেই সেই ক্ষমতা। আজকের এই জয় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।”

মার্কিন রাজনীতিতে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত মামদানি। আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় জন্ম হলেও তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র। তার পিতা উগান্ডার বিখ্যাত লেখক মাহমুদ মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানি নিউ ইয়র্কের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাকে নানাভাবে নিশানা করে আসছিলেন ট্রাম্প। তাকে ‘১০০ শতাংশ উন্মাদ কমিউনিস্ট’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

‘কমিউনিস্ট’ প্রার্থী মামদানি ভোটে জিতলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, “যদি নিউ ইয়র্ক একটি কমিউনিস্ট মেয়র বেছে নেয়, তা হলে আমি ওই শহরের জন্য ফেডারেল অর্থবরাদ্দ বন্ধ করে দেব, যতক্ষণ না আইন আমাকে তা দিতে বাধ্য করছে।” 

তবে ট্রাম্পের এই ধারাবাহিক আক্রমণের পরেও নিউ ইয়র্কের মেয়র পদের জন্য নির্বাচিত হলেন মামদানি। প্রায় এক বছর আগে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা মামদানির জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় উত্থান। একজন তুলনামূলক অখ্যাত স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে পৌঁছে গেলেন তিনি।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ