মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের আবু তাহেরের দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে সাজানো সংসার। ছোট ছেলে মো. আনিস স্থানীয় বিএসআরএম কারখানায় ট্রাক চালাতেন। গত ৩ জুন মারুফা খাতুন নামে একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। মোবাইল ফোনে পরিচয় টাইঙ্গালেট গোপালপুর এলাকার মেয়ে মারুফা খাতুনের সঙ্গে। পরিবারের অমতে বিয়ে করলেও ১২ দিন পর গত ১৫ জুন ধুমধাম অনুষ্ঠান করে নতুন বধূ বরণ করেন। কিন্তু এর চার দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান মো.
জানা গেছে. উপজেলার মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের তিন বন্ধু মো. আনিস, রিয়াজ ও আরাফাত স্থানীয় ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ১৮ বছর বয়সী ওই তিন বন্ধু চট্টগ্রামমুখী রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে কারখানায় কাজে যাচ্ছিলনে। এ সময় উল্টো পথে আসা ঢাকামুখী একটি ট্রেন পেছন দিক থেকে তাদের ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিন জনের মৃত্যু হয়।
গত শুক্রবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রিয়াজ উদ্দিনের চাচা রায়হান উদ্দিন জানান, ঢাকামুখী ট্রেনগুলো আপ লাইন (ঢাকামুখী লেইন) দিয়ে চলাচল করে। রিয়াজ, আরাফাত ও আনিস চট্টগ্রামমুখী লেন দিয়ে উত্তর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাদের থেকে ১০-১৫ হাত পেছনে ছিলেন তিনি। কিন্তু আপ লাইনের ট্রেনটি ডাউন লাইন (চট্টগ্রামমুখী লাইন) দিয়ে আসছে দেখতে পেয়ে তিনি দ্রুত লাফ দিয়ে লাইনের বাইয়ে চলে যান। সামনে থাকা রিয়াজসহ অন্যদের বিষয়টি জানাতে চাইলেও তারা শুনতে পাননি। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। নিহত মো. আনিসের বোন আইরিন সুলতানা পপি বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো কোনো
সংবাদমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তার ভাই ও ভাইয়ের বন্ধুরা কেউই রেল লাইনের উপর বসে আড্ডা দেয়নি। তারা লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে বিএসআরএম কারখানায় বকেয়া বেতন আনতে যাচ্ছিল। কিন্তু বেতনও নেয়া হলো না, তাদের ঘরেও ফেরা হলো না।’
মাত্র ১৭ দিন আগে বিয়ে করা স্বামীর অকাল মৃত্যুতে বিষাদের অন্ধকারে ডুবে গেছেন নববধু মারুফা খাতুন। কী করবেন এখন বুঝতে পারছেন না। আনিসের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘ছেলেটি ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার আয়ে চলত আমাদের সংসার। মাত্র ১৭ দিন আগে বিয়ে করেছে সে। আমার ঘরের আনন্দ হারিয়ে গেল।’
নিহত রিয়াদ উদ্দিনের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে একমাত্র ছেলেকে গাড়ি চালানোর পেশা থেকে সরিয়ে এনে বিএসআরএম কারখানায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিরাপত্তাকর্মীর কাজে দিয়েছিলাম। কিন্তু এমন দুর্ঘটনায় ছেলে হারাব তা ভাবতেও পারছি না। এক ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে রিয়াজ সবার বড় ছিল।’ রিয়াজের খালাত ভাই মো. রিয়াত জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বকেয়া বেতন তোলার জন্য তিন বন্ধু মিলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ট্রেনের ধাক্কায় তারা মারা যায়। কারখানায় যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ঘরে রেখে গেছেন। রেল লাইনের উপর বসে আড্ডা দেয়া, মোবাইলে গেইম খেলার মত তথ্যগুলো সত্য নয়।
১৬ বছরে আগে দুই বছরের আরাফাতকে রেখে মারা যান তার মা মোছম্মৎ রোকসানা আক্তার। এরপর আরাফাতকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মামা জামাল উদ্দিন। মামার বাড়ির সকলের আদরে বড় হয় আরাফাত। কিন্তু লেখাপড়া বেশিদূর না করায় গাড়ির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় নিহত আনিসের গাড়ির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন আরাফাত। ভাগ্নে আরাফাতের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন মামা জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বোনের রেখে যাওয়া সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না। আরাফাতের মৃত্যু যেন একটি বংশের পরিসমাপ্তি। ট্রেনটি উল্টো পথে আসার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ তারা যে লাইন হাঁটছিল সে লাইনে তখন চট্টগ্রামের দিক থেকে ট্রেন আসার কথা না।’
সীতাকুণ্ড রেলওয়ে থানার উপপরির্দশক আশরাফ সিদ্দিকী জানান, রেল লাইনের বড়তাকিয়া অংশে একটি কালভার্ট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই মিরসরাইয়ের কিছু অংশে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন আপ লাইনের পরিবর্তে ডাউন লাইনে চলছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনের ধাক্কায় মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এবিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ১৭ দ ন র ঘটন র দ র ঘটন ল ইন র আর ফ ত
এছাড়াও পড়ুন:
মাত্র ১৭ দিনের সংসার মারুফার
মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের আবু তাহেরের দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে সাজানো সংসার। ছোট ছেলে মো. আনিস স্থানীয় বিএসআরএম কারখানায় ট্রাক চালাতেন। গত ৩ জুন মারুফা খাতুন নামে একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। মোবাইল ফোনে পরিচয় টাইঙ্গালেট গোপালপুর এলাকার মেয়ে মারুফা খাতুনের সঙ্গে। পরিবারের অমতে বিয়ে করলেও ১২ দিন পর গত ১৫ জুন ধুমধাম অনুষ্ঠান করে নতুন বধূ বরণ করেন। কিন্তু এর চার দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান মো. আনিস। বিয়ের ১৭ দিনের মাথায় স্বামীহারা হলেন নববধূ মারুফা।
জানা গেছে. উপজেলার মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের তিন বন্ধু মো. আনিস, রিয়াজ ও আরাফাত স্থানীয় ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ১৮ বছর বয়সী ওই তিন বন্ধু চট্টগ্রামমুখী রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে কারখানায় কাজে যাচ্ছিলনে। এ সময় উল্টো পথে আসা ঢাকামুখী একটি ট্রেন পেছন দিক থেকে তাদের ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিন জনের মৃত্যু হয়।
গত শুক্রবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রিয়াজ উদ্দিনের চাচা রায়হান উদ্দিন জানান, ঢাকামুখী ট্রেনগুলো আপ লাইন (ঢাকামুখী লেইন) দিয়ে চলাচল করে। রিয়াজ, আরাফাত ও আনিস চট্টগ্রামমুখী লেন দিয়ে উত্তর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাদের থেকে ১০-১৫ হাত পেছনে ছিলেন তিনি। কিন্তু আপ লাইনের ট্রেনটি ডাউন লাইন (চট্টগ্রামমুখী লাইন) দিয়ে আসছে দেখতে পেয়ে তিনি দ্রুত লাফ দিয়ে লাইনের বাইয়ে চলে যান। সামনে থাকা রিয়াজসহ অন্যদের বিষয়টি জানাতে চাইলেও তারা শুনতে পাননি। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। নিহত মো. আনিসের বোন আইরিন সুলতানা পপি বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো কোনো
সংবাদমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তার ভাই ও ভাইয়ের বন্ধুরা কেউই রেল লাইনের উপর বসে আড্ডা দেয়নি। তারা লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে বিএসআরএম কারখানায় বকেয়া বেতন আনতে যাচ্ছিল। কিন্তু বেতনও নেয়া হলো না, তাদের ঘরেও ফেরা হলো না।’
মাত্র ১৭ দিন আগে বিয়ে করা স্বামীর অকাল মৃত্যুতে বিষাদের অন্ধকারে ডুবে গেছেন নববধু মারুফা খাতুন। কী করবেন এখন বুঝতে পারছেন না। আনিসের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘ছেলেটি ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার আয়ে চলত আমাদের সংসার। মাত্র ১৭ দিন আগে বিয়ে করেছে সে। আমার ঘরের আনন্দ হারিয়ে গেল।’
নিহত রিয়াদ উদ্দিনের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে একমাত্র ছেলেকে গাড়ি চালানোর পেশা থেকে সরিয়ে এনে বিএসআরএম কারখানায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিরাপত্তাকর্মীর কাজে দিয়েছিলাম। কিন্তু এমন দুর্ঘটনায় ছেলে হারাব তা ভাবতেও পারছি না। এক ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে রিয়াজ সবার বড় ছিল।’ রিয়াজের খালাত ভাই মো. রিয়াত জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বকেয়া বেতন তোলার জন্য তিন বন্ধু মিলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ট্রেনের ধাক্কায় তারা মারা যায়। কারখানায় যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ঘরে রেখে গেছেন। রেল লাইনের উপর বসে আড্ডা দেয়া, মোবাইলে গেইম খেলার মত তথ্যগুলো সত্য নয়।
১৬ বছরে আগে দুই বছরের আরাফাতকে রেখে মারা যান তার মা মোছম্মৎ রোকসানা আক্তার। এরপর আরাফাতকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মামা জামাল উদ্দিন। মামার বাড়ির সকলের আদরে বড় হয় আরাফাত। কিন্তু লেখাপড়া বেশিদূর না করায় গাড়ির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় নিহত আনিসের গাড়ির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন আরাফাত। ভাগ্নে আরাফাতের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন মামা জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বোনের রেখে যাওয়া সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না। আরাফাতের মৃত্যু যেন একটি বংশের পরিসমাপ্তি। ট্রেনটি উল্টো পথে আসার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ তারা যে লাইন হাঁটছিল সে লাইনে তখন চট্টগ্রামের দিক থেকে ট্রেন আসার কথা না।’
সীতাকুণ্ড রেলওয়ে থানার উপপরির্দশক আশরাফ সিদ্দিকী জানান, রেল লাইনের বড়তাকিয়া অংশে একটি কালভার্ট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই মিরসরাইয়ের কিছু অংশে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন আপ লাইনের পরিবর্তে ডাউন লাইনে চলছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনের ধাক্কায় মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এবিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।