শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তার সঙ্গে এক নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার (২০ জুন) সকালে প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জাওয়াদ নির্ঝর ফেসবুক ও টেলিগ্রাম চ্যানেলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও চারটি ছবি প্রকাশ করেন। এর পরপরই শরীয়তপুরসহ দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

বিষয়টি নিয়ে শনিবার (২১ জুন) বিকেলে রাইজিংবিডি ডটকমের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়।

মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেছেন, “সে (ভিডিও’র সেই নারী) ছিল আমার আত্মীয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই আমাকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। ব্ল্যাকমেইলের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। আমি সেই দাবি পূরণ করতে না পারায় এবং আগ্রহ না দেখানোয় সে আমার ব্যক্তিগত আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করে, যাতে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায়।”

“যেসব ছবি ছড়িয়েছে, সেগুলো আমার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগের, প্রায় ১১ মাস আগের। ডিসি হওয়ার পর থেকেই সে চাপ বাড়াতে থাকে। তার চাহিদা অনুযায়ী আমি সময়-সুযোগমতো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা পাঠাই। সে আমাকে বাধ্য করেছে। পরে জানতে পেরেছি, এ ধরনের কাজ সে আরো অনেকের সঙ্গে করেছে। আমি এখন আমার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

এ বিষয়ে মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আমি জেলা প্রশাসকের সহায়তাকারী আইনজীবী হিসেবে জানাতে চাই, যখন তিনি (ডিসি) ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছিলেন, তখন ওই নারী আমার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, জেলা প্রশাসক তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে আর বিয়ে করেননি। এ বিষয়ে তিনি আমার সহযোগিতা চান। এর পর আমি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলি এবং দুজনেই আমাকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেন।”

“আমি তাদের পরামর্শ দিই বিষয়টি সমাধানের জন্য বিয়ে করতে। জেলা প্রশাসক রাজি হলেও ওই নারী সম্মতি দেননি। তিনি তখন অভিযোগ তোলেন, বিয়ে করলে জেলা প্রশাসক তাকে মারধর করবেন, তাই তিনি বিয়ে করবেন না। এর পরেই তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। প্রথমে দাবি করেন ৫ কোটি টাকা, নইলে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে দিতে হবে। তা না করলে তাদের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।”

ওই আইনজীবী বলেন, “চাপের মুখে জেলা প্রশাসক ধার-দেনা করে মাসে ১ লাখ টাকা করে ব্যাংকের মাধ্যমে দিতেন ওই নারীকে। কিন্তু, যখন দেখেন, ওই নারী ৫ কোটি টাকার দাবি করছেন, তখন আর অর্থ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেলা প্রশাসক। এর পরেই ওই নারী ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।”

তিনি আরো বলেন, “আইনজীবী হিসেবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কারো ব্যক্তিগত বা গোপন ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, যা পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় পড়ে। এ বিষয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওতে থাকা ওই নারী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসিন্দা। এখন তিনি ঢাকার মিরপুরে বাস করেন। পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়েছিল। তার দুই সন্তান আছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর স্বামীর ভগ্নিপতি। আত্মীয়তার সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে ওই নারীর মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাত ৯টার দিকে একটি ভাড়া করা গাড়িতে করে শরীয়তপুর ছেড়ে চলে গেছেন। 

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.

আসলাম হোসাইন বলেছেন, “জেলা প্রশাসক কর্মস্থলে নেই। তিনি বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে ছুটির আবেদন করেছেন বলে জেনেছি। তার অবর্তমানে জেলা প্রশাসক হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা লিখিতভাবে কাউকে বলে যাননি। তিনি কবে ফিরবেন, তা আমরা বলতে পারছি না।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। ২৭তম বিসিএস ক্যাডারে এই কর্মকর্তা আগে প্রতিবন্ধী ট্রাস্টের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ঢাকা/আকাশ/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য গ য গ কর আইনজ ব ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের কর্মী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খলিল

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক মাহমুদ খলিল গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেয়েছেন। লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে তাঁকে রাখা হয়েছিল। শুক্রবারই কয়েক ঘণ্টা আগে একজন বিচারক তাঁকে মুক্তির আদেশ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এই রায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এক বড় বিজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনপন্থী এক আন্দোলনকারীকে নিশানা করেছে, যা অবৈধ।

লুইজিয়ানার জেনা শহরের আটক কেন্দ্র থেকে মুক্তির সময় খলিল বলেন, ‘ন্যায়বিচার জয়ী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেক দেরিতে। এটা ঘটতে তিন মাস লাগা উচিত ছিল না।’

ইসরায়েলের গাজায় হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে সক্রিয় থাকায় গত ৮ মার্চ খলিলকে নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটানে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের লবি থেকে আটক করেন অভিবাসন কর্মকর্তারা।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, যেসব বিদেশি ছাত্র এসব বিক্ষোভে অংশ নেন, তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেবেন। খলিল হন তাঁর এই নীতির প্রথম শিকার।

নিউ জার্সির বিচারক মাইকেল ফারবিয়ার্জ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণই দেওয়া হয়নি যে খলিল পালিয়ে যাবেন বা জনসাধারণের জন্য তিনি হুমকি।

বিচারক বলেন, এ মামলায় ‘আসামিকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইন ব্যবহার করা হয়েছে—এমনটা বলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ আছে’। এটি সংবিধানবিরোধী।

খলিল হলেন সেই বিদেশি ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের একজন, যাঁদের গত মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে আদালতের নির্দেশে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন মোহসেন মাহদাভি ও রুমাইসা ওজতুর্ক।

মাহমুদ খলিল বলেন, তাঁর রাজনৈতিক মতপ্রকাশের জন্য তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ‘আমি ইহুদিবিদ্বেষ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আছি, সেটা আগেও বলেছি।’

সিরিয়া থেকে আসা এই অভিবাসী শিক্ষার্থী এখন নিউইয়র্কে স্ত্রী ডা. নূর আবদাল্লাহ ও সদ্যোজাত সন্তানের কাছে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। খালিলের ১০৪ দিনের বন্দিজীবনের মধ্যেই জন্ম নেয় শিশুটি।

খলিলের স্ত্রী বলেন, ‘আজকের রায় আমাদের পরিবারের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায়ের মাত্র সামান্য প্রতিফলন। আজ আমরা খলিলের মুক্তি উদ্‌যাপন করছি, যিনি আবার আমাদের ছোট পরিবার ও সেসব মানুষের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন—যাঁরা শুরু থেকেই আমাদের পাশে ছিলেন।’

হোয়াইট হাউস আদালতের এই রায়ের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, খলিলের মুক্তি অবৈধ। তাঁকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী কর্মকাণ্ড ও ভিসা জালিয়াতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা উচিত।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আবিগেইল জ্যাকসন বলেন, ‘নিউ জার্সির একজন স্থানীয় বিচারকের এখতিয়ার নেই লুইজিয়ানার আটক কেন্দ্র থেকে কাউকে মুক্তির আদেশ দেওয়ার। আপিলে আমরা সঠিক বিচার পাব বলে বিশ্বাস করি।’

তবে খলিলের অভিবাসন মামলা চলছে। বিচারক ফারবিয়ার্জ তাঁকে আপাতত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের আদেশ স্থগিত রেখেছেন। কারণ, খলিল এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।

আটক কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সামনে খলিল তাঁর হাতে কেফিয়েহ পরে এবং মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসননীতির নামে বর্ণবাদের চর্চা করছে।

খলিল বলেন, এই কেন্দ্রে আরও শত শত মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এখানে থাকার কথা নয়। কেউ অবৈধ নন, কোনো মানুষ অবৈধ নন।

খলিল বলেন, আটক কেন্দ্রে কাটানো সময় তাঁর চোখ খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেখানে গিয়ে আপনি একেবারে আলাদা বাস্তবতা দেখবেন। যে দেশ নিজেদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষের বলে দাবি করে—সে দেশের আটক কেন্দ্র চিত্রটা পুরো ভিন্ন।’

লুইজিয়ানার এক অভিবাসন বিচারক শুক্রবার খলিলের আশ্রয় আবেদন নাকচ করে বলেন, তাঁকে অভিবাসন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে বহিষ্কার করা যেতে পারে।

বিচারক ফারবিয়ার্জের মুক্তির আদেশের ফলে জামিন শুনানির প্রয়োজন আর থাকেনি।

খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, অভিবাসন ফর্মে তথ্য গোপনের অভিযোগে সাধারণত কাউকে আটক করা হয় না। ১৬ জুন খলিলের পক্ষ থেকে তাঁরা আবার আবেদন করেছিলেন, যেন তাঁকে জামিনে মুক্তি বা নিউ জার্সির আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়, যাতে তিনি পরিবারের কাছে থাকতে পারেন।

ফারবিয়ার্জ বলেন, একজন অভিবাসীকে শুধু আবেদনপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে কারাগারে রাখা ‘অস্বাভাবিক’ ঘটনা।

খালিল (৩০) গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে মার্কিন নাগরিক।

ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা বলেন, খলিলের মুক্তির আবেদনের বিষয়টি অভিবাসন মামলার বিচারকের কাছে জানানো উচিত ছিল। কারণ, তিনি মূল মামলার বিচার করছেন। খলিলকে যুক্তরাষ্ট্রে রাখা যাবে কি না, সেই রায় ওই বিচারক দেবেন।

তবে বিচারক ফারবিয়ার্জ খলিলের ৮ মার্চের গ্রেপ্তার এবং আটক থাকা সংবিধানসম্মত কি না—সেটি বিবেচনা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচারিক স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ নিয়ে সেমিনার রোববার, থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • রোববার থেকে হাইকোর্টের ৪৯ বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ
  • মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের কর্মী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খলিল
  • শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা
  • গাজীপুরে ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় যুবলীগ নেতা
  • শ্রীপুরে প্যারোলে মায়ের জানাজায় অংশ নিয়ে আবার কারাগারে যুবলীগ নেতা
  • আদালতের আদেশ না মানার অভিযোগ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান–সদস্যসহ ১৮ জনকে নোটিশ
  • শেখ হাসিনার পক্ষে বক্তব্য শুনতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ 
  • আবার ৪ দিন রিমান্ডে সালমান এফ রহমান